ঈদের আগে বাংলাদেশিদের ভিড়ে জমজমাট কলকাতার বাজার
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ২২:২৩
ঈদের আগে বাংলাদেশিদের ভিড়ে জমজমাট কলকাতার বাজার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আসন্ন ঈদ উপলক্ষ্যে কলকাতার নিউমার্কেট এলাকাসহ এর আশপাশের বিপনীবিতানগুলোতে বাড়ছে বাংলাদেশি ক্রেতাদের ভিড়। ঈদের কেনাকাটা করতে কার্যত উইক অ্যান্ড ট্যুরের মতো স্বল্পদিনের ছুটিতে বাংলাদেশিরা ভিড় জমাচ্ছেন নিউমার্কেট ধর্মতলা এলাকায়। নিউমার্কেট, মার্কওয়া ষ্ট্রীট, ধর্মতলা চত্বরের আবাসিক হোটেলগুলো এখন কার্যত বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড়ে টইটুম্বুর।


নারীদের শাড়ি, সালোয়ার কামিজ থেকে বাচ্চাদের পোশাক সঙ্গে পুরুষদের হরেক রকমের ফ্যাশন দুরস্ত সাজে এখন সেজে উঠেছে নিউমার্কেটের শপিং মলগুলো। সেইসঙ্গে ফুটপাথেও বসেছে রকমারি পসরা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে বেচাকেনা। অন্যান্য সময় যেখানে সন্ধ্যা পার হতে না হতেই দোকানপাট গোটাতে শুরু করেন দোকানিরা, সেখানে এখন রাত ৯-১০ টাতেও ক্রেতা বিক্রেতার ভিড়ে জমজমাট এই এলাকা।


গত কয়েক দিন কলকাতার নিউমার্কেট চত্বর ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেটে বাংলাদেশি পর্যটক সেভাবে না থাকলেও এবারের ভিড় চোখে পড়ার মতো। পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের স্বতঃস্ফূর্ত আগমনে খুশি ব্যবসায়ীরা।


এবার ঈদে নারীদের পোশাকের মধ্যে জরি ও জর্জেটের কাজের শাড়ির চাহিদা বেশ তুঙ্গে বলে জানালেন ধর্মতলার শাড়ি ব্যাবসায়ী তপন দাস। পুরুষদের ক্ষেত্রে পাঞ্জাবি আর চুড়িদার এবং শেরওয়ানির চাহিদাও বেশ। বিশেষ করে এবছর গরমের শুরুতেই যেভাবে পারদ চড়ছে তাতে জিন্স বা মোটা পোশাকের দিকে ক্রেতাদের নজর কিছুটা কম। হাল্কা কাপড়ের পোশাকের চাহিদাই এবছর অনেকটাই বেশি। তবে লেগিন্স জিন্সের চাহিদা নারী ও পুরুষ উভয়ের মধ্যেই আছে বলেও জানালেন তিনি।


নিউমার্কেট চত্বরের ব্যবসায়ী রাজেশ কুমার বলেন, গত বছরের থেকে এবার ভালো ব্যবসা হচ্ছে। আমরা ভাবিনি এবারের রমজানে এত ভালো ব্যবসা হবে। এখানকার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশি পর্যটকদের ওপরেই খুব বেশি নির্ভরশীল।


তিনি বলেন, এই বছর বাংলাদেশি পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে নায়রা, আলিয়া, ঘারারা-সারারা, গাউন, কটনের ফেব্রিকের বিভিন্ন ধরনের পোশাক, আজরাক সিল্ক, সামো সিল্ক। তবে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে অরগাঞ্জা আনারকলি।


ঢাকা থেকে এসেছেন রহিম শেখ। এদিন সপরিবারে নিউমার্কেট চত্বরে কেনাকাটা করতে বেরিয়ে তিনি বলেন, ঈদের আগে মূলত কেনাকাটা করতেই কলকাতায় এসেছি। অফিসে শুক্র শনি ছুটি ছিলো আর সঙ্গে দুই দিনের ছুটি নিয়েই চলে এসেছি। তবে এবার জামা কাপড়ের বেশ ভ্যারাইটি থাকলেও দাম কিছুটা বেশী।


রহিম শেখের কথা শুনেই পাশ থেকে ময়মনসিংহের জামাল গাজী বলে উঠলেন, আরে মিয়া এখানে কেনাকাটা করতে গেলে যতো দরদস্তুর করে নিতে পারবেন ততোই আপনে লাভবান হবেন। না হলে ঠকতে হবে।


আসলে নিউমার্কেট ও ধর্মতলা চত্বরে কেনাকাটা করতে গেলে বিশেষ করে ফুটপাতের ক্ষেত্রে এই কথাটা অত্যন্ত সত্যি। বাংলাদেশের খুলনা থেকে আসা আয়ুব আলি বললেন, এখানে নিয়ম হলো, ফুটপাতের বিক্রেতার দামের ৫০ শতাংশ কম করে দাম বলা। তাহলেই দেখবেন ওরা ডেকে মাল দিয়ে দেবে।


ঈদ যতো এগিয়ে আসছে ততোই বাংলাদেশিদের ভিড় বাড়ছে এই এলাকায়। কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঈদের আগে নিউমার্কেট ও ধর্মতলা এলাকায় বাংলাদেশিদের আনাগোনা বাড়ে। আর সেই কথা মাথায় রেখেই এই এলাকায় যাতে পকেটমার ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা না ঘটে সে জন্য নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরার নজরদারিও। প্রতিবছর ঈদের সময় বাংলাদেশি ক্রেতাদের আশায় দিন গোনেন নিউমার্কেট চত্বরের ব্যাবসায়ীরা। হোটেল ব্যাবসায়ীরা থেকে শুরু করে ফল বিক্রেতা, খাবার দাবার বিক্রেতারা মুখিয়ে থাকেন এই সময়ের জন্য।


নিউমার্কেটের ফুটপাতের ফাষ্টফুড বিক্রেতা গৌরাঙ্গ অধিকারী বলেন, বাংলাদেশিরা এখানে এলে শুধু কেনাকাটাই করেন না, তারা খেতেও বেশ ভালোবাসেন। আমাদের কাছে বাংলাদেশি পর্যটক মানেই লক্ষ্মীলাভ।


এদিকে গণমাধ্যমে ভারতীয় পণ্য বয়কট বিরোধী মতামত প্রকাশ করেছে কলকাতার নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে আসা বেশকিছু বাংলাদেশি পর্যটক। প্রথমবার বাংলাদেশ থেকে ভারতে বেড়াতে আসা এক তরুণী পর্যটক বলেন, বাংলাদেশের একটা নির্দিষ্ট দল এবং কিছু মানুষ ভারতীয় পণ্য বর্জন নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু এটা উচিত নয়। ভারত আমাদের প্রতিবেশি দেশ। প্রতিবেশি দেশের সাথে সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা উচিত।


বাংলাদেশি আরেক পর্যটক বলেন, যারা বয়কট করেছেন তারাই ভারতে কেমন প্রভাব পড়েছে ভালো বলতে পারবেন তবে ভারতের প্রবেশ করতে গিয়ে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে অন্তত ৪ ঘণ্টার লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হয়েছে।


বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, পণ্য বর্জনের ঘোষণা দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা নষ্ট করতে পারবে না। বিষয়টি নিয়ে প্রথমবারের মতো মন্তব্য করেন তিনি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com