ডেঙ্গুতে শিশুদের প্রতি ‘বিশেষ নজর’ রাখার পরামর্শ
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২৩, ১৫:০৯
ডেঙ্গুতে শিশুদের প্রতি ‘বিশেষ নজর’ রাখার পরামর্শ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সারাদেশে ডেঙ্গু সংক্রমণ পরিস্থিতি নিম্নগামী না হওয়ার পেছনে প্রতিরোধমূলক যথাযথ পরিকল্পনা না থাকাকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা।


তারা বলছেন, ডেঙ্গুর নতুন নতুন সেরোটাইপ (ধরন) আসছে। তাই এখন শুধু ডেঙ্গু রোধে সংক্রমণকালীন সময় নয়, জানুয়ারি মাস থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে। একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গুকালীন সময়ে শিশুদের প্রতি ‘বিশেষ নজর’ রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন।


১৪ অক্টোবর, শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে শিশুদের ডেঙ্গু বিষয়ক একটি গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে তারা এসব কথা বলেন।


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন। এসময় তিনি বলেন, প্রথমবার যারা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়, তাদের খুব বেশি ডেঙ্গুর উপসর্গ থাকে না। প্রথমবার সাধারণত ডেন-১ সেরোটাইপে আক্রান্ত হয়। তবে সেকেন্ড টাইম যারা আক্রান্ত হয়, তারা অন্য সেরোটাইপে। এ বছর ডেন-২ এবং ডেন-৩ সংক্রমণ বেশি পাওয়া যাচ্ছে।


আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, প্রতিবছরই ডেঙ্গুর নতুন নতুন সেরোটাইপ আসছে। শিশুদের মধ্যে যাদের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, তারাও হয়তো দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে। তাই শিশুদের প্রতি আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। শুধু ডেঙ্গু আক্রান্ত নয়, ডেঙ্গু উপসর্গ থাকলেও সেটাকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ, ডেঙ্গুতে বাচ্চাদের খারাপ হয়ে যায় খুব দ্রুত। কোন বাচ্চার জ্বর আসলে অপেক্ষা না করে চিকিৎসক


সচেতনতা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, স্থানীয় প্রশাসন নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করছে, তবে পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও কিছু দায়িত্ব আছে। তা নাহয় কখনও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।


তাহমিনা শিরিন বলেন, প্রায় সময়ই শোনা যায় ডেঙ্গু পজেটিভ ব্যক্তিরও এনএস-১ পরীক্ষায় রিপোর্ট নেগেটিভ আসছে। এটা হতেই পারে, কারণ, এনএস-১ পরীক্ষাও সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে সাধারণত তিনদিনের পরে যারা পরীক্ষা করতে আসে, তাদের এনএস-১ পজেটিভ খুব বেশি পাই না। তবে আইজিএম ৫ দিন পর্যন্ত পজেটিভ পাওয়া যায়।


অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. জাহাঙ্গীর আলম। এসময় তিনি বলেন, ডেঙ্গুতে শিশুদের নিয়ে আমাদের আলাদা করে ভাবতে হবে। এবার ডেঙ্গুতে এতোগুলা রোগী মারা গেলো, এর অন্যতম কারণ হতে পারে ডেন-২। এটা একটা ডেঞ্জারাস সেরোটাইপ। এবার শিশুদের মধ্যে দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্ত পেয়েছি, এটাও মারাত্মক।


ডা. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডেঙ্গু একটা সময়ে শুধু সিটি করপোরেশনে হতো, এবার ডেঙ্গু ৬৪ জেলাতেই ছড়িয়ে গেছে। এমনকি মৃতের হারও জেলা পর্যায়ে কম নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের কার্যকরী পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিতে হবে।


তিনি বলেন, সাধারণত জুন থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু সংক্রমণ অব্যাহত থাকে। তবে বিশেষত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে বেশি থাকে। এজন্য জানুয়ারি মাস থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। ২০১৯ সালে ডেঙ্গু প্রিভেনশনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন পরিদর্শনে এসেছিলেন, তিনি ১৯টি পরামর্শ দিয়েছিলেন, সেগুলো নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে।


শিশু হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, এবছর আমরা এক বছরের নিচে প্রচুর ডেঙ্গু রোগী পেয়েছি। বাচ্চাদের মধ্যে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। এজন্য শিশুদের নিয়ে আমাদের আলাদা করে ভাবতে হবে। এবিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়সহ সরকার সচেতন আছে। ডেঙ্গু পরীক্ষার ক্ষেত্রে এনএস-১ অ্যান্টিজেন করালে সেটা জ্বরের প্রথম দিন করলেই সবচেয়ে ভালো ফলাফল আসবে। তবে কোনোভাবেই অবহেলা করা কাম্য হবে না।


দেশে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যে-সব শিশু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসছে, তাদের মধ্যে ৮৭ শতাংশ শিশুই ডেন-২ জীনগত ধরন দ্বারা আক্রান্ত। এছাড়াও বাকি ১৩ শতাংশ শিশু ডেন-৩ ধরন দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের এক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।


জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণে আক্রান্ত ১০৩৯ জন ভর্তি শিশু রোগীর মধ্য থেকে ৭২২ জন শিশু রোগীকে রোগতাত্ত্বিক গবেষণার জন্য অর্ন্তভুক্ত করা হয়। ডেঙ্গু ভাইরাসের সেরোটাইপ নির্ধারণে এবং অন্যান্য ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তকরণে উক্ত ৭২২ জন শিশু রোগী হতে ১০৪ জন রোগীর রক্ত ও ন্যাজোফ্রানজিয়াল সোয়াব সংগ্রহ করে আইসিডিডিআর,বির পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।


একইসঙ্গে ডেঙ্গু ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ ছিল কিন্তু এনএস-১ অথবা আইজিএম পরীক্ষায় ডেঙ্গু ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্তকরণ সম্ভব হয়নি এমন ৫০ জন ভর্তি রোগীর রক্ত ও ন্যাজোফ্রানজিয়াল সোয়াবও সংগ্রহ করে আইসিডিডিআর,বি'র পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয়।


গবেষণায় দেখা গেছে, এছাড়াও এনএস-১ এবং আইজিএম নেগেটিভ ৫০টি নমুনার মধ্যে আরটি পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে ১৭টি (৩৪%) ফলস নেগেটিভ পাওয়া যায় ও ডেঙ্গু নেগেটিভ রোগীর মধ্যে ১৯% রোগী এবং ডেঙ্গু পজেটিভ রোগীর মধ্যে ১২% রোগী অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমণে (ইনফ্লুয়েঞ্জা ও রেসপাইরেটরি সিনসাইটাল ভাইরাস) আক্রান্ত ছিল।


জিনোম সিকোয়েন্স পরীক্ষায় দেখা যায়, ১১৩টি ডেঙ্গু পজেটিভ নমুনায় ৮৭ শতাংশ ডেন-২ এবং ১৩ শতাংশের ডেন-৩ ধরনের উপস্থিতি পাওয়া যায়। যে শিশুদের ভিতর ৮৭ শতাংশ ডেন-২ ধরনের উপস্থিতি দেখা গেছে, তার জীনগত বৈশিষ্ট্য ২০১৮ সালের ডেন-২ এর জীনগত বৈশিষ্ট্যের কাছাকাছি। এমনকি যে ১৩ শতাংশের ডেন-৩ ধরনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে, তার জীনগত বৈশিষ্ট্য ২০১৭ সালের ডেন-৩ এর জীনগত বৈশিষ্ট্যের কাছাকাছি।


বিবার্তা/রিয়াদ/সউদ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com