এলিট ফোর্স র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার নেপথ্যে আর্থিক লেনদের অভিযোগ উঠেছিল শুরু থেকেই। এবার এর সত্যতা মিলতে শুরু করেছে এক মার্কিন সিনেটরের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উঠার মধ্যদিয়ে। ঘুষ গ্রহণের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছেন আমেরিকার সিনেটর বব মেনেনডেজ ও তার স্ত্রী নাদিন। বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে মার্কিন প্রশাসনকে এই মেনেনডেজই আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ম্যানহাটনে অবস্থিত দেশটির অ্যাটর্নির কার্যালয় থেকে শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বলা হয়, মেনেনডেজ মিসর সরকারকে স্পর্শকাতর তথ্য সরবরাহ করেছিলেন বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ড্যামিয়েন উইলিয়ামস জানান, এফবিআই-এর তদন্তে মার্কিন সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান নিউ জার্সির সিনেটর রবার্ট মেনেনডেজ এবং তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ ডলার ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, আমেরিকার ম্যানহাটনে অবস্থিত দেশটির অ্যাটর্নির কার্যালয় থেকে এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্রও প্রকাশ করা হয়েছে।
৩৯ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২০১৮ থেকে ২০২২ মধ্যে, নিউ জার্সির সিনিয়র সিনেটর এবং সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান সেনেটর মেনেনডেজ এবং তার স্ত্রী নাদিন মেনেনডেজ তিন মার্কিন ব্যবসায়ী ওয়ায়েল হানা, জোসে উরিবে এবং ফ্রেড ডাইবেসের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, সিনেটর মেনেনডেজ এবং তার স্ত্রী কয়েক লাখ ডলার ঘুষ নিয়ে এই ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করতে এবং মিশর সরকারকে লাভবান করতে তার ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যবহার করেছেন। অভিযোগ করা হয়, হানা, উরিবে এবং ডাইবেস নগদ অর্থ, স্বর্ণ, বাড়ির ঋণ পরিশোধ, নাদিন মেনেনডেজের একটি লোক দেখানো চাকরি, মার্সিডিজ-বেঞ্জ এবং অন্যান্য মূল্যবান জিনিসপত্র সিনেটর এবং তার স্ত্রীকে দিয়েছেন।
এই সিনেটরের বাসভবন থেকে বিপুল সংখ্যক সোনার বার এবং শত শত কোটি ডলার নগদ উদ্ধার করেছে ফেডারেল প্রসিকিউটরেরা। এসব সোনার দাম ২ লাখ ডলার। মেনেনডেজ এবং তার স্ত্রীর নামে তিনটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এগুলো হলো ঘুষ দেয়ার ষড়যন্ত্র, পরিষেবা জালিয়াতির ষড়যন্ত্র এবং সরকারী অধিকারের নাম নিয়ে চাঁদাবাজি করার ষড়যন্ত্র। তবে এসব অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন মেনেনডেজ।
তিনি বলেন, এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক প্রচারণা।
মেনেনডেজ মার্কিন সিনেটের ফরেইন রিলেশন কমিটির ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্য। বাংলাদেশের র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তিন বছর আগে তিনি বেশ কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। তখন থেকেই মেনেনডেজ বাংলাদেশে পরিচিত।
উল্লেখ্য, বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ এনে ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর ট্রাম্প প্রশাসনকে বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এর কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য তৎকালীন ট্রাম্প প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছিলেন সিনেটর রবার্ট মেনেনডেজ।
সেসময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী বরাবর যে ৮ জন সিনেটর চিঠি দেন তার নেতৃত্বে ছিলেন রবার্ট মেনেনডেজ।
বিএনপি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে লবিস্ট নিয়োগ করেছে, তাদের কারো টাকা নিয়ে রবার্ট মেনেনডেজ সেসময় এ চিঠি দিয়েছিলেন কিনা, এটি একটি বড় প্রশ্ন।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]