শিরোনাম
ভারতে কৃষকদের ঐতিহাসিক বিজয়
প্রকাশ : ১৩ মার্চ ২০১৮, ২০:২৪
ভারতে কৃষকদের ঐতিহাসিক বিজয়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

১৩ দফা দাবি নিয়ে নাসিক থেকে মুম্বই পাড়ি দেন ভারতের ৬০ হাজার কৃষক। অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে উজ্জীবিত কৃষকের পদভারে প্রকম্পিত হয় বাণিজ্যনগরী মুম্বাইর রাজপথ। অবশেষে নতিস্বীকার করতে বাধ্য হয় বিজেপি সরকার।


নাসিক থেকে মুম্বই‌ - পথটা নেহাত কম নয়। এ দীর্ঘ ১৮০ কিলোমিটার খালি পায়ে হেঁটেছেন ওরা, রক্ত ঝরেছে পায়ে, তবু হাঁটা বন্ধ হয়নি। অধিকার রক্ষার অদম্য জেদে ভর করে এগিয়েছেন সুশৃঙ্খলভাবে।


ওঁরা মুম্বই শহরের ঢুকতেই ওদের মাথার ওপর পুষ্পবৃষ্টি ঝরিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন অগণিত মানুষ। ছাত্ররা তাঁদের হাতে তুলে দিয়েছেন জল, বিস্কুটের প্যাকেট। ভারতের সংবাদমাধ্যমগুলো প্রথমদিকে খুব একটা গুরুত্বই দেয়নি ওদের। কিন্তু শেষমেশ গুরুত্ব আদায় করে নিয়েছেন মেহনতি মানুষরা।


‘‌'দাবি আদায় করেই ছাড়ব, সরকারি প্রতিশ্রুতি আর মানব না'' – মূলত এই দাবিকে সামনে রেখে নাওয়া-‌খাওয়া ভুলে নিজেদের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সামিল হন কয়েক হাজার কৃষক। মুম্বইয়ের রাজপথে তাঁরা ওড়ান প্রতিবাদের লাল পতাকা। ওদের মিছিল মালাডে পৌঁছাতেই শুরু হয় পুষ্পবৃষ্টি। ভিখরোলিতে স্কুলছাত্র ও বাসিন্দারা পোস্টার নিয়ে রাস্তার দু'‌পাশে দাঁড়িয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তাঁদের। ক্লান্ত অবসন্ন মানুষগুলোর ক্ষুধা-তৃষ্ণা নিবারণে এগিয়ে এসেছেন। অনেকেই নিজেদের ঘরের দরজা পর্যন্ত খুলে দিয়েছেন। এগিয়ে দিয়েছেন খাবার। রক্তমাখা পায়ে ওষুধের প্রলেপ দিয়েছেন। তাঁদের জুতো-চটি কিনে দিয়েছেন।


আন্দোলনকারীদের প্রতি সাধারণ মানুষের এহেন সহমর্মিতা বহু যুগ দেখেনি ভারত। আর বাণিজ্যনগরীর মানুষ যে এতটা মানবিক হতে পারেন, তা এর আগে কখনও ভাবতেও পারেননি মহারাষ্ট্রের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই খেটে খাওয়া মানুষেরা।


অন্যদিকে, সমাজের অন্যদের অসুবিধার কথা মাথায় রেখে নিজেদের দাবি আদায়ের লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদাহরণও খুব-একটা নেই। দেশজুড়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা চলছে, তাই পরীক্ষার্থীদের যাতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য দিনের বেলায় পথ দখল না করে আজাদ ময়দানে রাত কাটান কৃষকরা। তারপর সারারাত ধরে পথ হাঁটা। গরিব কৃষকদের এই সামাজিক চেতনা দেখে অভিভুত মুম্বইবাসী। তাই তো তাঁদের রক্তঝরা পা-‌গুলোর সেবাযত্ন করতে এগিয়ে এলো অর্ধেক মুম্বই।


সে এক অদ্ভুত দৃশ্য। আইআইটি, বম্বের ছাত্ররা আন্দোলনকারী কৃষকদের জন্য খাবার নিয়ে হাজির। জুতো নিয়ে হাজির হয় এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।


শেষমেশ সেই ক্ষণ এলো। কৃষকসভার দাবিকে স্বীকৃতি দিল মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকার। ছয় মাসের মধ্যে কৃষকদের নামে জমি হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। মওকুফ হলো ঋণ। এভাবে এক ঐতিহাসিক জয়ের সাক্ষী হয়ে থাকলো মুম্বই। হস্তান্তর প্রক্রিয়া দ্রুত কার্যকর করতে ছয় সদস্যের কমিটি গঠন করে দিলেন ফড়নবিশ। আর সরকারের প্রতিশ্রুতিকে সম্মান দেখিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন কৃষকরা।


এটা অনস্বীকার্য যে, কৃষকসভার দাবি মেনে নেয়া ছাড়া উপায় ছিল না বিজেপি সরকারের। কেননা, ঘরে-বাইরে সাঁড়াশি আক্রমণের মধ্যে ছিল সরকার। এমনকি বিজেপি'র আদর্শিক সঙ্গী শিবসেনা পর্যন্ত কৃষকসভার পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল। সমর্থন জানিয়েছিল কংগ্রেসও। ভারতের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো বাম সংগঠনের আন্দোলনে শরিক হয়েছিল বিজেপির শাখা সংগঠন এবং কংগ্রেস। ফলে পালাবার কোনো পথ ছিল না বিজেপির। আর তাই বিপুল জনমর্থনের কাছে নতিস্বীকার করতে হয়েছে মহারাষ্ট্রের বিজেপি সরকারকে।


এর আগে মহারাষ্ট্র বিধানসভায় দফায় দফায় কৃষক নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁদের কথা শুনেছেন, বোঝানোর চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কৃষকনেতারা তাঁদের জমির অধিকার ছাড়তে রাজি হননি। রক্ত পানি করা শ্রম দিয়ে যে জমিতে ফসল ফলান, সেই ফসলেই অন্ন সংস্থান হয় রাজ্যবাসীর। সেই জমির অধিকারটুকুই শুধু নিজেদের করতে চেয়েছিলেন তাঁরা।


দিনের শেষে জয় হয়েছে তাঁদেরই। আরব সাগরের পাড়ে সূর্য ডুবলেও ভারতে কৃষক আন্দোলনের নতুন সূর্য উদয় হলো এখানেই।


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com