‘একনায়কতন্ত্র চলবে না’ বলে ভারতের সংসদে হামলা
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৯:০৭
‘একনায়কতন্ত্র চলবে না’ বলে ভারতের সংসদে হামলা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন গ্যালারি থেকে চেম্বারে ঝাঁপিয়ে পড়েন দুই যুবক। তারা এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে ধোঁয়া ছড়াচ্ছিলেন। এসময় তারা ‘একনায়কতন্ত্র চলবে না’ বলেও স্লোগান দিচ্ছিলেন।


স্থানীয় সময় বুধবার দুপুর ১টার দিকে অধিবেশন চলাকালে বড় ধরনের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করে দুই ব্যক্তি। তারা আচমকাই সংসদে প্রবেশ করে স্লোগান দিতে দিতে ‘রঙ বোমা’ ছুড়তে থাকে। ওই ঘটনায় লোকসভায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। পরে নিরাপত্তারক্ষী ও কয়েকজন সংসদ সদস্য ওই দুজনকে ধরে দ্রুত বাইরে নিয়ে যায়।


বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, ঠিক ২২ বছর আজকের এই দিনেই মারাত্মক জঙ্গি হামলা হয় ভারতের সংসদ ভবনে। সে হামলায় মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের।


বিবিসি বলছে, হামলা চালানো ওই লোকদের উদ্দেশ্য জানা যায়নি। হামলার পর অধিবেশন পুনরায় শুরু হওয়ার আগে উভয় কক্ষই অল্প সময়ের জন্য স্থগিত করা হয়।


পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা এপি অধীর চৌধুরী বলেন, দুইজন গ্যালারি থেকে হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়েন। তাদের হাতে কিছু ছিল এবং যা থেকে হলুদ রঙের গ্যাস বের হচ্ছিল। চোখ জ্বালা করছিল। আমাদের দুই সংসদ সদস্যরাই তাদের ধরে ফেলেন। পরে নিরাপত্তারক্ষীরা হামলাকারীদের ধরে বের করে আনেন।


তার কথায়, এটি অবশ্যই নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়। কারণ, বুধবার আমরা এমপিরা ২০০১ সালে সংসদে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করছিলাম।


বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, বক্তৃতা দেয়ার সময় পেছন থেকে চিৎকার কানে আসে। পেছন ফিরে দেখি দুজন গ্যালারি থেকে লাফিয়ে পড়ে সামনের দিকে আসছেন। মুখে তাদের ‘তানাশাহি নেহি চলেগা’ স্লোগান। তাদের চেহারা কেমন, দেখতে পাইনি। আসলে ততক্ষণে চারদিকে ধোঁয়া আর ধোঁয়া। খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।


পুরো ঘটনা নিয়ে কংগ্রেসের এমপি কার্তি চিদাম্বরম গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, হঠাৎ করেই ভিজিটর গ্যালারি থেকে দুই যুবক অধিবেশন কক্ষে ঢুকে পড়েন। প্রাথমিকভাবে ভেবেছিলেন দর্শক গ্যালারি থেকে কেউ পড়ে গেছে। দ্বিতীয় ব্যক্তি লাফ দেয়ার পরেই বুঝতে পেরেছিলেন যে এটি একটি নিরাপত্তা লঙ্ঘন ছিল... তাদের হাতে টিনের কৌটা ছিল, যার মধ্য থেকে হলুদ ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। তাদের একজন স্পিকারের চেয়ারের দিকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তারা স্লোগান দিচ্ছিলেন। টিনের কৌটা থেকে নির্গত ধোঁয়া বিষাক্ত হলেও হতে পারে।


তিনি বলেন, এটি একটি গুরুতর নিরাপত্তা লঙ্ঘন বিশেষ করে ১৩ ডিসেম্বর, যেদিন ২০০১ সালে সংসদে হামলা হয়েছিল।


তৃণমূল কংগ্রেস এমপি সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় এটিকে ‘ভয়াবহ অভিজ্ঞতা’ বলেছেন। কেউ তাদের উদ্দেশ্য অনুমান করতে পারেনি... কেন তারা এটা করছে? আমরা সঙ্গে সঙ্গে চলে গিয়েছিলাম কিন্তু এটা ছিল নিরাপত্তার ত্রুটি!


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই দুই যুবক হলুদ রঙের গ্যাস জাতীয় পদার্থ সভায় ছড়িয়ে দেন। এক বেঞ্চ থেকে অন্য বেঞ্চে লাফিয়ে তারা ধোঁয়া ছড়াচ্ছিলেন। গ্যাস দেখে সভায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ওই ধোঁয়া বিষাক্ত হতে পারে, সেই আতঙ্কে ভীত হয়ে পড়েন লোকসভার সদস্যারা। ওই দুই যুবক ‘একনায়কতন্ত্র চলবে না’ বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে দুই সংসদ সদস্য তাদের দ্রুত ধরে নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে তুলে দেন।


দুই অনুপ্রবেশকারীর কাছ থেকে দর্শনার্থী পাস উদ্ধার করা হয়েছে। পাসগুলো কর্ণাটকের মাইসুরুর বিজেপি এমপি প্রতাপ সিমহার অফিস থেকে ইস্যু করা হয়েছিল। নিয়ম অনুযায়ী যে কোনো দর্শনার্থীকে পার্লামেন্টে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার আগে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।


ঘটনার পর ভারতীয় সময় দুপুর ২টায় লোকসভা পুনরায় শুরু হয়। শুরুর আগে স্পিকার ওম বিড়লা সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি ও দিল্লি পুলিশকে সহায়তা করতে বলেছি। দুজনকেই আটক হয়েছে ও তাদের সঙ্গে থাকা জিনিসপত্রও জব্দ করা হয়েছে। সংসদের বাইরে থাকা দুই ব্যক্তিকে (সাগর শর্মা ও ডি মনোরঞ্জন নামে শনাক্ত করা হয়েছে) গ্রেফতার করা হয়েছে।


এদিকে লোকসভার পরিবহন ভবনের সামনে থেকে আরও দুজনকে পুলিশ আটক করেছে। তাদের মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। তারাও একই ধরনের স্লোগান দিচ্ছিলেন।


এর আগে ঠিক ২২ বছর আগে ভারতের সংসদ ভবনে জঙ্গি হামলা করা হয়। এ হামলায় পুলিশ, নিরাপত্তাকর্মী, সাধারণ নাগরিকসহ মোট ১৮ জন নিহত হন। তবে কোনো সংসদ সদস্য নিহত হননি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com