শিরোনাম
ইন্দোনেশিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮১, ফের সুনামির আশঙ্কা
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১১:১২
ইন্দোনেশিয়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮১, ফের সুনামির আশঙ্কা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইন্দোনেশিয়ার আনাক ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরিতে ফের অগ্ন্যুৎপাতের কারণে নতুন করে সুনামির সৃষ্টি করতে পার বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। এর ফলে উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দাদের সমুদ্র সৈকতগুলো থেকে দূরে থাকার সতর্কতা জারি করা হয়েছে।


দেশটির সুমাত্র ও জাভা দ্বীপের উপকূলীয় শহরগুলোতে শনিবার রাতে সুনামির বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়ে। এতে অন্তত ২৮১ জনের প্রাণহানি হয়েছে এবং আহত হয় আরো এক হাজার ১৬ জন।


এই সুনামির সৃষ্টি হয়েছে ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সাগরতলে ভূমিধসের কারণে। এর সাথে পূর্ণিমার প্রভাব যুক্ত হওয়ায় বিপুল শক্তি নিয়ে সৈকতে আছড়ে পড়েছে সুনামির ঢেউ।


আনাক ক্রাকাতোয়ায় রবিবার ফের অগ্ন্যুৎপাত হয়ে ছাই ও ধোঁয়া উদগীরিত হয়েছে। একটি ভাড়া করা বিমান থেকে নেয়া ভিডিওতে সুমাত্রা ও জাভার মধ্যবর্তী সুন্দা প্রণালীর এই আগ্নেয়গিরিটির অগ্ন্যুৎপাতের তীব্রতা ধরা পড়েছে।



এদিকে ওই অঞ্চলের রাস্তাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা ব্যাহত হচ্ছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে হাতহতদের খোঁজে তল্লাশি অভিযানে সহায়তা করতে ভারী ক্রেন পাঠানো হচ্ছে।


ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থার মুখপাত্র সুতোপো পুরো নুগ্রোহো এক সংবাদ সম্মেলন বলেছেন, আনাক ক্রাকাতোয়ায় অগ্ন্যুৎপাত অব্যাহত থাকায় আরো সুনামি সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।


তিনি বলেন, তাই সৈকতে কোনো আয়োজন না করতে এবং লোকজনকে কিছু সময়ের জন্য উপকূল থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া, জলবায়ু ও ভূপদার্থবিজ্ঞান সংস্থা।



এদিকে সুনামির জন্য কেন কোনো আগাম সতর্কতা জারি করা হয়নি, সোমবার ধারাবাহিক টুইট করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন সুতোপো। তিনি বলেন, ইন্দোনেশিয়ার আগাম সতর্কতা জারির পদ্ধতিটি ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, কিন্তু সাগরতলের ভূমিধস ও অগ্ন্যুৎপাতের বিষয়টি এর পর্যবেক্ষণের আওতার বাইরে। যদিও এই কারণেও প্রাণঘাতী সুনামি সৃষ্টি হতে পারে।


তিনি আরো বলেন, বিশ্বের মোট আগ্নেয়গিরির ১৩ শতাংশ ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে। তাই এ ধরনের পদ্ধতি গড়ে তোলা দেশটির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।


তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, শনিবার রাতে সুনামির আগাম কোনো সতর্কতা পদ্ধতি ছিল না। তহবিলের অভাব, বয়াগুলো ভেঙে ফেলা ও প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে ২০১২ সাল থেকে কার্যকরী কোনো সুনামি সতর্কতা জারির ব্যবস্থা নেই দেশটিতে।


১৯২৭ সালে ক্রাকাতোয়ার অগ্ন্যুৎপাতের ফলে আনাক ক্রাকাতাউ দ্বীপ তৈরি হয়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আনাক ক্রাকাতোয়া আগ্নেঢগিরিকে সক্রিয় হতে দেখা গেছে।



ইন্দোনেশিয়ার জিওলজিক্যাল সংস্থা বলেছে, শুক্রবার রাতে ওই আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছে দুই মিনিট ১২ সেকেণ্ড ধরে। এর ফলে পাহাড়ের মাথায় ৪০০ মিটার উপর পর্যন্ত তৈরি হয়েছিল ছাইয়ের মেঘ।


ইন্দোনেশিয়ায় সুনামির বড়ধরনের আশংকা রয়েছে। কারণ দ্বীপটি রিং অফ ফায়ারের (অগ্নি-বলয়) মধ্যে অবস্থিত। গোটা প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা যে বলয়ের মধ্যে তাতে ঘনঘন ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত ঘটার আশঙ্কা যে বৃত্তের মধ্যে তাকে বলা হয় অগ্নি বলয় বা রিং অফ ফায়ার।


এই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে ইন্দোনেশিয়ার সুলাওয়াসি দ্বীপে শক্তিশালী এক ভূমিকম্পে প্রাণ হারিয়েছিল দু হাজারের বেশি মানুষ। ওই ভূমিকম্পের কারণেও উপকূলীয় পালু শহরকে গ্রাস করেছিল এক বিধ্বংসী সুনামি।



এর আগে ২০০৪ সালে ২৬ ডিসেম্বর, ভারত মহাসাগরে শক্তিশালী ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট একের পর এক প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ১৪টি দেশে প্রান হারিয়েছিল প্রায় দুই লাখ ২৮ হাজার মানুষ। এদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ায় মারা যায় এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ।


তবে অগ্ন্যুৎপাতের কারণে এধরনের সুনামির নজির তুলনামূলক হিসাবে কম।


আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ জেস ফিনিক্স বলেছেন, আগ্নেয়গিরি থেকে যখন অগ্ন্যুৎপাত হয়, ফুটন্ত লাভার কারণে ভূগর্ভের তুলনামূলকভাবে শীতল শীলাস্তর ভেঙে ভূমিধসের সৃষ্টি হতে পারে। আর ক্রাকাতাউয়ের একটি অংশ যেহেতু সাগরে নিমজ্জিত, সেখানে ভূমিধসের ফলে সুনামি সৃষ্টি হতে পারে। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া


>>ইন্দোনেশিয়ায় সুনামিতে ১৬৮ জনের প্রাণহানি


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com