রাষ্ট্রপতির রাজকীয় বিদায়ের প্রস্তুতি
প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:০৬
রাষ্ট্রপতির রাজকীয় বিদায়ের প্রস্তুতি
সানজিদা আক্তার
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের একুশতম রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এর রাজকীয় বিদায়ের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে বঙ্গভবন। তিনিই বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রপতি, যিনি দুইমেয়াদ ১০ বছর রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন।


আগামীকাল ২৪ এপ্রিল সকাল ১১টায় নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণের পরেই বেলা ১২.৩০ মিনিটে বিদায় অনুষ্ঠান শুরু হবে বলে বিবার্তাতে জানান রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন।


তিনি বলেন, এবারই প্রথম কোন রাষ্ট্রপতিকে এমন রাজকীয় বিদায় দেয়া হচ্ছে।  অনুষ্ঠানটি সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করার জন্য সকল ধরনের কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। 


মো. হামিদ দ্বিতীয় মেয়াদে ২১তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে আগামী ২৪ এপ্রিল বঙ্গভবন প্রস্থান করবেন। ঐতিহাসিক এই মাহেন্দ্রক্ষণকে স্মরণীয় করে রাখতে বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।


বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল মাঠে বিদায়ী গার্ড অব অনার প্রদানের মাধ্যমে শুরু হবে অনুষ্ঠানের মূল আনুষ্ঠানিকতা। গার্ড অব অনার শেষে পুস্পসজ্জিত খোলা জিপে বঙ্গভবনের সদস্যদের উপস্থিতিতে বক ফোয়ারা থেকে প্রধান ফটক পর্যন্ত আসবেন। তারপর প্রধান ফটক হতে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) এর তত্ত্বাবধানে ভিভিআইপি গাড়িতে বঙ্গভবন হতে নিকুঞ্জে নিজ বাসভবনে গমন করবেন বঙ্গভবনের এক দশকের নিবাসী।


প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (বঙ্গভবন) কর্তৃক ক্রেডেনশিয়াল মাঠে গার্ড অব অনার এবং প্রধান ফটকে সালামি গার্ড প্রদান করা হবে বিদায়ী রাষ্ট্রপতিকে। অন্যদিকে বঙ্গভবনের কর্মকর্তাগণ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একভাগ গাড়ির সম্মুখ রশি টানবেন, আরেকভাগ পেছন থেকে গাড়িতে ধাক্কা দিবেন।


মহামান্য রাষ্ট্রপতি খোলা জিপে বঙ্গভবন প্রস্থানের সময় বঙ্গভবনের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং পিজিআর সদস্যগণ ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানাবেন।


নব-নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শপথ নেবেন আগামী ২৪ এপ্রিল। ফলে ২৩ এপ্রিল বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বঙ্গভবন সূত্র জানায়, আগামী ২৪ এপ্রিল সকাল ১১টায় নতুন রাষ্ট্রপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে।


রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. সাহাবুদ্দিন। মো. আবদুল হামিদের উত্তরসূরি হিসেবে তিনি হবেন বাংলাদেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি।


বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ মো. আবদুল হামিদ একসময় লালমাটিয়ার বাসায় থাকতেন। তবে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে রাজধানীর নিকুঞ্জের একটি বাসায় উঠবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর প্রেস সেক্রেটারি মো. জয়নাল আবেদীন।


গত ১২ মার্চ বঙ্গভবনের আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মো. হামিদ জানান, ঢাকায় থাকলেও মাসে অন্তত ১০-১২ দিনের জন্য হলেও হাওরে যাবেন তিনি।


রাজনীতিক আবদুল হামিদ ১৯৭০ সালে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।  কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকা থেকে সাতবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।


রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন শেষে অবসরে গেলেও আইন অনুযায়ী অবসর ভাতা, চিকিৎসা সুবিধাসহ সকল সুযোগ-সুবিধা পাবেন আবদুল হামিদ।


রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতা, আনুতোষিক ও অন্যান্য সুবিধা আইনের তথ্য বলছে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে কমপক্ষে ছয় মাস দায়িত্ব পালন শেষে পদত্যাগ করলে অথবা মেয়াদ শেষ হলে মৃত্যুর আগপর্যন্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে সর্বশেষ যে মাসিক বেতন পেতেন, তার ৭৫ শতাংশ হারে মাসিক অবসর ভাতা পাবেন। ‘দ্য প্রেসিডেন্টস (রেমিউনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) অ্যাক্ট অনুযায়ী বর্তমানে রাষ্ট্রপতির মাসিক বেতন ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই হিসাবে অবসরের পর আবদুল হামিদ মাসে ৯০ হাজার টাকা অবসর ভাতা পাবেন।


ওই আইন বলছে, কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হওয়ার আগে অন্য কোনো চাকরি বা পদ থেকে অবসরে গিয়ে অবসর ভাতা গ্রহণ করলে তিনি ওই অবসর ভাতা এবং রাষ্ট্রপতির অবসর ভাতার মধ্যে তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী যেকোনো একটি পাওয়ার যোগ্য হবেন। রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতা গ্রহণ করে মারা গেলে তাঁর বিধবা স্ত্রী অথবা ক্ষেত্রমতে বিপত্নীক স্বামী তাঁর প্রাপ্য অবসর ভাতার দুই-তৃতীয়াংশ হারে আমৃত্যু মাসিক ভাতা পাবেন।


অবসর ভাতা গ্রহণের প্রাধিকার অর্জন করা সাবেক কোনো রাষ্ট্রপতি অবসর ভাতার পরিবর্তে আনুতোষিকও (এককালীন অর্থ) গ্রহণ করতে পারবেন। কোনো ব্যক্তি ছয় মাসের বেশি রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত থাকা অবস্থায় আনুতোষিক পাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত না করে অথবা অবসর ভাতা গ্রহণ না করে মারা গেলে তিনি আনুতোষিক পাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন বলে গণ্য হবে। তখন আনুতোষিকের টাকা মনোনীত ব্যক্তি অথবা উত্তরাধিকারীরা পাবেন।


আইনানুযায়ী অবসরে যাওয়ার পর সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে আরো কিছু সুবিধাও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। তিনি একজন ব্যক্তিগত সহকারী ও একজন অ্যাটেনডেন্ট (সাহায্যকারী) পাবেন। দাপ্তরিক ব্যয়ও পাবেন, যার মোট বার্ষিক পরিমাণ সরকার নির্ধারণ করবে। একজন মন্ত্রীর প্রাপ্য চিকিৎসা সুবিধার সমপরিমাণ চিকিৎসা সুবিধাদি পাবেন সাবেক রাষ্ট্রপতি।


সরকারি অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিনামূল্যে সরকারি যানবাহন ব্যবহার, আবাসস্থলে একটি টেলিফোন সংযোগ পাবেন এবং সরকার নির্ধারিত সীমা পর্যন্ত বিল পরিশোধ থেকে অব্যাহতি দেবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হিসেবে একটি কূটনৈতিক পাসপোর্টও পাবেন মো. আবদুল হামিদ। তিনি দেশের ভেতর ভ্রমণকালে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থান করতে পারবেন।


আইনানুযায়ী, চিকিৎসা সুবিধা, কূটনৈতিক পাসপোর্ট এবং দেশের ভেতরে সরকারি সার্কিট হাউস বা রেস্টহাউসে বিনা ভাড়ায় অবস্থানের সুবিধা মো. আবদুল হামিদের স্ত্রীও পাবেন।


বিবার্তা/সানজিদা/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com