দু’পাশে দুই বৃহৎ প্রতিবেশী চীন ও ভারত, তার মাঝখানে ছোট্ট দেশ ভুটান। এমন ভৌগোলিক অবস্থান অনন্য হলেও এর জন্য হিমালয় সংলগ্ন দেশটিকে মূল্য দিতে হচ্ছে।
যে দুটি দেশের সাথে চীনের এখনো সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি হয়নি তাদের মধ্যে ভুটান অন্যতম। অন্য দেশটি হচ্ছে ভারত, যাদের সাথে দীর্ঘ সময় হিমালয় সীমান্তে চীনের বিরোধ রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী চীনের প্রভাব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শক্তিশালী এই প্রতিবেশীর সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ভুটানের ওপর ক্রমাগত চাপ তৈরি করছে।
২৭ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমান্ত সংকট সমাধানে চীনের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চায় ভুটান।
কিন্তু চাইলেই কি চীনের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তি করতে পারবে ভুটান? সম্ভাব্য এই চুক্তির জন্য তাদের আরেক বড় প্রতিবেশী ভারতের অনুমোদন প্রয়োজন। কারণ ভারত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বাণিজ্যিক সহায়তা দিচ্ছে ভুটানকে। এ ছাড়া ভারত কখনোই চাইবেনা যে তাদের কূটনৈতিক সীমান্তের নাকের ডগায় চীনের সীমান্ত চলে আসুক।
এ ছাড়া চীনের সঙ্গে হিমালয়ের উত্তর ও পশ্চিমে ভূখণ্ড নিয়ে বিরোধ রয়েছে ভুটানের। কিন্তু সবচেয়ে বড় সমস্যা ডোকলাম মালভূমি নিয়ে। এটি ভারত, ভুটান ও চীনের সংযোগস্থলের (ত্রি-সন্ধি) খুবই কাছাকাছি অবস্থিত। ভুটান ও চীন উভয়ে ডোকলাম মালভূমিকে নিজেদের বলে দাবি করে এবং ভারত থিম্পুর দাবিকে সমর্থন করে।
ভারতের অবশ্য থিম্পুকে সমর্থন করার নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডোকলাম মালভূমি ভারতের কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারত মনে করে, চীন যদি ওই অঞ্চলে কোনো ধরনের আধিপত্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়, তবে সেটি তাদের শিলিগুড়ি করিডোরের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারে। চিকেনস নেক নামে পরিচিত করিডোরটি ২২ কিলোমিটার চওড়া একটি এলাকা, যা ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোকে সংযুক্ত করেছে।
সম্প্রতি ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং বেলজিয়ান পত্রিকা লা লিব্রেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে তার দেশের সীমাবদ্ধতাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, এই সমস্যার সমাধান শুধু ভুটানের একার ওপর নির্ভর করে না। আমরা তিনটি পক্ষ। এখানে বড় বা ছোট দেশ বলে কিছু নেই, তিনটি সমান দেশ, তিনটি সমান অংশ। আমরা প্রস্তুত। বাকি দুই অংশীদার প্রস্তুত হলেই আলোচনা শুরু করতে পারব।
ভুটান ও চীন ১৯৮৪ সাল থেকে সীমান্ত নিয়ে আলোচনা চালিয়ে আসছে। দেশ দুটি নিজেদের মধ্যে একটি বা দুটি বৈঠক করেই কিছু সীমানা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবে বলে আশাপ্রকাশ করেন লোটে শেরিং। এসময় ভুটানের ভূখণ্ডে কোনো চীনা অনুপ্রবেশ ঘটেনি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ভুটানিজ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য ভারতের জন্য সতর্কবার্তা বলে মনে করছেন অনেকে, বিশেষ করে গণমাধ্যমগুলো। ভুটান ও চীনের মধ্যে ত্রি-সন্ধি সংক্রান্ত চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো বিনিময় সমঝোতা হতে পারে, এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেক ভাষ্যকার। কেউ কেউ বলছেন, ডোকলামের দাবি নিয়ে ভুটান যথেষ্ট চাপ প্রয়োগ করছে না।
লোটে শেরিংয়ের বক্তব্য নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পরে চলতি মাসের শুরুর দিকে মন্তব্যের ব্যাখ্যা দেন ভুটানিজ প্রধানমন্ত্রী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, আমি নতুন কিছু বলিনি এবং [ভুটানের] অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে শেরিংয়ের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখে ভুটানের অনেকেই বিস্মিত হতে পারেন। তবে চীন মনে করছে, দিল্লির সমর্থন ছাড়া থিম্পু কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে সমস্যার মুখে পড়বে।
এদিকে ডোকলাম উপত্যকার কৌশলগত গুরুত্বের কারণে এনিয়ে ভারত কোন পরিবর্তন চায় না। অন্যদিকে ডোকলামের উপর দাবি ছেড়ে দেবার জন্য চীনের উপর চাপ প্রয়োগ করা ভুটানের মতো একটি দেশের পক্ষে খুবই কঠিন।
বিশ্বজুড়ে মানুষ যখন ‘এশিয়ান সেঞ্চুরি’র কথা বলছে, তখন চীন এবং ভারতের মতো দুটো বৃহৎ দেশের সাথে সীমান্ত ভুটানের জন্য একটি ভালো অবস্থান তৈরি করতে পারে। কিন্তু ভারত এবং চীনের মধ্যে যে উত্তেজনা বিরাজমান, তাতে ভুটানের জন্য বিষয়টি নাজুক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
সূত্র: বিবিসি
বিবার্তা/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]