জাতীয়
আল-জাজিরাকে প্রধানমন্ত্রী
দুই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তারা প্রমাণ দিতে পারেনি: প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশ : ১২ মার্চ ২০২৩, ০১:১১
দুই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তারা প্রমাণ দিতে পারেনি: প্রধানমন্ত্রী
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

২০১৪ ও ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুললেও তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি বলে দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। সম্প্রতি কাতার সফরকালে প্রধানমন্ত্রী এই সাক্ষাৎকার দেন।


আগামী নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হবে জানিয়ে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে আল-জাজিরার প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন শতভাগ নিরপেক্ষ হবে। আগের দুই নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তারা কিন্তু কোনোকিছু প্রমাণ করতে পারেনি। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল এবং মানুষ আমার দলের পক্ষেই ভোট দিয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। কেন? কারণ, তাদের দলের নেতারা দুর্নীতি, অস্ত্র পাচার, গ্রেনেড হামলার মতো অপরাধের দায়ে সাজাপ্রাপ্ত।


তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি নাকচ করে দিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, যারা আজ তত্ত্বাবধায়কের দাবি করছে তারা নিজেরাই এই ব্যবস্থাকে বিতর্কিত করেছে। অতীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্বে কারা ছিলেন সেই প্রশ্নও তোলেন সরকারপ্রধান।


বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল; তারা শুধু মানবাধিকার লঙঘনই করেনি, তারা মানুষকে হত্যা করেছে, আমাদের দেশকে ধ্বংস করেছে, অর্থনীতি ধ্বংস করেছে। সেসময় দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আমাদের দেশের নাম পাঁচবার এসেছে। অন্য অনেকের মতো আমিও ভুক্তভোগী হয়েছি।


শেখ হাসিনা বলেন, তারা আমাকে একাধিকবার হত্যা করার চেষ্টা করেছে। প্রকাশ্য দিবালকে (২১ আগস্ট) তারা আমার ওপর হামলা চালিয়েছে। নারী নেত্রী আইভি রহমানসহ আমার দলের ২২ জন সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। এমনকি এ নিয়ে কোনো তদন্ত, এর কোনো বিচার পর্যন্ত হয়নি।



বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তাদের (বিএনপি) দুর্নীতির বিষয় দেশের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও প্রমাণিত হয়েছে। এরপর তাদের সন্ত্রাসবাদ। দেশের পাঁচ শতাধিক স্থানে এক ঘণ্টার মধ্যে তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বাংলাদেশকে তারা একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল। তাদের অপকর্মের জন্য তখন জরুরি অবস্থাও জারি হয়েছিল। আমি দেশের মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করেছি, আমি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি।


দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রসঙ্গ টেনে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের পুঁজি সীমিত। কিন্তু আমি একটি কথা বলতে পারি, আমাদের দেশের জনগণ খুবই ভালো ও প্রাণবন্ত। আর উন্নয়নের বিষয়টি নির্ভর করে নীতির ওপর। এজন্য আমরা সুর্নিদিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। সে অনুযায়ী আমাদের দীর্ঘমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী, স্বল্পমেয়াদী এবং তাৎক্ষণিক কিছু পরিকল্পনা রয়েছে, যা আমরা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করছি। এভাবেই আমাদের উন্নয়ন তরান্বিত হচ্ছে।


গার্মেন্টস শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার ছিল, গবেষণার মাধ্যমে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো। এর মাধ্যমে আমরা মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি। এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণেও আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। পাশাপাশি, কীভাবে আরও বেশি মানুষের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা যায়; সেদিকেও আমরা নজর দিয়েছি।


নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের আইসিটি খাতে গুরুত্বারোপ করছে। এখন দেশের সর্বত্র ইন্টারনেট আছে। সাবমেরিন ক্যবল, ব্রডব্যান্ডের মাধ্যমে আমরা মানুষের কাছে পৌঁছেছি। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছিলাম; এখন দেশের প্রতিটি অঞ্চলে, প্রতি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে।


বৈশ্বিক সংকট এবং রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের আর্থিক নীতি খুবই সময় আবদ্ধ। জনগণকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে এবং চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এর মাধ্যমে তারা নিজেরাই তাদের ভাগ্য গড়বে। এভাবেই আমরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি।


এক প্রশ্নের জবাবে পশ্চিমা গণমাধ্যমের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, পশ্চিমা গণমাধ্যম যারা আমাকে স্বৈরাচারী শাসক বলে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, যখন আমার দেশে সেনা শাসন ছিল, তখন এটিকে আপনারা কীভাবে বিচার করবেন? ১৯৭৫ সালে আমার বাবা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ আমার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করল সেনাবাহিনী। আমি দেশে আসতে পারিনি। শরণার্থী হয়ে বিদেশে থাকতে হয়েছে। যখন ফিরে আসলাম, আমাকে মামলা পর্যন্ত করতে দেয়া হয়নি। তারা বহুবার আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে। গ্রেনেড হামলা করেছে। আমি কোনো বিচার পাইনি। কোনো ধরনের তদন্ত হয়নি। তারা বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে চেয়েছে। সেই জায়গা থেকে সংগ্রাম করে আমরা মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে এনেছি।


রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ঘটনার সূত্রপাত্র হয় তখন অনেক রোহিঙ্গা নির্যাতন, হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। আমাদের খুব খারাপ লেগেছিল। তাই আমরা সীমান্ত খুলে দিয়ে তাদের আসতে দিই। মানবিক দিক থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য আশ্রয় ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। একইসঙ্গে আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করি। তাদের বলি, রোহিঙ্গারা তোমাদের দেশের নাগরিক, তাদের ফিরিয়ে নেয়া উচিত। তবে, দুর্ভাগ্যবশত মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না। আমি মনে করি, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া উচিত।


রোহিঙ্গাদের সুযোগ-সুবিধার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা তাদের জন্য ভাসানচরে আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরের পরিস্থিতি খুব ভালো না। তারা এখন নিজেদের মধ্যেই সংঘাতে জড়াচ্ছে। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। এজন্য রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও কামনা করেন শেখ হাসিনা।


বিবার্তা/এসএ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com