আনন্দ উপভোগের জন্য বানরের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৩, ২১:২০
আনন্দ উপভোগের জন্য বানরের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক বছর ধরে এক অনুসন্ধান চালিয়ে আনন্দ উপভোগের জন্য বানরকে নির্যাতন ও হত্যা করার ভিডিও তৈরি এবং সেসব ভিডিওর ক্রেতাদের একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছে। অনুসন্ধানে চক্রটির তৎপরতা ইন্দোনেশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত বলে জানা গেছে।


বিবিসি ওয়ার্ল্ড জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশের একটি চক্র শুধুমাত্র উপভোগের জন্য বানরের ওপর বিভিন্নভাবে নিষ্ঠুর কায়দায় নির্যাতন করে। কে কতো নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করে আনন্দ উপভোগ করতে পারেন তার একটি নেটওয়ার্কও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত। বানরকে নির্যাতন করে আনন্দ উপভোগকারী এই চক্র ইউটিউব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী তাদের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ করেছে।


বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে জানা যায়, ইন্দোনেশিয়ায় লম্বা লেজের ম্যাকাও প্রজাতির বানরকে নির্যাতন করার এবং বানরের বাচ্চাকে হত্যা করার ভিডিও দেখার জন্য আমেরিকা, ব্রিটেনসহ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বিকৃত রুচির লোকজন ইন্দোনেশিয়ার কাছ থেকে এসব ভিডিও কিনছে।


নির্যাতনকারী এই চক্র ইউটিউব প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে এসব চিত্র নিয়ে যায় এনক্রিপ্ট করা যোগাযোগ অ্যাপ টেলিগ্রামে। ওই অ্যাপটি প্রাইভেট গ্রুপের মধ্যে তাদের এই বিকৃত রুচির কার্যকলাপ সীমিত রাখে এবং এর গোপনীয়তা রক্ষা করে। ইতোমধ্যে এই চক্রের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলেও জানা গেছে।


বিবিসির সাংবাদিকরা ছদ্ম পরিচয়ে টেলিগ্রামের অন্যতম এরকম একটি গ্রুপে যোগ দেন। ওই গ্রুপে শত শত মানুষ বানরকে নিষ্ঠুর নির্যাতনের জঘন্য সব আইডিয়া শেয়ার করে। পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া ও এশিয়ার আরও কিছু দেশের মানুষকে অর্থের বিনিময়ে এসব কাজ করতে বলে।


বানর নির্যাতনের নিষ্ঠুরতা দেখে আনন্দ উপভোগকারীদের টার্গেট হল লম্বা লেজওয়ালা ম্যাকাও প্রজাতির বানরের বাচ্চার লাঞ্ছনা ও নির্যাতনের ভিডিও বানানো। অনেকসময় বানরের বাচ্চাদের নির্যাতন করতে করতে মেরেও ফেলা হয় এবং সেসব নিষ্ঠুর দৃশ্য ভিডিও ধারণ করা হয়।


বিবিসির ওই অনুসন্ধানী দল খুঁজে বের করেছে ইন্দোনেশিয়ার সেই বানর নির্যাতনকারীদের। যারা নির্যাতনের ভিডিওি আমেরিকা ব্রিটেনসহ অন্যান্য দেশে বিতরণ ও বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া এই অপরাধীদের আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের যেসব ব্যবস্থা রয়েছে সেগুলোরও সাহায্য নিয়েছে।


ওই প্রতিবেদনে আরো জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অন্তত বিশ জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে তদন্ত চলছে। এদের মধ্যে ব্রিটেনের তিনজন নারীও রয়েছে। যাদেরকে পুলিশ গতবছর গ্রেফতার করেছে এবং তদন্তসাপেক্ষে মুক্তিও দিয়েছে। পাশাপাশি আমেরিকার অরিগন অঙ্গরাজ্যের এক ব্যক্তিকে গত সপ্তাহে এ সংক্রান্ত অভিযোগে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।


জানা যায়, আমেরিকায় এ ধরনের ভিডিওর বড় একজন ডিস্ট্রিবিউটর হলেন মাইক ম্যাককার্টনি। পর্দায় তার নাম ব্যবহৃত হয় ‘দ্য টর্চার কিং’। এ নামেই তিনি বেশি পরিচিত। বিবিসির সঙ্গে কথা বলতে রাজি হন এই টর্চার কিং। তিনি বানর নির্যাতন দলে যুক্ত হবার প্রথম দিকের কথা বিবিসিকে বলেন।


ম্যাককার্টনি (‘দ্য টর্চার কিং’) বলেন, ওই গ্রুপে একটা জরিপ চালিয়েছিলাম। জরিপের বিষয় ছিল ‘আপনি কি চান নির্যাতনে একটা হাতুড়ি ব্যবহার করা হোক? আপনি কি স্ক্রুড্রাইভারের ব্যবহার চান?’


এসবের উত্তর নিয়ে যে ভিডিও তৈরি করা হয়েছিল তা ম্যাককার্টনির দেখা সবচেয়ে নিষ্ঠুর ভিডিও।


ম্যাককার্টনি বলেন, ভার্জিনিয়ায় তার বাসায় বাচ্চা বানরকে খাবারের লোভ দেখিয়ে খেতে না দেওয়া থেকে শুরু করে আঙুল কেটে ফেলার মতো অনেক ভিডিও তৈরি হয়েছে তার নির্দেশে।


অনুসন্ধানে আরো তিনজন সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে। এদের একজন হলেন স্টেসি স্টোরি, যিনি আলাবামার বাসিন্দা। অন্যজন স্যাডিস্টিক হিসেবে পরিচিতি। যিনি অন্যের কষ্ট দেখে সুখ পান। আরেকজন হলেন ‘মি.এপ’ নামে পরিচিতি ওই চক্রের হোতা।


মি.এপ বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানান, অন্তত চারটি বানরের মৃত্যু আরও অনেক বানরের নির্যাতনের জন্য তিনিই দায়ী।


অপরদিকে স্টেসি স্টোরির ফোন জব্দ করেন হোমল্যান্ড বিভাগের নিরাপত্তা কর্মকর্তারা। সেখানে তারা প্রায় ১০০টি বানর নির্যাতনের ভিডিও পান। অত্যন্ত হৃদয়বিদারক অত্যাচারের দৃশ্য সম্বলিত ভিডিও তৈরির জন্য তিনি অর্থ দিয়েছেন এমন সাক্ষ্য প্রমাণও পাওয়া যায়।


পুলিশের সূত্র ধরে বিবিসির সাংবাদিক তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তার ফোন হ্যাক হয়েছিল, এই অভিযোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি স্টেসি স্টোরি।


আমেরিকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির চলমান তদন্তে অপরাধের নানা আলামত বিস্মিত করছে তাদের। বিভিন্ন স্থানে আরও অনুসন্ধান চালাচ্ছেন নিরাপত্তাকর্মীরা।


নিরাপত্তা বিভাগেরে এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের অপরাধ করার জন্য কেউ যে মানসিকভাবে তৈরি থাকতে পারে তা আমি ভাবতেই পারি না। আমার ধারণা এটা সবাইকে স্তম্ভিত করবে।


নিরাপত্তা কর্মকর্তা পল উলপার্ট জানান, যারা এসব নির্মম ঘটনার সঙ্গে জড়িত আমরা তাদের দরজায় যে কোনো সময় হাজির হবো। কেউই পার পাবেন না।


তিনি আরো বলেন, আদালত বা জুড়ি মণ্ডলী যারাই এসব ঘটনার বিবরণ পড়বেন তারাই স্তম্ভিত হবেন।


অন্যদিকে ইন্দোনেশিয়ার পুলিশও কয়েকজন অপরাধীকে গ্রেফতার করেছে এবং আদালত তাদের দণ্ড দিয়েছে। এ সংক্রান্ত অপরাধের বিষয় নিয়ে আরও অনুসন্ধান চালাচ্ছে সে দেশের পুলিশ।


অপরদিকে নির্মম এসব ঘটনা জানাজানি হবার পর থেকে বিভিন্ন দেশের প্রাণিপ্রেমী ও পরিবেশকর্মীরা বিষয়টি নিয়ে প্রতিকারে কাজ শুরু করেছেন বলে জানানো হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।


সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com