সব শিল্পবস্তু কালো রঙে রঞ্জিত এবং প্রদর্শনকক্ষের দেয়াল একেবারেই শূন্য। দেয়ালে কোনো শিল্পকর্ম না ঝোলানোয় আলো–আঁধারি কক্ষে চোখ কোথাও আটকে যায় না। এ যেন নদীর অববাহিকার দিকচিহ্নহীন দিগন্তের অবভাস।
এই প্রদর্শনীকে নানাভাবে পাঠ করা সম্ভব—বঙ্গীয় জনজীবনের রূপান্তরের ইতিহাসের দিক থেকে যেমন, বাংলার ভাবের দিক থেকেও তেমনই। ওয়াকিলের দৃষ্টি কোনো গভীরতর সত্যের দিকে।
ধানমন্ডির বেঙ্গল শিল্পালয়ে চলছে‘মনন–খনন’ শিরোনামে ওয়াকিলুর রহমানের দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী।
ওয়াকিলের কল্পনায় এই জনপদের উত্থান, যাপন ও ভাবকল্পের বিকাশের সঙ্গে নদী ও নৌকার সপ্রাণ যোগ তাৎপর্যপূর্ণ। নদীসিক্ত সমতল বঙ্গীয় ভাবের উর্বরাক্ষেত্র।
নদীপাড়ের এঁটেল মাটি জলজ জীবনের সুদীর্ঘকালের স্মৃতি ও বিস্মৃতির ছাপচিত্র। ওয়াকিলের মৃৎফলকে তারই প্রতিফলন।
মেঝেতে, নৌকার সমান্তরালে, চৌকো চৌকো মৃৎফলকে নদীবর্তী আর্দ্র মাটির একফালি প্রতিরূপ। তাতে পদচ্ছাপ, মাটির হাঁড়িকুঁড়ি, জলজ প্রাণের চিহ্ন।
কক্ষে আরও ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে নৌকার কাঠে গড়া টোটেম–সদৃশ কিছু উল্লম্ব কাঠামো। কয়েকটি সারিবদ্ধ বইঠা। নৌকা, অক্ষরমালা আর মৃৎফলকের সারির অনুভূমিকতার সঙ্গে এই কাঠামোগুলো এক বিপরীত টান রক্ষা করছে। নৌকার খোলের উত্তল কাঠ মুখোমুখি গেঁথে নির্মাণ করায় উল্লম্ব দৃশ্যবস্তুগুলোতে তৈরি হয়েছে রহস্যময় গহ্বর। কোনো কোনো কাঠামোয় শামুক বা গুগলির মতো জলজ প্রাণীর আকার। একটি কাঠামোর শীর্ষে তারহীন দোতারা স্থাপন করা।
তবে এত সব আয়োজনের মধ্য দিয়ে ওয়াকিল বলতে চান, এই জনপদের সঙ্গে তাঁর এত দিনের সুগভীর গাঙ্গেয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে, তাঁর ভাবজগতে ভাঙন ধরেছে। তাঁর নৌকা ধ্বস্ত, সেসবের হাড়পাঁজর বেরোনো। তাঁর উল্লম্ব কাঠামোর শীর্ষে স্থাপিত দোতারা নরকঙ্কালের কোটরাগত মুখাবয়বের প্রতিভাস জাগায়। সব মিলিয়ে প্রদর্শনীটি নদীস্নাত বঙ্গীয় জনপদের ভাবসমেত এক মহাশ্মশানে পর্যবসিত হয়। প্রদর্শনীটি হয়ে ওঠে এই সময়ের বঙ্গভূমির সামনে মেলে ধরা একটি নির্মম দর্পণ।
এই প্রদর্শনী চলবে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]