শিরোনাম
মুক্তিযুদ্ধের ছবি নিয়ে মিয়ানমারের নির্লজ্জ মিথ্যাচার
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১০:৪৮
মুক্তিযুদ্ধের ছবি নিয়ে মিয়ানমারের নির্লজ্জ মিথ্যাচার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গত বছরের আগস্টে সেনা অভিযানে হাজার হাজার রোহিঙ্গা হত্যার ঘটনা বৈধ করতে ভুয়া ছবি ব্যবহার করে রোহিঙ্গা সংকটের ইতিহাস নতুন করে লেখার চেষ্টা করছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রপাগান্ডা ইউনিট।


রোহিঙ্গা সঙ্কটের ‘আসল সত্য’ প্রকাশের ঘোষণা দিয়ে সেনাবাহিনী ১১৭ পৃষ্ঠার একটি নতুন বই প্রকাশ করেছে। জুলাই মাসে বইটি প্রকাশিত হয়েছে।


মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ‘ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড সাইকোলজিকাল ওয়ারফেয়ার’ থেকে প্রকাশিত ওই ব্যবহৃত ছবিগুলোকে প্রামাণ্য দলিল হিসেবেও দাবি করছে তারা।


যুক্তরাজ্যভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্স অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, প্রামাণ্য দলিল হিসেবে প্রকাশিত আটটি ছবির তিনটি নিয়েই তারা জালিয়াতি করেছে।


ওই বইয়ের জালিয়াতি করা তিন ছবির একটি সাদা-কালো ছবিতে দেখা যাচ্ছে, এক লোক কৃষিকাজে ব্যবহৃত নিড়ানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দুই লাশের পাশে। ক্যাপশানে বলা হয়েছে- ‘স্থানীয়দের নির্মমভাবে হত্যা করেছে বাঙালিরা’।


ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে ওই বইয়ে ১৯৪০’এর দশকে মিয়ানমারের দাঙ্গার অধ্যায়ে। ছবির বিবরণে বর্মী ভাষায় বোঝানো হয়েছে, রোহিঙ্গাদের হাতে বৌদ্ধ হত্যার ছবি। বইটিতে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনের মুসলিম রোহিঙ্গাদের বর্ণনা করেছে ‘বাঙালি অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে।


কিন্তু খোঁজ করতে গিয়ে রয়টার্স দেখেছে, ওই ছবি আসলে তোলা হয়েছিল ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়, যখন লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের নৃশংসতার ছবিটি তুলেছিলেন আলোকচিত্রী আনোয়ার হোসেন, যা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ই-আর্কাইভেও রয়েছে।


আরেকটি ছবিতে এক দল লোকের পদযাত্রার ছবিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বলছে, ব্রিটিশ উপনিবেশের পর ‘বেঙ্গলি’রা (রোহিঙ্গা বোঝাতে) মিয়ানমারের নিম্নাংশে (রাখাইন রাজ্য বোঝাতে) অনুপ্রবেশ করে।’



১৯৪৮ সালে মিয়ানমারে উপনিবেশ শেষে বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বোঝাতে ওই ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। তবে রয়টার্সের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এটি ১৯৯৬ সালে রুয়ান্ডা গণহত্যা থেকে বাঁচার জন্য পালানো লোকদের ছবি। ১৯৯৬ সালে মার্থা রিয়াল নামে এক আলোকচিত্রী পিটার্সবার্গ পোস্ট গেজেটের জন্য ওই ছবিটি তুলেছিলেন। ছবিটি পুলিৎসার পুরস্কারের ওয়েবসাইটে রয়েছে। তার সেই রঙিন ছবিকে সাদা-কালোতে রূপ দিয়েছে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে অনুপ্রবেশের ছবি বলে দাবি করেছে দেশটির সেনাবাহিনী।


জালিয়াতি করা তৃতীয় ছবিটি ২০১৫ সালে গেটি ইমেজের। ২০১৫ সালে ইয়াঙ্গুনে মিয়ানমারের নৌবাহিনী দেশান্তরের চেষ্টায় থাকা রোহিঙ্গাদের একটি নৌকা জব্দ করেছে। মূলত মিয়ানমারের নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা পালিয়ে যেতে গিয়ে ধরা পড়ার পর ওই ছবি তোলা হয়। ছবিটি উল্টো করে সাদা-কালোতে বদলে নিয়ে ব্যবহার করা হয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বইয়ে। সেখানে বলা হয়েছে, সমুদ্রপথে বাঙালিদের মিয়ানমারে অনুপ্রবেশের ছবি।



ওই বইয়ে থাকা ৮০টি ছবির মধ্যে বেশিরভাগই সাম্প্রতিক ছবি। বেশিরভাগ ছবিই মিয়ানমারের সেনাপ্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইংয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। আর কিছু ছবি নেয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি’র পোস্ট করা ভিডিও থেকে।


‘মিয়ানমারের রাজনীতি ও সেনাবাহিনী: প্রথম পর্ব’ নামে এই বইয়ে রাখাইনের অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে, বর্তমান সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে বাঙালি সন্ত্রাসীদের কারণে। তাদের উদ্দেশ্য ‘আরকিস্তান’ নামে রোহিঙ্গা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা।


বইয়ের মুখবন্ধে লেফটেন্যান্ট কর্নেল চিয়াও চিয়াও ও লিখেছেন, রাখাইনে বাঙালিদের ইতিহাস প্রকাশ্যে আনতেই তারা ‘প্রামাণ্য ছবিসহ’ এই সংকলনটি করা হয়েছে। দেখা গেছে যখনই মিয়ানমারে কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে বা কোনো ধরনের জাতিগত সহিংসতা হয়েছে, তখন ওই বাঙালিরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে।


এসব ছবির বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ হাতোই বা সেনাবাহিনীর মুখপাত্রের বক্তব্য রয়টার্স জানতে পারেনি। মিয়ানমারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী সচিব উ মায়ো মিন্ট মং মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছেন, ওই বই তিনি পড়ে দেখেননি।


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com