শিরোনাম
কেরালায় বন্যা-ভূমিধ্বসে মৃত শতাধিক, আরো বৃষ্টির পূর্বাভাস
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০১৮, ১৪:৪৩
কেরালায় বন্যা-ভূমিধ্বসে মৃত শতাধিক, আরো বৃষ্টির পূর্বাভাস
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের কেরালায় বিধ্বংসী বন্যায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির দক্ষিণের রাজ্যটির জনজীবন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। মুষলধারে বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট বন্যা ও ভূমিধ্বসে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং এই বৃষ্টি শনিবারের আগে থামছে না বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।


এরই মধ্যে রাজ্যটির প্রায় দেড়লাখ বাসিন্দা গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। জলাবদ্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অধিবাসীদের সরিয়ে নিতে উদ্ধারকর্মীরা জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।


টানা বৃষ্টিতে পানির চাপ বেড়ে যাওয়ায় কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন বাঁধ খুলে দিতে বাধ্য হলে কেরালার অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়।


এদিকে, আজ শুক্রবার ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর শেষকৃত্য সম্পন্ন করে সন্ধ্যায় কেরালার উদ্দেশে রওনা দেবেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইতোমধ্যে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে মোদির। রাজ্যের সাম্প্রতিকতম পরিস্থিতির বিষয়ে কথা হয়েছে দু`জনের। মোদি নিজে এদিন উদ্ধারকার্য খতিয়ে দেখতে কেরালা যাচ্ছেন।


জানা গেছে, বিগত শতাব্দীতে কখনও এমন বন্যা দেখেনি কেরালা। প্রায় এক শতকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে অন্তত ১০৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানালেও ইকোনমিক টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে ১১৪ জনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করা হয়েছে।


ভূমিধসের কারণে সৃষ্ট ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য কর্তৃপক্ষ। এরনাকুলাম এবং ইদুক্কি জেলায় শনিবারের জন্যও রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে।


আরো বৃষ্টি এবং বন্যা-ভূমিধ্বসের আশঙ্কার দক্ষিণের এ রাজ্যটির ১৪টি জেলার ১৩টিতেই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জনসাধারণকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে পিনারাই বিজয়নের সরকার।


রাজ্যের সব স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে; অনেক জেলাতেই পর্যটকপ্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। বন্যায় আটকে পড়াদের উদ্ধারে হেলিকপ্টার, লাইফবোটের পাশাপাশি বিভিন্ন বাহিনীর হাজারও সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।


মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, আমরা এমন কিছু প্রত্যক্ষ করছি, কেরালার ইতিহাসে আগে যা কখনোই দেখা যায়নি। প্রায় সব বাঁধ খুলে দেওয়া হয়েছে। যেসব প্ল্যান্টের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হতো তার বেশিরভাগই তলিয়ে গেছে। মটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।


পার্শ্ববর্তী রাজ্য তামিলনাড়ু একটি বাঁধের ফটক খুলে দিলে পরিস্থিতির অবনতি হয়; এটিকে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা হিসেবেও মেনে নিয়েছেন এ সিপিএম নেতা।


কেরালার বাণিজ্যিক রাজধানী কোচির অনেক এলাকা ডুবে যাওয়ায় সড়ক ও রেল যোগাযোগ ব্যাহত হচ্ছে। বন্যার পানিতে রানওয়ে ডুবে যাওয়ায় কোচি বিমানবন্দরের সব কার্যক্রম ২৬ অগাস্ট পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।


দুর্যোগ কবলিত ত্রিচুর, আলুভা ও মুভাত্তুপুঝায় আটকে পড়া মানুষদের হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে ভারতের সশস্ত্রবাহিনী। ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে নতুন করে সামরিক বাহিনীর তিনটি উইংকে নামানো হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি। দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া বাহিনীর (এনডিআরএফ) ১২টি দল আগে থেকেই মোতায়েন আছে।


আজ শুক্রবার সকালে তিরুঅনন্তপুরমে পৌঁছেছে ন্যাশানাল ডিজাস্টার রেসপন্স ফোর্সের (এনডিআরএফ) ৫টি ইউনিট। রাজ্য জুড়ে উদ্ধার কাজে লেগে পড়েছে বাহিনীর সদস্যরা। আজই কেরলে পৌঁছনোর কথা এনডিআরএফ-এর আরও ৩০টি দলের। বন্দিপেরিয়ার থেকে বন্যা কবলিত মঞ্জুমালা গ্রামে স্থানান্তরিত করা হয়েছে উপকূল রক্ষীবাহিনীর উদ্ধারকারী দলকে। ইতিমধ্যে ওই গ্রাম থেকে ১৬ জনকে উদ্ধার করেছে বাহিনী। উদ্ধার কার্যের পাশাপাশি ত্রাণ হিসাবে শুকনো খাবারও বিতরণ করা হচ্ছে।


জলস্তর ক্রমশ বাড়তে থাকায় কোচিন বন্দর এই মুহূর্তে বন্ধ। ফলে যাবতীয় কাজের জন্য ব্যবহার হচ্ছে কেবল তিরুঅনন্তপুরম এবং কালিকুট বন্দর। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে কেন্দ্রের তরফে সব কেরালাগামী আন্তর্দেশীয় উড়ান পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাকে ভাড়ায় রাশ টানার অনুরোধ করা হয়েছে। কেরালা থেকে যেসব উড়ান দেশটির অন্যত্র যাবে, সেখানেও ভাড়ার বিষয়টি কম রাখার বিষয়ে বলা হয়েছে।


কেরালার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেওয়া এক সতর্কবার্তায় পেরিয়ার ও চালাকুদি নদীর পানি বাড়তে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।


বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে আলুভার অবস্থাই সবচেয়ে বাজে বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো। দক্ষিণের ইডুক্কি ও উত্তরের মালাপ্পুরাম ও কান্নুরে নতুন করে ভূমিধ্বসের খবর পাওয়া গেছে।


সরকারি যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো গাড়িকে পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের স্থান মুন্নারে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। পম্পা নদীর পানির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় সাবারিমালার পাহাড়ি মন্দিরের দিকে যেতেও জনসাধারণকে নিষেধ করা হয়েছে।


বিবার্তা/শারমিন/শাহনাজ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com