সেনাবাহিনীর মেজর পরিচয়ে ও জাল জাতীয় পরিচয়পত্রসহ বিভিন্ন ভুয়া নথিপত্রে ঋণের নামে এনআরবি ব্যাংক থেকে দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ ওরফে সাহেদ করিমসহ তিনজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২৯ মার্চ, বুধবার দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এই চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে বলে বিবার্তাকে নিশ্চিত করেছে দুদকের উপ-পরিচালক আরিফ সাদেক।
অনুমোদিত চার্জশিটে সাহেদ ছাড়াও অন্যান্য আসামিরা হলেন- রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইব্রাহিম খলিল ও কর্পোরেট হেড অফিসের সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মো. সোহানুর রহমান।
অন্যদিকে এনআরবি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট (এসই ব্যাংকিং) ওয়াহিদ বিন আহমেদকে মামলায় আসামি করা হলেও চার্জশিটে তাকে আসামি করা হয়নি।
লাইসেন্স নবায়নবিহীন রিজেন্ট হাসপাতালকে ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালে রূপান্তর, মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) করতে অনিয়ম কিংবা কোভিড পরীক্ষা করে অবৈধভাবে অর্থ লুটপাটের মতো ঘটনার কারিগর হচ্ছেন এই সাহেদ। ২০২০ সালের ২২ জুলাই এনআরবি ব্যাংক থেকে হাসপাতালের নামে ঋণ বাবদ ১ কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬৫ টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাহেদসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল দুদক। যার তদন্তের দায়িত্ব পালন করেছেন উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
তদন্ত প্রতিবেদন সূত্র জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর রিজেন্ট হাসপাতালের নামে হিসাব খোলা হয়। চলতি হিসাবটি খোলার সময় সাহেদের কোনো টাকা জমা হিসাবে গ্রহণ করা হয়নি। ছিল না ঋণের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত জামানত। ঋণ বিতরণের আগে বা পরে যথাযথ তদারকিও করা হয়নি। অথচ হিসাব খোলার একদিন আগেই ঋণ মঞ্জুরির জন্য সুপারিশ করা হয়। এমনকি ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুযায়ী নির্ধারিত সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা হয়নি। কেবলমাত্র ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুযায়ী এফডিআর করেছিলেন সাহেদ। পরবর্তী সময়ে ঋণ পরিশোধ না করে ওই এফডিআর ক্লোজ করে ঋণ সমন্বয় করেন তিনি।
সূত্র আরও জানায়, সাহেদ স্বেচ্ছায় কখনও ঋণের টাকা পরিশোধ করেননি। দুদকের অনুসন্ধানে আসামিরা প্রতারণার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত এনআরবি ব্যাংক থেকে দুই মেয়াদে ঋণ রিসিডিউলসহ ২ কোটি ৪ লাখ ৯০ হাজার ৯৮৭ টাকা ঋণ নিয়েছেন। যার মধ্যে ৬৫ লাখ ৭৯ হাজার ২২৭ টাকা সুদ ও অন্যান্য চার্জ ধার্য কেটে রাখা হয়। তবে সুদসহ ব্যাংকের ১ কোটি ৫১ লাখ ৮১ হাজার ৩৬৫ আত্মসাতের অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়।
এছাড়া ফারমার্স ব্যাংক থেকে ১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাহেদসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আরও একটি মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুদক।
অন্যদিকে নমুনা পরীক্ষা বাবদ ও করোনা চিকিৎসায় খরচ বাবদ ৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা আত্মসাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও সাহেদ করিমসহ ৬ জনের বিরুদ্ধেও চার্জশিট দেয় দুদক।
মহামারির মধ্যে চিকিৎসার নামে প্রতারণা আর জালিয়াতির মামলায় ২০২০ সালের ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্ত থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। ওই বছরের ৬ ও ৭ জুলাই উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতাল ও রিজেন্ট গ্রুপের প্রধান দপ্তরে র্যাবের অভিযানের পর থেকে সাহেদ লাপাত্তা ছিলেন। কোভিড-১৯ পরীক্ষার প্রতিবেদন নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়ার পর ওই হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছিল র্যাব।
বিবার্তা /সানজিদা/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]