পর্ব-২
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সহযাত্রী হতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০১
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার সহযাত্রী হতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন। এরপরই শুরু হবে ভোটের ডামাডোল। ইতোমধ্যে প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে। দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।



মনোনয়নের জন্য এরই মধ্যে প্রার্থীদের আমলনামা তৈরি করছে আওয়ামী লীগ। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। বরাবরের মতো এবারও মাঠে সক্রিয় তারা। মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা সাবেক ছাত্রনেতাদের সাথে কথা বলেছে বিবার্তা। অন্যান্য বারের চেয়ে এবার তাদের প্রত্যাশা বেশি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট ও তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন। বিষয়টি বিবেচনা করবে দল, এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।



চাঁদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী। কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এলাকায় নিয়মিত জনসংযোগও চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এই সহ-সভাপতি। তিনি বিবার্তাকে বলেন, মনোনয়ন দেয়ার বিষয়ে সুপ্রিম অথরিটি আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা। দলের স্বার্থে উনি যাকে ভালো মনে করবেন- সেটাই হবে বিবেচ্য বিষয়। তিনশ আসনই ওনার নখদর্পণে আছে। এখানে ব্যক্তি কোন বিষয় না। বিবেচ্য বিষয় হলো নৌকা প্রতীক ও আমাদের দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।


তিনি বলেন, দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে জনগণের সাথে আছি। ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি যে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল সেই নির্বাচনে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এরপর থেকে মনোনয়ন না পেলেও জনগণের সাথে ছিলাম, আছি এবং থাকব। জননেত্রী শেখ হাসিনা যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেই সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে চাই। আমরা কে কি পেলাম সেটা বিবেচ্য নয়; প্রধান বিবেচ্য বিষয় আগামী নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী করতে হবে, এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।


কুমিল্লা-১ আসনে (দাউদকান্দি-তিতাস) দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ, মতবিনময় সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর। বুয়েটের সাবেক জিএস আবদুস সবুর বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল। তিনি দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন- ফলে দেশের জনগণ সুফল পেতে শুরু করেছে। সারাদেশের মানুষ আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।


তিনি বলেন, বিএনপির জ্বালাও-পোড়াওয়ে বিপক্ষে জনগণের অবস্থান। তারা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ী করার জন্য অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষা করছেন। তিনি যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকেই মনোনয়ন দিবেন। তবে দাউদকান্দি-তিতাসে আমি শতভাগ আশাবাদী। মনোনয়ন দিলে নৌকার বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরব ইনশাআল্লাহ।


'স্মার্ট বাংলাদেশ' গড়ার সহযাত্রী হতে চান সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা (পর্ব-১)


ময়মনসিংহ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। তিনি স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগে প্রচার সম্পাদক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের পর সহ-সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, মনোনয়নের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নিবেন। আমি আমার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছি। বিপদে-আপদে মানুষের পাশে থাকা, এলাকার সমস্যাগুলো সমাধান করা- এসব কাজ করছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা যে সিদ্ধান্ত দিবেন, সেটার সাথেই আমি একমত। তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের দায়িত্ব দিয়েছেন, সেটি সুন্দরভাবে পালনের চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতেও তিনি যে দায়িত্ব দিবেন সেটি সুন্দরভাবে পালন করাটাই আমার কাছে মুখ্য।


নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আমির। ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হলেও দলীয় সিদ্ধান্তে সরে যান তিনি। তবে হাল ছাড়েননি আমির। দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জানতে চাইলে আমির বিবার্তাকে বলেন, আমি শতভাগ আশাবাদী। দলের নির্দেশে ২০১৪ সালে হাতিয়া থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। ১১টা পর্যন্ত ভোটে ছিলাম, পরে আমাকে দলের নির্দেশে প্রত্যাহার করতে হয়েছে। ওই সময়েই ৪০ হাজার ভোট পেয়েছিলাম। চারটা পর্যন্ত থাকলে আরো ৫০ হাজার ভোট পেতাম। ২০১৮ সালেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। তখন দল থেকে বলা হয়েছে, অপেক্ষা করো। মনোনয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুকন্যা যে সিদ্ধান্ত দিবেন সেটাই চূড়ান্ত।


পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনের নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন প্রত্যাশী আশরাফুর রহমান। মঠবাড়িয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুর রহমান ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, মনোনয়ন দেয়ার মূল নিয়ামক হচ্ছে সংসদীয় এলাকার মধ্যে প্রার্থীর গ্রহণযোগ্যতা, পাবলিক সেন্টিমেন্ট। নির্বাচনী এলাকায় যদি আমার পাবলিক সেন্টিমেন্ট পক্ষে থাকে, আমার ফেভারে থাকে- তাহলে দল অবশ্যই আমাকে মনোনয়ন দিবেন আর না থাকলে দিবেন না। আমি মনে করি জনগণের কাছে গ্রহণযোহ্য, জনপ্রিয় প্রার্থীকে মঠবাড়িয়ায় মনোনয়ন দেয়া উচিৎ। সেই বিবেচনায় যদি আমি প্রথমে থাকি তাহলে অবশ্যই মনোনয়নের দাবিদার।


পিরোজপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ সাকিব বাদশা। জানতে চাইলে তিনি বিবার্তাকে বলেন, ২০০৭ সালে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। সে সময় সারাদেশে নেত্রীর মুক্তির জন্য তরুণদের মাঝে জোয়ার সৃষ্টি করেছি এবং গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে মুক্ত করেই আমরা ঘরে ফিরেছি। ছাত্ররাজনীতি থেকে বিদায় নেয়ার পর থেকে আমি এলাকায় সময় দিচ্ছি। এলাকার জনসাধারণের সাথে, এলাকার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সাংগঠনিক কাজেও সাহায্য করছি। সাধ্য মতো সবার পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি। সংসদ সদস্য হতে পারলে এলাকার উন্নয়নে সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারব। সুযোগ পেলে উন্নত, সমৃদ্ধ স্মার্ট পিরোজপুর গড়াই আমরা লক্ষ্য।


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঝিনাইদহ-৪ আসনে নিয়মিত গণসংযোগ করছেন ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কাজী নাসিম আল মোমিন রূপক। ২০০৬-২০১১ সালে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ এর দফতর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। জানতে চাইলে রূপক বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। স্মার্ট বাংলাদেশের পথে দেশ এগুচ্ছে। সেহেতু তরুণ প্রজন্মের প্রাধান্যই বেশি হওয়া উচিত। কারণ তরুণ প্রজন্ম আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। বর্তমান সময়ের সাথে এই জেনারেশনের প্রতিনিধিত্ব আমরা করি। সংসদে এই প্রজন্মের প্রতিনিধিত্বও থাকা উচিত। এছাড়া এলাকার সাধারণ মানুষ তরুণ প্রজন্মের কাউকে এই আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে দেখতে চায়। নমিনেশন পেলে আমার প্রথম ও প্রধানতম পরিকল্পনা হবে নিরাপদ ও স্মার্ট কালীগঞ্জ বিনির্মাণ করা।


ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী-আলফাডাঙ্গা-মধুখালী) আসনে দীর্ঘদিন ধরে জনসংযোগ করছেন ছাত্রলীগের সাবেক স্কুলছাত্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ-কমিটি সদস্য হিসেবে আছেন। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমার বাবা মরহুম আব্দুর রউফ মাস্টার ১৯৯১ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর দলের সিদ্ধান্তে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। আমার বাবার দীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। তিনি দলের জন্য একজন ত্যাগী ও নিবেদিত কর্মী ছিলেন।


তিনি বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে আমরা আন্দোলন করেছি। পরবর্তী সময় থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত আছি। ফরিদপুর-১ আসনে ২০১০ সাল থেকে আজ অবধি সামাজিক-সাংস্কৃতিক প্রতিটি অনুষ্ঠানে আমি উপস্থিত থেকেছি। কারণ আমার বাবা এই জনপদের এমপি ছিলেন। এলাকার উন্নয়ন নিয়ে বাবা যে স্বপ্ন দেখতেন, পদত্যাগ করায় তার সেসব স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। মনোনয়ন পেলে আমার বাবার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করব।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com