শিরোনাম
স্বপ্ন পূরণ হলো সৌদি নারীদের
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০১৮, ১১:৫৩
স্বপ্ন পূরণ হলো সৌদি নারীদের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। রবিবার থেকে এ আদেশ কার্যকর হয়েছে। দেশটির বিভিন্ন স্থানে নারীরা গাড়ি চালাচ্ছে। রক্ষণশীল দেশ সৌদি আরবের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।


বিশ্বে একমাত্র সৌদি আরবেই এতদিন নারীদের জন্য গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ ছিল। দীর্ঘদিনের এ নিষেধাজ্ঞা বন্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান। সৌদির মানুষ মনে করছেন, এ সিদ্ধান্তের ফলে সামাজিক গতিশীলতার নতুন যুগ উন্মোচন হবে।


৩২ বছর বয়সী সৌদি যুবরাজ বিন সালমান বলছেন, তিনি সৌদি সমাজের আধুনিকায়ন করতে চান এবং দেশকে মধ্যপন্থী ইসলামে ফিরিয়ে নিতে চান। তার ভিশন ২০৩০ কর্মসূচির অধীনে তিনি বেশ কিছু সংস্কার শুরু করেছেন। মেয়েদের ব্যাপারে নেয়া পদক্ষেপগুলো তারই অংশ।


এই প্রথম সৌদি নারীরা স্টেডিয়ামে গিয়ে ফুটবল খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন। মেয়েদের এখন সামরিক বাহিনীতে নেয়া হচ্ছে। তবে তাদেরকে সরাসরি যুদ্ধক্ষেত্রে সৈনিক হিসেবে পাঠানো হবে না।


দেশটির মেয়েরা এই প্রথম একটা সাইকেল রেসেও অংশ নিয়েছেন। আর আজ রবিবার থেকে নারীদের ড্রাইভিংয়ের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল।



রিয়াদ নগরীতে জন্মগ্রহণকারী এক নারীকে তার অনুভূতি সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি বলেন, আমার নাম সামার আলমোগরেন। আমি একটি টকশোর উপস্থাপিকা ও লেখিকা। এর আগে বিভিন্ন দেশে আমি গাড়ি চালিয়েছি। আমার আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। কিন্তু নিজের দেশে, নিজের শহরে গাড়ি চালানো অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ অন্যরকম।


তিনি বলেন, আমি মূলত গাড়ি চালাতে অপছন্দ করি। কিন্তু এটা ভিন্ন ইস্যু। এখানে আমার অধিকারের প্রশ্ন। গাড়ি চালানো বা না চালানোটা আমার একান্ত নিজের সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত। আমার ইচ্ছে হয়ে চালাবো, ইচ্ছে না হলে চালাবো না।


এই প্রত্যয়ী নারী আরো বলেন, উত্তেজনায় আমার সারা শরীর এখন কাঁপছে। খুব খুশির অন্যরকম একটা অনুভূতি। আমার গাড়িতে বসে স্টিয়ারিং হুইল ধরবো। আমাকে এতোদিন দেশে গাড়ির পেছনের আসনেই বসতে হতো। এখন আমি চালকের আসনে বসতে পারবো। আমি আত্মনির্ভরশীল একজন নারী।


তিনি আরো বলেন, আমি জানতাম একদিন না একদিন আমার দেশে নারীদের গাড়ি চালানো অনুমতি দেয়া হবে। কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি আকস্মিকভাবে অনুমতি দেয়া হবে ভাবতেই পারিনি।


সামার বলেন, আমি আজ রাতে সাদা বোরকা পরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কালো বোরকা মুসলিম নারীর বিশেষ পোশাকে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থে এমন একটি শব্দও নেই যেখানে বলা হয়েছে যে, নারীদের কালো বোরকা পড়তেই হবে। ইসলাম ধর্মে নারীদের মার্জিত শালিন পোশাক পড়তে বলা হয়েছে। আমি কালো পোশাকের বিরুদ্ধে নই। কিন্তু জোর করে এটাকে চালিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে।


তিনি বলেন, আমি বিদেশে গাড়ি চালিয়েছি। আমার আন্তর্জাতিক ড্রাইভিং লাইসেন্স রয়েছে। তাই ইতোমধ্যে সবাই (নারীরা) আমাকে তাদের কর্মস্থলে পৌঁছে দিতে অনুরোধ করেছেন। অনেকে আমার গাড়িতে চড়ে কফিশপে যাবারও ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। আমি আমার মাকে আমার গাড়িতে চড়াবো, ভাবতেই খুব ভালো লাগছে। আমার মা এই বয়সে গাড়ি চালাবেন না। আমি ও আমার বোনেরা আমাদের গাড়িতে করে তাকে বেড়াতে নিয়ে যাবো।



তিনি বলেন, আমি আমার সন্তানকে নিয়ে গাড়ি চালাতে পারবো। সে বিশ্বাস করবে আমি তাকে গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমি সবসময় গাড়িতে তার সাথে থাকছি।


সাদা শান্তির পোশাক। সামার তাই আজ রাতে এই পোশাকটি বেছে নিয়েছেন। তিনি নিজেকের পাখি নয়, প্রজাপতি ভাবছেন। মুক্ত স্বাধীন।


গত বছরের সেপ্টেম্বরেসৌদি নারীদের ওপর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয় । তবে এখনো দেশটির নারীদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অনেক বিধিনিষেধ রয়েছে। সূত্র: এএফপি ও বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com