সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার অগ্রদূত অধ্যাপক এমএ ফয়েজ
প্রকাশ : ২১ জুন ২০২৩, ২৩:২৯
সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসার অগ্রদূত অধ্যাপক এমএ ফয়েজ
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সাপের দংশনের শিকার মানুষের প্রাণ বাঁচানোর পথে অন্যতম অন্তরায় অপচিকিৎসা। কেননা, অধিকাংশ সময় রোগীকে হাসপাতালে না নিয়ে যাওয়া হয় ওঝা বা বৈদ্যের কাছে। এতে রোগীর মৃত্যু ও পঙ্গুঝুঁকি বাড়ছে। এ কারণে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি অপচিকিৎসা রোধে আইন প্রণয়নে জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।


বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, দেশে সাপে কামড়ানোর পর ৮৬ শতাংশ মানুষ ওঝার কাছে যায়। চিকিৎসকের কাছে যায় মাত্র ৩ শতাংশ। দেশে সাপের কামড়ের চিকিৎসায় এখন যেসব অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়, তা ভারত থেকে আসে।


মানুষের শরীরের ওপর সাপের বিষের প্রভাব নিয়ে পিএইচডি করা গবেষক স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক এম এ ফয়েজ বিবার্তাকে বলেন, সর্পদংশনে মৃত্যু কমাতে হলে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ার হার বাড়াতে হবে। মানুষকে বোঝাতে হবে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পর্যায়েই এ ধরনের রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।


তিনি আরো বলেন, সাপে কাটা ব্যক্তিকে এন্টিভেনমসহ আনুষঙ্গিক চিকিৎসা প্রদান করা হলে মৃত্যু রোধ করা সম্ভব। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজে সাপে কাটা ব্যক্তিদের জন্য একটি ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়া হয়। তারপরেও অনেকের মৃত্যু হচ্ছে। সম্প্রতি, অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ (এনসিডিসি) এর তত্ত্বাবধানে একটি গবেষণা পরিচালিত হচ্ছে। তবে সাপের বিষে কত প্রকার সমস্যা হয় সে বিষয়ে সঠিক কোনো ধারণা নেই। আক্রান্ত হওয়ার অনেক পরে অনেকে হাসপাতালে আসেন।


প্রখ্যাত এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বলেন, ভারতে এক প্রজাতির গোখরা (যেগুলো ফণা তুললে পেছনে দুটো বলয় দেখা যায়, এগুলোকে স্পেকটেকলড কোবরা বা চশমা গোখরাও বলা হয়) সাপ পাওয়া যায়। বাংলাদেশে আরেক ধরনের গোখরা সাপও রয়েছে। এই ধরনের গোখরো সাপগুলো ফণা তুললে পেছনে একটি বলয় দেখা যায়। ভারতে এক ধরনের কেউটে সাপ রয়েছে। আর বাংলাদেশে কেউটে সাপ রয়েছে চার ধরনের। চন্দ্রবোড়া সাপ ভারতে বেশি হলেও বাংলাদেশে কম। আর স স্কেলড সাপ বাংলাদেশে একেবারেই নেই।


তথ্যমতে, সর্পদংশন জরিপ তথ্য ১৫ বছরের পুরানো, নতুন জরিপ চলছে; সাপের তথ্য অপর্যাপ্ত। বাংলাদেশে সর্পদংশন প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে পৃথক কোন কর্মসূচি নেই। বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ কার্যত অস্তিত্বহীন। অন্যান্য জনস্বাস্থ্য কর্মসূচির মতো সুশীল সমাজের সম্পৃক্ততা দৃশ্যমান নয়।


দেশে সর্পদংশনের কার্যকরী চিকিৎসা পাওয়ার চ্যালেঞ্জ ও বাধার মধ্যে রয়েছে উপজেলা হাসপাতালে এন্টিভেনম ও লজিষ্টিকের অপ্রতিহত প্রাপ্যতা, নিকটস্থ হাসপাতালে দ্রুত রোগী পরিবহন ও দক্ষ স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারীদের উপস্থিতি। কিন্তু মনে হয় প্রথাগত নিরাময়কারীদের (ওঝা) কার্যহীন-ক্ষতিকর চিকিৎসার উপর জনগোষ্ঠীর বড় ধরণের আস্থার মনোভাব আছে যা পরিবর্তন করা সব চেয়ে বড় বাঁধা।


দেশে বছরে প্রায় ৯ লাখ মানুষ বিষধর সাপের দংশনের শিকার হন। এর মধ্যে প্রায় ৬ হাজার মতো মানুষ মারা যান। ২০২৩ সালে এ পর্যন্ত দেশে ৩ হাজার ৪৮৫ জন সাপে কাটা মানুষ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এমন তথ্য ছিল নন কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের।


প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ একজন স্বনামধন্য মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এবং গবেষক। সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস পাস করেন, এরপর এফসিপিএস (ADIN) এবং যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ক্যাসল থেকে পিএইচডি করেন।


১৯৭৮ সালে তিনি ইন সার্ভিস ট্রেইনি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের চিকিৎসক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৭৮ সাল থেকে স্নেক বাইট, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, টিবি, নিপা ইত্যাদি বিষয়সমূহের গবেষণায় আত্মনিয়োগ করেন। ২০০৮-২০০৯ সালে তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডিজি হিসেবে কর্মরত ছিলেন।


তার লেখা একটি আর্টিকেল গ্লোবাল ম্যালেরিয়া রিসোর্স ‘ম্যালেরিয়া নেক্সাস’ ২০১৪ সালে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় গবেষণাপত্রগুলোতে প্রকাশিত সেরা দশটি আর্টিকেলের মধ্যে প্রথম হয়। এছাড়াও অধ্যাপক ডা. এম এ ফয়েজ এর Malaria Research Group এর একটি আর্টিকেল ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের ২০১০ সালের সেরা বৈজ্ঞানিক গবেষণামূলক আর্টিকেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল।


বিবার্তা/জাহেদ/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com