কণ্ঠশীলন প্রযোজিত নতুন আবৃত্তি প্রযোজনা ‘বিদ্যাসাগর পাঁচালী’-এর উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হয়েছে।
৮ মার্চ, শুক্রবার সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে এ আবৃত্তির আয়োজন মঞ্চায়ন হয়েছে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জীবন, কর্ম ও লেখা নিয়ে ‘বিদ্যাসাগর পাঁচালী’ প্রযোজনাটির গ্রন্থনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন গোলাম সারোয়ার। ছড়াকার শ্রী তুলশী ভট্টাচার্যের লেখা বিদ্যাসাগরকে নিয়ে ছড়া দিয়ে প্রযোজনার অনেকটা অংশ সাজানো হয়েছে।
কীর্তিমান বাঙালি মহাপুরুষ ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে (১৮২০-১৮৯১) নিয়ে বাংলাভাষী এলাকা জুড়ে তাঁর প্রাপ্য চর্চাটুকু হয়েছে-এমন দাবি করা যায় না। সমাজ-সংস্কারক এই যোদ্ধার প্রকৃতি ও নিমগ্ন কর্ম বিস্তৃতি নিয়ে এখনও কোথাও নিবিড়ভাবে গবেষণা হচ্ছে কিংবা নতুন প্রজন্মের সম্মুখে এই অনুসরণীয় বিখ্যাত ব্যক্তিটির যোগ্য মর্যাদা কোনো অবয়বে তুলে ধরার কাজ চলছে এমনটাও শোনা যায় না।
ঈশ্বরচন্দ্রের মৃত্যুর এক’শ তেত্রিশ বছর পরও কিছু আনুষ্ঠানিক পর্ব, কিছু বক্তৃতার মধ্যে তিনি সীমাবদ্ধ। এবং শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমে কোথাও কোথাও তাঁকে নিয়ে তাঁর জীবনের কোনো ঘটনা বা কোনো গল্পের উপস্থান হয় বৈকি তবে পূর্ণ বিদ্যাসাগর জানবার আকুতি তৈরি করবার মতো শিক্ষা বা সাংস্কৃতিক কোনো বাস্তব জোগান আজও আমাদের চোখে পরিস্ফুট হয়ে ওঠেনি।
অথচ এক’শ উনসত্তর বছর পূর্বে বাংলা বর্ণমালাকে তিনি যে সজ্জায় সাজিয়ে-রাঙিয়ে বাঙালির জন্য অন্তহীন আমানত তৈরি করে গেছেন, তা আজও বাঙালির যক্ষের ধন, সাক্ষর তথা শিক্ষিত হওয়ার অবলম্বন। বাঙালির সমাজ-জীবনে, জীবনযাপনে বিদ্যাসাগর বহুকীর্তির জনক সে তথ্য সুবিদিত।
অনেক প্রতিকূলতার মাঝেও কণ্ঠশীলন এই সব মনীষীদের জীবন-কর্ম উপস্থাপনে সর্বদা আগ্রহী। কিন্তু এতো বড়ো এক বর্ণাঢ্য-আন্দোলন-শিক্ষণ সংশপ্তককে এক ঘণ্টার বাচিক উপস্থাপনে গুছিয়ে তোলা, প্রায় নিষ্ঠুর কাঁচির বেতাল প্রয়োগ বলাই যায়। তবু বিদ্যাসাগরকে ঘর থেকে পরে চিনতে বা চেনাতে কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হয়, সেই দায়িত্বটুকু কণ্ঠশীলন বিনম্রচিত্তে গ্রহণ করে।
এই কাব্য আসরটি কণ্ঠশীলনের শিল্পীরা যেভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন এক কথায় তা ছিল অনবদ্য। প্রায় এক ঘণ্টার প্রযোজনাটির আবহ সংগীতে অসীম কুমার নট্ট প্রযোজনাটিকে ভিন্নমাত্রা দিয়েছেন। মঞ্চ নির্মাণে দক্ষতার সাক্ষর রেখেছেন সালাম খোকন।
গোলাম সারোয়ারের শিল্পীদের পোষাক পরিকল্পনায় ছিল মুন্সিয়ানা। কাজী নজরুল ইসলামের আলোর খেলাও মনোমুগ্ধকর করেছে প্রযোজনাটিকে। সুলতানা আক্তার সোহাগীর কোরিওগ্রাফীতে প্রযোজনাটি শুধু বলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। মো. আব্দুল কাইয়ুম প্রযোজনা অধিকর্তা হিসেবে সবকিছু সামলে নিয়েছেন। সবশেষে ভালো লাগার পরশ নিয়ে ফিরলেন কবিতাপ্রেমী শ্রোতা।
‘বিদ্যাসাগর পাঁচালী’ আবৃত্তি প্রযোজনাটিতে অংশগ্রহণ করেছেন অপরেশ সাহা, রাজিয়া সুলতানা মুক্তা, বাদল সাহা শোভন, শাহানা রহমান, আফরিন খান, তাসনীম ইসলাম দ্যুতি, ড. জাহিদ হোসেন শোয়েব, মারিয়া কিবতিয়া, ইকবাল হোসেন, তানজিনা খান লিজা, অর্পিতা ঘোষ অমি, আইভি ভুঁইয়া, কাজী সিরাজুম মুনীরা যুঁথী ও মমতা ঘোষ বৃষ্টি।
বিবার্তা/সউদ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]