নৌকায় করে দীর্ঘ সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে ইন্দোনেশিয়া যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেড়েছে। সাগর কিছুটা শান্ত থাকায় প্রতিবছরই এই সময় মিয়ানমার ও বাংলাদেশ থেকে নৌকায় করে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টা করেন তারা। চলতি সপ্তাহেই ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশে প্রবেশ করেছেন প্রায় ৪শ রোহিঙ্গা। তবে এবার ইন্দোনেশিয়ায় পৌঁছে বেশ বিপাকেই পড়তে হয়েছে এই অভিবাসীদের।
আচেহ প্রদেশে কিছু বিষয়ে ইসলামি শরিয়া আইন কার্যকর আছে। সেখানকার মানুষেরা একসময় রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কিন্তু এখন সেই পরিস্থিতি নেই।
তীরে পৌঁছানোর পর তাদের নৌকা থেকে নামতে বাধা দেন স্থানীয়রা। স্পষ্ট জানিয়ে দেন আশ্রয়প্রার্থীদের থাকতে দেবেন না তাদের গ্রামে। হুমকি দেন নৌকা ঘুরিয়ে দেয়ারও। গত সপ্তাহে সাবাঙ এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য তৈরি তাবুও তুলে ফেলেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি, বিগত বছরগুলোতে চুরি, ছিনতাইসহ নানা অপকর্মে জড়িয়েছে রোহিঙ্গারা।
আচেহর পিদি এলাকার ২৭ বছর বয়সী এলা সাপতিয়া বলেন, এখনও এখানে অনেক গরীব মানুষ আছেন। আমরা কেন হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের নেব? তারা অনেক সমস্যা করে। তারা বিয়েবহির্ভুত যৌনমিলনে লিপ্ত হয়, মাদক সেবন করে।
একজন গ্রামবাসী বলেন, আমরা চাই না, রোহিঙ্গারা আমাদের গ্রামে ঢুকুক। তাই রাতে সবাই মিলে সীমান্ত পাহারা দিচ্ছিলাম। তারপরও ওরা গ্রামে ঢুকে পড়েছে। এখন আমরা চাই, যেভাবে সম্ভব ওদের এখান থেকে সরানো হোক। ২০১৫ সালে আমরা তাদেরকে স্বাগত জানিয়েছিলাম। কিন্তু তারা সামান্যতম কৃতজ্ঞ থাকার বদলে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে পালিয়েছে। নানা ধরনের অপকর্ম করে অতিষ্ঠ করে তুলেছে গ্রামের লোকজনকে। যৌন হয়রানিসহ অন্যান্য অশ্লীল কার্যকলাপেও জড়িয়েছে তারা।
আচেহতে অনেক বেশি রোহিঙ্গা বলে মন্তব্য করে ৩০ বছর বয়সী সিলভানা বলেন, এ বছর কয়েকশ না, কয়েক হাজার এসেছেন।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে একজন লিখেছেন, যদি রোহিঙ্গাদের জন্য ব্যভার করা হয় তাইলে আমি কর দিতে চাই না।
আরেকজন রোহিঙ্গাদের ‘পরজীবী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
এদিকে, মানব পাচারকারীদের কারণেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আগমন বেড়েছে বলে মনে করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো। তাই কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেন মানবপাচারকারীদের উদ্দেশে। তবে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, অস্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার। প্রেসিডেন্ট বলেন, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’এর সাথে যোগাযোগ করে আপাতত আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবো। তবে এর পেছনে যারা আছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, চলতি বছর শুধু গত কয়েক সপ্তাহেই ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করেছে প্রায় ১২শ’ রোহিঙ্গা। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার এই দেশটিতে বিশ্বের ৫০ টি দেশের প্রায় ১৩ হাজার শরণার্থীর বাস। যাদের ৮ শতাংশই রোহিঙ্গা।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]