
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মাথাপিছু খাদ্য সহায়তাবাবদ অর্থের পরিমাণ বাড়িয়েছে জাতিসংঘ। আগে যেখানে প্রত্যেক রোহিঙ্গাকে খাদ্য সহায়তা বাবদ প্রতি মাসে ৮ ডলার করে প্রদান করা হতো, এখন থেকে সেখানে দেয়া হবে ১০ ডলার করে। অর্থাৎ মাথাপিছু খাদ্য সহায়তা বাড়ছে ২ ডলার। ইমার্জেন্সী মাল্টি-সেক্টর রোহিঙ্গা ক্রাইসিস রেসপন্স প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় বিশ্ব খাদ্য কর্তৃক বাস্তবায়িত কার্যক্রমের উপর ভিত্তি করে আয়োজিত কর্মশালায় এ তথ্য উঠে আসে।
৩ জানুয়ারি, বুধবার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা শিখন কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা জানান, দুযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এর সচিব জনাব মো.কামরুল হাসান, এনডিসি। বিশেষ অতিথি হিসেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মো. মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
কামরুল হাসান বলেন, ২০২৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এই সহায়তা কার্যকর করা হয়েছে। তহবিল সংকটের কারণে গত বছর বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা বাজেট কাটছাঁট করে ৮ ডলারে নামিয়ে এনেছিল জাতিসংঘ। কিন্তু এর ফলে রোহিঙ্গাদের পুষ্টি সংকট বাড়তে থাকায় সহায়তার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও সিঙ্গেল মায়েদের জন্য দেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ৩ ডলার করে মোট ১৩ ডলার। বাংলাদেশের মত অধিক জনঘনত্বের দেশে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দান এবং রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম সম্বন্ধে বর্ণনা করেন। এ প্রকল্পটি রোহিঙ্গাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেনিটেশন, কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করছে এবং তাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে বর্তমান সরকার জোড়ালোভাবে কাজ করছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং স্বাগত বক্তব্য দেন (EMRCP) প্রকল্প পরিচালক (যুগ্ন সচিব) ড. এ.টি.এম. মাহবুব-উল করিম। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, এ প্রকল্পটিতে কক্সবাজারের উখিয়া এবং অন্যান্য রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পটি ২০১৮ সালে শুরু হয় এবং জুন, ২০২৪ পর্যন্ত চলবে। এ প্রকল্পটি বর্তমান সরকারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি মানবিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় উখিয়া এবং টেকনাফ উপজেলার ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে তাদের জীবনমান ও দক্ষতা উন্নয়নে কাজ করা হচ্ছে এবং বিধবা মহিলা ও প্রতিবন্ধী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে প্রতি মাসে জনপ্রতি ১০ ডলার করে নগদ আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির বাংলাদেশ প্রধান মিজ নামিকো মোতোকাওয়া রোহিঙ্গা প্রকল্পে তাদের মূল কার্যক্রম সম্বন্ধে বিস্তারিত ধারণা দেন। তিনি তার বক্তৃতায় বলেন, তাদের মূল উদ্দেশ্যই হলো বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বিশেষ আর্থিক সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের কর্মক্ষম করে তোলা।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জনাব মো. মিজানুর রহমান তার বক্তৃতায় বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে রোহিঙ্গা মহিলাদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা তৈরি, তাদের বসবাসরত ক্যাম্পে সবুজ বনায়ন এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে।
কর্মশালায় ইএমআরসিআর প্রকল্প, বিভ্ন্নি সহকারি দপ্তর, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ও এনজিও প্রতিনিধি এবং গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ট গণ্যমান্য মোট ৫০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে এই সহায়তা কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক বৈশ্বিক প্রকল্প ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)।
ডব্লিউএফপির বাংলাদেশ শাখার পরিচালক ডোম স্ক্যালপেলি মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের অর্থ সহায়তা প্রদানকারী দেশ ও সংস্থাগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, শিবিরগুলোতে অপুষ্টি পরিস্থিতি দিন দিন যে হারে বাড়ছিল, তা সত্যিই উদ্বেগজনক ছিল। দাতাগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর কারণেই আমরা তাদের খাদ্য সহায়তা বাড়াতে পেরেছি। এজন্য তাদের ধন্যবাদ।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]