রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের সব মানুষের জন্য ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করল যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ১৬:২৯
রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের সব মানুষের জন্য ন্যায়বিচারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করল যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর জান্তা সরকারের সংঘটিত নৃশংসতার জন্য ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন বলেন, ভুক্তভোগী ও বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের কাছে গভীরভাবে কৃতজ্ঞ প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য; সেই সঙ্গে এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোর প্রতি, যারা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।


২৫ আগস্ট, শুক্রবার রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকীর এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এ কথা জানান।


বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, মানবিক সহায়তার শীর্ষস্থানীয় একক বৃহত্তম দাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যত্র সঙ্কটে ক্ষতিগ্রস্তদের ২২ হাজার ৬৮০ কোটি টাকার বেশি সহায়তা দিয়েছে। মিয়ানমারজুড়ে সহিংসতা বৃদ্ধি, বিশেষ করে রোহিঙ্গাসহ জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের জন্য ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তুলেছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর থেকে মিয়ানমারে চলমান সহিংসতার জন্য দায়ীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।


তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সকল জনগণের জন্য ন্যায়বিচার এবং জবাবদিহিতার অগ্রগতির জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং একটি গণতান্ত্রিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও শান্তিপূর্ণ ভবিষ্যতের জন্য মিয়ানমারের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে একাত্মতা বজায় রাখবে।


রোহিঙ্গা গণহত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকীতে মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতি


ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস রোহিঙ্গা গণহত্যার ষষ্ঠ বার্ষিকীতে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়: রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশুদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সহিংসতা, ধর্ষণ ও নৃশংস হত্যাভিযানের ছয় বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ। সাড়ে সাত লক্ষ রোহিঙ্গাকে বহনযোগ্য অল্প কিছু জিনিস নিয়ে পালাতে বাধ্য করেছিল শাসকদের এই গণহত্যা। বাংলাদেশের জনগণ সহানুভূতি এবং মানবতার হাত বাড়িয়ে তাদের স্বাগত জানিয়েছিল। প্রায় এক মিলিয়ন উদ্বাস্তুর প্রতি আতিথেয়তা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশের জনগণ। আমরা এই উদারতার প্রশংসা করি।


আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশকে তার এই প্রচেষ্টায় সমর্থন জানাতে সমবেত হয়েছিল। আমেরিকার জনগণ ২০১৭ সাল থেকে এই অঞ্চলজুড়ে উদ্ভূত মানবিক সংকটের প্রতিক্রিয়ায় ২.১ বিলিয়নের ডলারেরও বেশি অবদান রেখেছে। এর ভেতর রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য ১.৭ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ। আমাদের এই সমর্থন অবিচল রয়েছে।


বাংলাদেশ ও এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে আশ্রয় খুঁজে ফেরা রোহিঙ্গারা দীর্ঘকাল ধরে ভুগছে। মর্যাদার সাথে, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাওয়া, সপরিবারে শান্তিতে বাস করা এবং অর্থ ও উদ্দেশ্যপূর্ণ জীবনযাপনের সুযোগ পাওয়া তাদের অধিকার। সেই লক্ষ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি, আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক আদালতের সমর্থনের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ভুক্তভোগীদের জন্য ন্যায়বিচার, নৃশংস অপরাধীদের জন্য জবাবদিহিতা এবং সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।


মিয়ানমারের অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিশ্বের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রান্তিক এই জনগোষ্ঠীর জন্য মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। আমাদের অবশ্যই বাংলাদেশ সরকার এবং রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দানকারী বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখতে হবে। বিশ্বজুড়ে অন্যান্য সংকট যেহেতু সীমিত সম্পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, সেই কারণে রোহিঙ্গারা তাদের আশ্রয়দানকারী জনগোষ্ঠী এবং নিজ পরিবারের অর্থনৈতিক কল্যাণে কীভাবে অবদান রাখতে পারে তা চিহ্নিত করার গুরুত্ব বাড়ছে। এর মাঝে রয়েছে আয়-উৎপাদনমূলক কর্মকাণ্ড এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের সুযোগ, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং তাদের নিজেদের ভবিষ্যতে আরো বড় অবদান রাখার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা সামাজিক সংস্থাগুলোতে তাদের অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা করা। আমরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য টেকসই সমাধান নিশ্চিত করতে সর্বোত্তম চর্চা, ধ্যান-ধারণা এবং সংস্থান বিনিময়ে উন্মুখ।


বর্তমান পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে যাওয়া অনিরাপদ। তাই আমরা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়, পুনর্বাসনের মাধ্যমে দায়িত্ব ভাগ করে নিয়ে রোহিঙ্গাদের দুর্দশার সর্বাঙ্গীন সমাধানে অবদান রাখছি। আন্তর্জাতিক পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় অবদান রাখা অন্যান্য দেশগুলোর উদারতাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আশা করি, ঐতিহ্যগতভাবে পুনর্বাসন দেয়া দেশগুলোর বাইরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই গুরুত্বপূর্ণ প্রচেষ্টায় যোগ দেবে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশসহ এই অঞ্চল থেকে প্রায় ১৩ হাজার রোহিঙ্গাকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।


যেহেতু এই সংকট সপ্তম বছরে পদার্পণ করছে, সমগ্র অঞ্চলজুড়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে বা শেষ করতে সম্ভাব্য সব বিকল্প খুঁজতে আমাদের অবিচল থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com