শিরোনাম
মেয়েদের আদবকায়দা শেখাচ্ছে চীন
প্রকাশ : ২৭ জুন ২০১৮, ১৬:০৭
মেয়েদের আদবকায়দা শেখাচ্ছে চীন
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

''পুরো চেয়ারজুড়ে বসবে না। পেট ঢুকিয়ে, কাঁধ সোজা করে, পা জোড়া করে বসো।''


কোনো সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার গ্রূমিং ক্লাস নয়, আদবকায়দার এই পাঠ শেখানো হচ্ছে কমিউনিস্ট চীনের চেনচিয়াং কলেজে এবং শেখানো হচ্ছে শুধু ছাত্রীদের। এই বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করেছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ।


আধুনিক চীনে ‘নবীনাদের’ এভাবেই আদবকায়দা শেখানো শুরু হয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। উদ্দেশ্য, ভদ্রসভ্য মেয়ে ‘তৈরি করা’। হাঁটা-চলা, জামাকাপড় পরা, মেক আপ করা, এমনকি চা ঢালার পাঠও দেয়া হচ্ছে। শেখানো হচ্ছে, স্বামীর কাছে বকুনি খেয়েও কীভাবে চুপ করে থাকতে হয়।


আদবকায়দা শিক্ষার দায়িত্ব নিয়েছে চীনের প্রধান নারী সংগঠন অল চায়না উইমেনস ফেডারেশন (এসিডব্লিউএফ)। ১৯৪৯ সালের ২৪ মার্চ প্রতিষ্ঠিত হয় সংগঠনটি। নারীর অধিকার ও স্বাধীনতা নিয়ে দেশজুড়ে কাজ করে তারা। ১৯৫৩ সালের মধ্যেই সংগঠনের সদস্যসংখ্যা ৪০,০০০ ছাড়িয়ে যায়। ১৯৫৭ সালে সরকারিভাবে কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (সিপিসি)-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এসিডব্লিউএফ-কে। ফলে মেয়েদের এই সহবত শিক্ষার পেছনে দেশের সর্বশক্তিমান কমিউনিস্ট দলের হাত রয়েছে বলে মনে করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।


এমন নয় যে, সিপিসি নারীশিক্ষার বিপক্ষে। কিন্তু দেশের আর্থিক বিকাশের গতি কমে যাওয়ায় চাকরির বাজারে মন্দা শুরু হয়েছে। পাশাপাশি সাড়ে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ এবং বেআইনি গর্ভপাতের ফলে দেশটিতে মেয়ের সংখ্যা আনুপাতিক হারে অনেক কমে গিয়েছে। বর্তমানে প্রতি ১০০ জন মেয়েতে ছেলের সংখ্যা ১১১। একটি সমীক্ষা বলছে, ২০২০ সালে চীনে বিবাহযোগ্যা মেয়ের তুলনায় দু’কোটি ৪০ লক্ষ বেশি বিবাহযোগ্য পুরুষ থাকবে।


সমাজতাত্ত্বিকদের মতে, এই ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপের ফলেই মেয়েদের ‘নতুন করে’ গড়ে তোলার তাগিদ অনুভব করছে চীন।


এ ধরনের সহবত শিক্ষা কি নারী স্বাধীনতার বিপরীতমুখী নয়? চেনচিয়াং কলেজের ‘চা সহবত’ পাঠ্যক্রমের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপিকা শেং চিং-কে এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমি একজন শিক্ষিকা মাত্র, নারীবাদী আন্দোলনকারী নই!’’


তাঁর কথায়, ‘‘পরিবারে মেয়েদের গুরুত্ব এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। আর এ তো কোনো নতুন কথা নয়। মেয়েরা পরিবারের দেখাশোনা করবে এবং ছেলেরা রুটি-রুজির জন্য বাইরের জগতে পা দেবে - একথা তো সেই কনফুশিয়াসের আমল থেকেই চীনা সংস্কৃতিতেই বলা হয়েছে।’’


চীনের অন্যতম বিতর্কিত নারীবাদী লেখিকা লেতা হং ফিঞ্চার বলেন, ‘‘কথাটা হয়তো নতুন নয়। তবে মেয়েদের এ ভাবে ‘ঘরোয়া’ বানানোর প্রবণতাটা শি-জমানাতেই প্রথম’’। মজার কথা, রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং-ই বলেছিলেন, ‘‘মেয়েদের সমানাধিকারের থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আর কিছু হতে পারে না।’’


আর এক নারীবাদী লু পিং-এর কথায়, ‘‘মুখে এ কথা বললেও প্রেসিডেন্ট শি এমন এক ‘আদর্শ সংসার’-এর কথা বলেন, যেখানে ছেলেরা রোজগার করতে বেরোবে আর মেয়েরা বাড়িতে বসে বাচ্চা-বুড়োদের সামলাবে। সাংস্কৃতিক বিপ্লবের ফলে মেয়েদের পায়ের বেড়ি খুলেছিল। ঐতিহ্য বজায় রাখার নামে ফাঁকফোঁকর গলে সেই বেড়িটাই আবার মেয়েদের পায়ে ফিরে আসছে।’’


লু পিং আরও মনে করিয়ে দেন, দেশের বিভিন্ন বড় বড় সংস্থায় মাইনের ক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য দূর করতেও সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয় না। আর সরকার বা কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ স্তরেও মেয়েদের উপস্থিতি টের পাওয়া যায় না বললেই চলে। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com