
সাংঘাতিক ঝুকিপুর্ণ অবস্থায় ৩২ তলা কন্ডোমিনিয়ামটির রঙের কাজ করছে কয়েকজন শ্রমিক।
১৭ তলায় এমনি অবস্থায় আমার সাথে এ দু'জনের দেখা। আমার মুখে বাংলা কথা শুনে ওদের ধারণা সত্যি হলো। অবসান হলো টেরেসে রোদে শুকাতে দেয়া লুঙ্গি বিতর্কের।
নিশ্চিত হলো এই ভেবে যে এমন পরিধেয় শুধু বাঙালিরাই পড়ে। সে কলকাতারই হোক আর বাংলাদেশেরই হোক। ভরসা পেলো।
আগ বাড়িয়ে জানতে চাইলো আমি এখানে কেন? কী করি? দেশের বাড়ি কোথায়? প্রশ্নের পর প্রশ্ন! চোখেমুখে খুশি আর হতবাকের চিহ্ন!। আমি দেখলাম শুণ্যে দুলছে সুতোয় বাধা ওদের শরীর।
এ যেনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে মাটি থেকে প্রায় ২০০ ফিট ওপরে ভাসছে ওদের জীবন। আল্লাহ না করুন, পড়ে গেলে! হায় আল্লাহ!
কথার ফাকে ফ্রিজ খুলে দুটো কোকের ক্যান দু'জনের হাতে দিয়ে একে একে ওদের সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম।
আক্ষেপ করে টাঙ্গাইলের মোনায়েম বললো, "পড়ালেখা করিনি স্যার, লেবারের চাকুরী নিয়ে ১০ বছর ধরে সিঙ্গাপুর পইড়া রইছি। এহনে আছি এসএস গ্রুপে। বেতন যা দেয় তাই দিয়া দেশে বউ-বাচ্চা আর আমি এহানে চলতাছি। কোনোরকম খাইয়া পইড়া আছি আর কি!"
মেহেরপুরের খায়রুল বললো, "আমাগো কাজ অইলো বাইরের পাশ রঙ দিয়া চকচক কইরা দেওনের। চক চক না করলে এক ট্যাহাও দিব না"।
মোনায়েমের ফোন আসে। ঝুলন্ত অবস্থায় ফোন ছেড়ে মোনায়েম ইশারায় বলছে, 'বসের ফোন। যাওন লাগবো। ক্যামেরায় দেখতাছে আমরা কথা কইতাছি। কাম শুরু করন লাগবো। নইলে আওয়ার কাইট্টা ফালাইবো'।
যাওয়ার আগে কি বলে ওদের সাত্বনা দিব ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না।
ফোন নাম্বার দিয়ে বললাম, শোনো মোনায়েম-খায়রুল, 'পার্থক্য কিছু নাই। লেবার আমরা সবাই। তোমরা ওয়ালের বাইরে রঙ করে তা চকচক করে দিচ্ছো আর আমরা তরুণ প্রজন্মের মনটাকে ঘসা-মাজা করে আলোকিত করার চেষ্টা করি। কাজ কিন্তু একই। তবে শুধু মনিটরিং-এর প্রভাবে তুমি সদা তটস্থ থাকো আর এর অভাবে আমরা আজ উৎছন্নগ্রস্থ জাতিতে পরিণত হয়েছি। আফসোস...!
ক্রেনের সুইচ চেপে দু'জন রশি বাধা অবস্থায় উপরে উঠে যায়। ঠোঁটের এক কোনায় মৃদু হাসি দেখে মনে হলো কথাটা বোধ হয় ওদের ভালো লেগেছে। ওরা শুন্যে মিলিয়ে যেতেই ভাবনায় আসে কয়েকটি বাক্য যা কবিতা হয়ে আবেগকে উৎসারিত করে-
"তোমাদের কষ্টার্জিত রেমিটেন্সে আমাদের আলিশান কন্ডোমিনিয়াম
তোমাদের সুতোয় ঝুলানো জীবনের বিনিময়ে পড়েছি চকচকে পরিধান।
তোমরা পাঠাচ্ছো রেমিটেন্স দেশে আর আমরা করছি পাচার
ধ্বংস তো হবেই জ্ঞানপাপীদের সমাজ, সেদিন হবেই এর বিচার।
মানুষ তো তোমরাই, দিয়ে গেলে সব, নিজের দেশের ত্বরে
গর্ব আমার শত কষ্টেও তোমরা দেশটাকে দিলে ভরে"।
লেখক : অধ্যাপক ড. মো. নাসির উদ্দিন মিতুল, ডিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ( ফেসবুকের ওয়াল থেকে)
সিঙ্গাপুর, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
পদ্মা লাইফ টাওয়ার (লেভেল -১১)
১১৫, কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ,
বাংলামোটর, ঢাকা- ১০০০
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]