গরু চুরির অপবাদে যুবককে থানায় আটকে টাকা আদায়ের অভিযোগ
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২৫, ২২:২৪
গরু চুরির অপবাদে যুবককে থানায় আটকে টাকা আদায়ের অভিযোগ
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার এসআই রিপনের বিরুদ্ধে যুবককে থানায় ডেকে নিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। গরু চুরির অভিযোগে মোহাম্মদ হাসান নামের ওই যুবককে থানায় ডেকে নেওয়া হয়।


ভুক্তভোগীর স্বজনদের দাবি, গরু ব্যবসায়ী হাসানকে রাতভর থানায় আটকে রেখে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা আদায় করে পরদিন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


ভুক্তভোগী মোহাম্মদ হাসান সদর উপজেলার সিরতা ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিনি জানান, গত ২৬ জুলাই কিশোরগঞ্জ গরুর হাট থেকে ৭টি গরু কিনে বাড়ি ফেরার পর এসআই রিপন তাকে থানায় ডেকে নিয়ে যান। সেখানে তাকে রাতভর আটকে রেখে ভয়ভীতি দেখানো হয়। পরদিন দুপুরে টাকা দিলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।


হাসানের বাবা হাফিজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, তার ছেলেকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে এসআই রিপন প্রথমে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। অনেক অনুরোধের পর কমিয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। অবশেষে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকায় বিষয়টি মীমাংসা হয়।


হাসানের ভাই মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, ‘আমরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের হাট-বাজার থেকে গরু কিনে এনে সামান্য লাভে বিক্রি করি। গত শনিবার রাতে আমার ভাই গরু কিনে বাড়িতে এলে সিরতা ইউনিয়নের বিট অফিসার এসআই রিপন চন্দ্র সরকার তাকে ফোন করে ডেকে নেয়। পরে আমরা গরু কেনার চালান রসিদ দেখালে যাচাই-বাছাই করে সত্যতা পায়।’ তার ভাষ্য, ওই পুলিশ কর্মকর্তা হঠাৎ বলে বসেন তার ভাইকে ছাড়িয়ে নিতে ৫ লাখ টাকা দেওয়া লাগবে। টাকা না দিলে তারা অন্য কোনো মামলায় তাকে চালান করে দেবেন। পরে সারারাত পুলিশকে অনেক অনুনয়-বিনয় করা হয়।


একপর্যায়ে এসআই জানান, টাকার বিষয়টি ওসির সঙ্গে আলোচনা করে জানাবেন। কিছুক্ষণ পর ওসিরকক্ষ থেকে বের হয়ে তারা ৫ লাখ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করেন। এরপর সকালে অনেক চেষ্টায় এসআই রিপন চন্দ্রের হাতে নগদ ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা তুলে দেন তিনি। তবে ওসি সেদিন এনসিপির অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তার ভাইকে মুক্তি দিতে দিতে দুপুর হয়ে যায়।


হোসাইন আরও জানান, তার ভাইকে মুক্তি দেওয়ার পর এসআই রিপন চন্দ্র ভিডিও করে রাখে। ভিডিও করার আগেই তাদের শিখিয়ে দেওয়া হয়, তারা যেন ক্যামেরার সামনে বলে তাকে ধরে আনার পর তার কাছ থেকে কোনো ধরনের টাকা-পয়সা নেওয়া হয়নি। ভিডিও বক্তব্যে বাবা-ছেলের কাছ থেকে এমন স্বীকারোক্তি নেন এসআই রিপন।


অভিযোগের ব্যাপারে এসআই রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আমি এ ঘটনায় ফেঁসে গেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে এখন আমি আর কিছু বলতে পারব না। আমার কাছে ভিডিওসহ প্রমাণ আছে, সেগুলো আমি তদন্ত কমিটিতে উপস্থাপন করব।’


কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিবিরুল ইসলাম জানান, গরু চুরির অভিযোগে হাসানকে থানায় ডাকা হয়েছিল এবং পরদিন তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তার কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয়েছে কিনা তা তার জানা নেই।


পুলিশ সুপার কাজে আখতার উল আলম জানিয়েছেন, তদন্ত করার জন্য সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।


অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহরোয়ার্দী হোসেন বলেন, ‘পুলিশ সুপার আমাকে তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে কেউ দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com