
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে এখন পর্যন্ত কত রোগী কর্তৃপক্ষের অবহেলাজনিত কারণে বা দুর্ঘটনায় মারা গেছেন তার তথ্য চেয়েছেন হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে (ডিজি) এ নির্দেশনা প্রতিপালন করতে বলা হয়েছে। সারাদেশে বেসরকারি হাসপাতাল লাইসেন্সপ্রাপ্ত আর লাইসেন্সবিহীন কতগুলো তার তালিকাও তলব করেছেন আদালত। আগামী তিন মাসের মধ্যে এর তালিকা প্রস্তুত করে জমা দিতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে, রাজধানীর বাড্ডার সাতারকুলের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নতে খতনার জন্য অজ্ঞান করা শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ-সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায় ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
এর আগে রবিবার (১৪ জানুয়ারি) শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আদেশের জন্য সোমবার দিন ঠিক করেন হাইকোর্ট। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এই আদেশ দেন আদালত।
গত ৩১ ডিসেম্বর আনন্দ নিয়েই রাজধানীর সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। অনুমতি ছাড়াই ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে সুন্নতে খতনা করান চিকিৎসক। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার।
স্বজনরা জানান, আয়ানের সুন্নতে খতনার দিন অপারেশন থিয়েটারে মূলত ওই মেডিকেল কলেজের ৪০ থেকে ৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ভেতরে ছিলেন।
আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক আমাদের ডেকে বলেন যে দুনিয়াতে আয়ান আর নেই। তারা খুব তড়িঘড়ি করে আমাদের বের করে দেন।’
আয়ানের পরিবারের অভিযোগ, অস্ত্রোপচারের সময় এমন ঘটনার পর অবস্থা বেগতিক দেখে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে। এমনকি প্রথমে ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে অপারেশনের কথা থাকলেও বিল ধরানো হয় প্রায় ছয় লাখ টাকা।
আয়ানের চাচা জামিল খান বলেন, আয়ান যদি দুনিয়াতে থাকতো, তবে পুরো প্রায় ৬ লাখ টাকাই নিতো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এখনো তারা আমাদের কাছে এই বিলটাই চাচ্ছে। তারা বলছেন, এখন আপনারা চলে যান, বিলটা পরিশোধের জন্য পরে এসে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
আয়ানের দাদা আব্দুস সালাম কবির বলেন, ‘খতনার কাজ করেছেন ডাক্তার মেহেরজেবিন। অ্যানেস্থেসিয়া বেশি দেওয়া হয়েছে বলে তিনি ভুল স্বীকার করেছেন। অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে এক ঘণ্টা ক্লাস নেওয়াতে আমার নাতি এভাবে মারা গেলো।’
আয়ানের মামা রাসেল বলেন, ‘ডাক্তার কী ওষুধ ব্যবহার করেছেন, সেসব কিছু লিখা আছে। ফাইলটা এখানে নিয়ে এসেছি। কিন্তু আজকে যখন ওই ফাইলটা চাইলাম, তখন সেটা দেখছি গায়েব করে ফেলেছে’।
অভিযোগ এড়িয়ে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় চাপাচ্ছে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজের ওপর। গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালের নন-মেডিকেল ডিউটি ম্যানেজার সানাউল্লাহ কবির বলেন, প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যবস্থপানাসহ পুরো প্রক্রিয়াতেই দুই প্রতিষ্ঠান আলাদা।
এ ঘটনা তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।
এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিবন্ধন বা লাইসেন্স ছাড়া কার্যক্রম পরিচালনা করায় ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সব কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধের আদেশ দেওয়া হয়েছে। রোববার (১৪ জানুয়ারি) অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. আবু হোসেন মোহাম্মদ মইনুল আহসানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এ নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]