শিরোনাম
বিশ্বের চোখে বাংলাদেশের নির্বাচন
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৭:২০
বিশ্বের চোখে বাংলাদেশের নির্বাচন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রাত পোহালেই আগামীকাল (৩০ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশ্বের সব বহুল প্রচারিত গণমাধ্যমসহ জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের চোখ এখন বাংলাদেশের রোববার অনুষ্ঠেয় জাতীয় নির্বাচনের দিকে।


চলতি বছরের নির্বাচন অংশ্রগ্রহণমূলক বলা হলেও আগেরগুলোর তুলনায় এবারের নির্বাচনের দিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও গণমাধ্যমের আগ্রহ কম দেখা গেছে। যদিও ১০ বছর পর বাংলাদেশের নির্বাচনে দেশটির সব প্রধান রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করছে।


আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবরে গত ১০ বছরে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও বিভিন্ন সমস্যা তুলে ধরার পাশাপাশি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং রাজনৈতিক সহিংসতা কমে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।


একটি মুক্ত, অবাধ, সহনশীল ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যখন প্রধান বিরোধীদলীয় নেত্রী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির অভিযোগে কারাভোগ করছেন ঠিক সে সময়ই টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।


অংশগ্রহণমূলক, আস্থাযোগ্য, শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে বলপ্রয়োগ, সহিংসতা ও ভীতিমুক্ত নির্বাচনের পরিবেশের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।


নির্বাচন সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার এ কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, সংখ্যালঘুসহ সকল বাংলাদেশি যেন ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে সেজন্য প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। সুশীল সমাজ, পর্যবেক্ষকরা যেন সম্পূর্ণভাবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেন সে বিষয়েও আমরা আশাবাদী।’


ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, আগামীকাল রোববার বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম একটি দ্রুত বিকাশমান অর্থনীতিতে পরিণত করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেকর্ড গড়া তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসছে কিনা- সেই সিদ্ধান্ত নেবে দেশটির জনগণ।


প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা প্রত্যাশা করেছেন-১০ লাখ ভোটার সহিংসতা উপেক্ষা করে ২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে যাওয়াসহ দেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতির দিকে লক্ষ্য রাখবে। বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধি গত দশকে ৬ শতাংশের ওপরে ছিল। উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে যেটি দ্রুততম।


এই প্রবৃদ্ধির বেশির ভাগই এসেছে দেশের ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্টস খাত থেকে, যেখানে ৪৫ লাখ মানুষ কাজ করেন। এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণ বেড়েছে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের সুবিধা বাড়ায় গড় আয়ু ৭২ বছর হয়েছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।


মার্কিন গণমাধ্যম ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ফের ক্ষমতায় ফিরছে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি সাড়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন এবং বাংলাদেশকে উচ্চ অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির দেশে পরিণত করেছেন, যা অর্থনৈতিক নীতির ধারাবাহিকতার নীতি নিশ্চিত করবে এবং বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ স্থিতি রাখতে সহায়তা করবে।


ব্যবসায়ীদের বিবৃতি নিয়ে করা ব্রিটেনের ইন্ডিপেনডেন্ট এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা চলমান থাকা উচিত। এটা ব্যাপকভাবে ব্যবসায়ীক উন্নয়নে সহায়তা করে। সাম্প্রতিক সময়ের বেশির ভাগ প্রতিবেদনেই আগামীকালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা হচ্ছে।


বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো রোধে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরিসি) নির্দেশে মোবাইলের ইন্টারনেট সেবা থ্রি-জি ও ফোর-জি বন্ধ করার ঘটনাকেও গুরুত্ব দিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম।


রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে ফেসবুক ও টুইটার বলেছে-তারা বাংলাদেশ থেকে তৈরি করা বেশ কয়েকটি অ্যাকাউন্ট ও ভুয়া খবরের পেজ বন্ধ করে দিয়েছে, যেগুলোতে সরকার-বিরোধীদের বিরুদ্ধে নানা উপাদান ছিল। বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কয়েক সপ্তাহের সহিংসতার অভিযোগের পর শুক্রবার জাতীয় নির্বাচনের প্রচার শেষ হয়েছে। গত দশকের অর্থনৈতিক রেকর্ডের কথা প্রচার করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বলছে-তাদের বহু নেতাকর্মী কারাগারে আটক রয়েছেন। নির্বাচনে জয়ী হলে তারা গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।


অ্যাসোসিয়েট প্রেস ঢাকা থেকে করা একটি প্রতিবেদনে বলেছে- রোববারের নির্বাচনে চতুর্থবারের মতো জয়ী হতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাঁর সমালোচকরা বলছেন- যদিও দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ব্যাপক অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটেছে। কিন্তু তাঁর বিনিময়ে দেশটির অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে।


ইউএন নিউজে বলা হয়েছে-ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছেন। অন্যদিকে তাঁর প্রধানবিরোধী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাগারে রয়েছেন। যদিও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ-রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করা হচ্ছে।


আলজাজিরা টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, আগামীকাল একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে। বেশ সহিংসতার ভেতর দিয়ে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।


ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের নির্বাচন প্রশ্নে অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের মতোই অবস্থান নিয়েছে। সংস্থাটি এবার বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠাচ্ছে না। তবে এই নির্বাচন যেন বিশ্বাসযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক এবং স্বচ্ছ হয় তা নিশ্চিত করার জন্য তারা বাংলাদেশ সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।


সূত্র : বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম থেকে সংগৃহীত


বিবার্তা/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com