রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৩, ২২:০০
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাহায্য আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন অবিলম্ব জোরপূর্বক বাস্ত্যুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সাহায্য করার জন্য জি২০ সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।


তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের দীর্ঘস্থায়ী অবস্থান সমগ্র অঞ্চল জুড়ে বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিশাল নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করছে। তারা সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীগুলোর কাছে উগ্রবাদে দীক্ষিত করার এবং তাদের দলে টানার একটি সম্ভাব্য টার্গেট গোষ্ঠী হতে পারে।’


ভারতের সভাপতিত্বে আজ,জি২০ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে এক অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব মন্তব্য করেন।


বৈঠকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডক্টর এস জয়শঙ্কর সভাপতিত্ব করেন।


মোমেন অবশ্য বলেন যে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের সহায়তার পাশাপাশি জীবন বাঁচাতে এবং জনগণকে অমানবিক সঙ্কট থেকে রক্ষা করতে যেকোন জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি কোভিড-১৯-এর কঠিন সময়ে কয়েকটি প্রতিবেশী দেশের প্রতি বাংলাদেশের সমর্থনের কথা উল্লেখ করেন।


আজকের অধিবেশন শুরু হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রেকর্ড করা ভিডিও ভাষণ দিয়ে। গত সন্ধ্যায় একটি আড়ম্বরপূর্ণ নৈশভোজের পর শুরু হওয়া বৈঠকে বাংলাদেশসহ বিশেষভাবে আমন্ত্রিত নয়টি দেশ এবং ১৩টি আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ ৪০টিরও বেশি প্রতিনিধি দল যোগ দেয়। এবারের সভার প্রতিপাদ্য হচ্ছে- ‘এক পৃথিবী, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’। ভারত গত ডিসেম্বরে বিশ্বের এই প্রধান অর্থনৈতিক গ্রুপটির সভাপতিত্ব পেয়েছে।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সন্ত্রাসবাদকে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বলেন, চ্যালেঞ্জ শুধু আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য নয়, মানব নিরাপত্তার জন্যও। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো-টলারেন্স’ নীতি বজায় রেখেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো সন্ত্রাসী সংগঠনকে বাংলাদেশের মাটি অন্য কোনো দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দিই না। আমাদের সরকারের সক্রিয় উদ্যোগের কারণে ভারত, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারত বর্তমানে অব্যাহত উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা সুবিধা ভোগ করছে। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সংকট অনেকের জন্য, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করছে। নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে সরবরাহ শৃঙ্খল এবং আর্থিক লেনদেন ব্যবস্থার ব্যাঘাতের কারণে অনেক সরকারই মূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে।


মন্ত্রী জি২০-এর সভাপতি হিসাবে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংকট মোকাবেলা ও সমস্যা সমাধানে জি২০-এর নেতাদের প্রভাবিত করার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সংকট বিবেচনা করে জি২০ নেতৃত্বের উচিত যেসব সংস্থা সংকটের কারণে বেশি মুনাফা করছে, তাদের লাভের কমপক্ষে ২০ শতাংশ সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বরাদ্দ বাধ্যতামূলক করা।


জি২০-এ একটি পৃথক অধিবেশনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় মোমেন ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় একটি সর্বজনীন, নিয়ম-ভিত্তিক, উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, পূর্বাভাসযোগ্য, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বৈষম্যহীন ও ন্যায়ঙ্গত বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার জন্য বাংলাদেশের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংকট ইতিমধ্যে বহুপক্ষীয় সমাধানের গুরুত্ব প্রমাণ করেছে এবং এ অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে আমরা এ লক্ষ্যে আমাদের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছি। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কথা উল্লেখ করে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী জি২০ সভাপতিকে বিশ্বের গুরুত্ব¡পূর্ণ অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর নেতৃত্বকে প্রভাবিত করতে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যয়ের অন্তত ১০ শতাংশ জলবায়ুু তহবিলে দেওয়ার অনুরোধ করেন যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এই গ্রহটিকে রক্ষা করা যায়।


তিনি ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বলেন, এটি জি২০সহ সকল বহুপক্ষীয় উদ্যোগের আলোচ্যসূচির শীর্ষে থাকা উচিত। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্লোবাল সাউথের একটি প্রধান দেশ হিসাবে এবং জি২০-এর সভাপতি হিসাবে ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজিস অর্জনে পর্যাপ্ত তহবিল বরাদ্দ এবং বাস্তবায়নের উপায় সংস্থানের জন্য জি২০ নেতৃত্বকে অনুরোধ করতে পারে।


পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বৈশ্বিক শান্তি সম্পর্কে বলেন, অর্থবহ বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়ন, শান্তি ও নিরাপত্তা উন্নয়নে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শান্তি-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতি, জি-২০সহ সকল বহুপক্ষীয় ফোরাম এবং উদ্যোগের সাথে আমাদের সম্পৃক্ততার ক্ষেত্রে আমাদের পথনির্দেশ করে চলেছে। মন্ত্রী জি-২০-তে বাংলাদেশকে অতিথি দেশ হিসেবে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য ভারত সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, এই দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্টভাবে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান অনন্য দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গভীরতা ও উষ্ণতা প্রতিফলিত করে।


জি২০ সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিশেষভাবে আমন্ত্রিত ব্যক্তিগণও পৃথক অধিবেশন দুটিতে বক্তব্য রাখেন।


সূত্র : বাসস


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com