রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০২৩, ০৯:৪৫
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া  শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন
সানজিদা আক্তার
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন দ্বাবিংশ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে। বর্তমান রাষ্ট্রপতির মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার ফলে এই নির্বাচন আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।


রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ বছরের ২৩ এপ্রিল৷ তিনি পর পর দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতি ছিলেন৷ সংবিধান অনুযায়ী তার আর রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ নেই৷


রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিবার্তাকে  নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছি। যথা সময়ে নির্বাচন হবে। প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।


তিনি আরও বলেন, পার্লামেন্টে স্পিকারের সাথে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহাদয়ের সাথে আলাপ হবে। তারপর দিন-তারিখ ঠিক হবে।


সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বাংলাদেশের কোনো নাগরিক তার জীবনে দুইবারই রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে পারেন৷ এটা পরপর বা যে কোনো সময়ে৷ দুই বারের বেশি রাষ্ট্রপতি হওয়ার সুযোগ নেই৷ 


আবদুল হামিদ বাংলাদেশের ২১তম রাষ্ট্রপতি। তাকে ফের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে৷ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, সংবিধান সংশোধন করার কোনো ইচ্ছা সরকারের নাই৷ তারা রাষ্ট্রপতি পদের জন্য যোগ্য লোক খুঁজছেন৷


রাষ্ট্রপতির মেয়াদ হলো নির্বাচিত হওয়ার সময় থেকে পাঁচ বছর৷ এর আগে সরকার পরিবর্তন হলেও সংবিধানের বিধান অনুযায়ী তিনিই রাষ্ট্রপতি থাকবেন৷ আর তার উত্তরসূরী দায়িত্ব গ্রহন না করা পর্যন্ত তিনিই রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন৷


সংবিধানের ৪৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবেন সংসদ সদস্যদের ভোটে৷ নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে৷ তারাই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে৷


 রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে৷ তবে, যে সংসদ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করেছে, ওই সংসদের মেয়াদে রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের প্রয়োজন পড়বে না৷ আর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রথম বৈঠকের দিন থেকে ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ রাষ্ট্রপতির মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে পদ শূন্য হলে শূন্য হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে৷


রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী হতে হলে সংসদ সদস্য হতে হয় না৷ তবে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজন প্রস্তাবক ও একজন সমর্থক লাগে৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন৷


সংবিধানের ৪৮(৪) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি-


 (ক) পঁয়ত্রিশ বছরের কম বয়স্ক হন; অথবা
 (খ) সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হবার যোগ্য না হন; অথবা
 (গ) কখনো সংবিধানের অধীন অভিশংসনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির পদ হতে অপসারিত হয়ে থাকেন৷


প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ‘নির্বাচনি কর্তা’ হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনা করেন। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিডিউল ঘোষণা করেন। নির্বাচনি সিডিউল ঘোষণার আগে কমিশন সংসদ সদস্যদের বিভক্তি সংখ্যা (সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত বিভক্তি সংখ্যা), নাম ও নির্বাচনী এলাকা উল্লেখ করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ করবে।


জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত আসনসহ মোট আসন ৩৫০টি৷ আওয়ামী লীগের মোট আসন ৩০২টি, জাতীয় পার্টির ২৬, বিএনপির সাত জন পদত্যাগ করায় তাদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই, গণফোরামের দুইটি এবং স্বতন্ত্র তিনটি আসন৷ সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাতীয় পার্টি, গণফোরাম ও স্বতন্ত্রদের রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী দেয়ার সুযোগ আছে৷ 


তবে এখনও কোনো রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রপতি প্রার্থীতা নিয়ে কোনো ধরনের আলাপ করেনি। তবে নতুন রাষ্ট্রপতি নিয়ে সবার মধ্যেই চলছে আলোচনা। 


প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ছয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরমধ্যে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আর ওই সময়ে  বিরোধী দল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিজয়ী হন। এছাড়া প্রত্যেকবার একক প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। ফলে কোনো ক্ষেত্রেই সংসদ কক্ষে ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়েনি। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পর কমিশন গেজেটে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে একক প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করেছে।


যেভাবে সম্পন্ন হয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন:


নির্বাচনী কর্মকর্তা (নির্বাচন কমিশন) ভোটগ্রহণের দিনের বৈঠকের সভাপতিত্ব করবেন। সংসদে স্পিকার সংসদ অধিবেশন চলার সময় শৃঙ্খলার স্বার্থে যে ব্যবস্থা নেবেন, ভোটের দিন নির্বাচনী কর্মকর্তা সেই ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকারী হবেন। যেকোনো ব্যক্তি বা কর্তৃপক্ষ তাকে সহযোগিতা করতে বাধ্য থাকবে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিন নির্বাচন ছাড়া সংসদের অন্য কোনও কার্যক্রম চলতে পারবে না। নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী থাকলে নির্বাচনী কর্মকর্তা নির্বাচনের দিন দুপুর ১২টার পর সংসদ কক্ষে প্রার্থীদের প্রস্তাবক ও সমর্থকের নাম ঘোষণা করবেন।


ওইদিন দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সংসদ ভবনে এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তবে, রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে বিধান অনুযায়ী ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়বে না।


একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনী কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর  মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেওয়ার পর সংসদ কক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে।


প্রত্যেক সংসদ সদস্যের একটি মাত্র ভোট থাকবে। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এই নির্বাচনে একজন ভোটার। ভোটের দিন গ্যালারিসহ সংসদ কক্ষে প্রার্থী, ভোটার, ভোট নেওয়ায় সহায়তাকারী কর্মকর্তা ছাড়া সবার প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করবেন নির্বাচনী কর্মকর্তা। ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হয়।


 বিবার্তা/ সানজিদা/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com