শিরোনাম
মেয়েরা যেন ধর্ষকদের আতংকে বড় না হয়
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২০, ১৮:১১
মেয়েরা যেন ধর্ষকদের আতংকে বড় না হয়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আমি আমার ঘর থেকেই প্রথম প্রতিবাদ শুরু করলাম।বাড়ির বাহিরের রেপিস্টদের নামে না হয় মামলা করলেন! এলাকাবাসী না হয় কিছু দেখে থাকল, তাই সাক্ষীও পেয়ে গেলেন! কিন্তু ঘরের মধ্যে নিজেদের সো কল্ড আত্মীয়, প্রতিবেশীদের দ্বারা যে যৌন নিপীড়ন এর স্বীকার হয় ঘরের ছোট্ট মেয়েটা, সদ্য কৈশোরে পা দেয়া বোনটা তা খেয়াল রেখেছেন?? তাদের বলতে দিয়েছেন? সেই আত্মীয়দের পুলিশে দিয়েছেন?


নাকি লোক জানাজানি হলে বিয়ে দেওয়া যাবে না, লোকে কি বলবে বলে নির্যাতিত মেয়েদের চুপ করে থাকতে বলেছেন? শুরুটা তো তাহলে আপনারাই করেছেন। জ্বী, আপনাদেরই বলছি। আজ আমি সব নোংরামি এক্সপোজ করব। আর চুপ থাকা নয়।


যৌন নিপীড়কের, রেপিস্টদের সমাজে বাঁচার অধিকার নেই। তাহলে আমার মান সম্মান কমবে কেন? আমি কেন লজ্জা পাব? লজ্জা পাওয়া উচিত সেই কুলাঙ্গারদের এবং সেই কুলাঙ্গারদের পরিবারের! আমার নয়, আমার পরিবারের নয়।


(*আমার লেখা আমার আত্মীয়দের কেউ পড়ে থাকলে, অবাক হলে বা ভাষার প্রয়োগ ঠিক না মনে হলে, আমার কিছু যায় আসে না। যারা এমন আত্মীয়দের পক্ষের সুর টানতে চায়, বা মনে ধারণ করে যে প্রকাশ করলে বংশ মর্যাদা হানি হয়, তাদেরকে আমিও আত্মীয় বলে মনে করিনা। এমন আত্মীয়ের প্র‍য়োজন নেই, যারা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে রেপিস্ট টাইপ লোকদের ব্যাপারে মৌন সাপোর্ট দেয় চুপ থেকে। আপনারা রেপিস্ট টাইপ লম্পট, অপরাধীদের নিয়ে যদি গর্বিত হন, তাহলে আপনার মুখে এক দলা থু থু দিলাম!)


আমাদের শৈশব, কৈশোর আতংকে কেটেছে যার জন্য সে কিন্তু বাইরের কেউ নয়! সে হল মীর সোহরাব ওরফে "সৌহার্দ্য" নামের একজন কুলাঙ্গার, যে কিনা সম্পর্কে আমাদের মামা লাগে। এই শুয়োরটা কিন্তু অশিক্ষিত না। বরং এতই শিক্ষিত যে এখন খুলনা ভার্সিটির প্রফেসর! ক্যাডেটে পড়াশুনা করেছে। এখন বিয়ে করে বউ, বাচ্চা নিয়ে খুব সুখের সংসারও করে বেড়াচ্ছে..নামায পড়তে পড়তে এখন কপালে দাগও বসিয়ে ফেলেছে!


শুয়োরটা বাসায় এলেই আমরা সব বোন ভয়ে, আতংকে দরজা বন্ধ করে বসে থাকতাম। না যাওয়া পর্যন্ত খুলতে চাইতাম না। কিন্তু ঐ যে! "আত্মীয়"! আমরা নাকি অসামাজিক হয়ে যাচ্ছি, মেহমান এলে বেয়াদবের মত দরজা লাগিয়ে বসে থাকি এই দোষে আমাদের শেষমেশ দেখা করতে বাধ্য করা হত। আদরের উছিলায় আমাদের ছোট্ট শরীরের সব জায়গায় ঐ সৌহার্দ্য নামক জানোয়ারটার নোংরা হাত ঘুরে বেড়াত।


আম্মু মেহমানদারির জন্য রান্নাঘরে বা চোখের বাইরে গেলেই শয়তানটা ড্রেসের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে নোংরামি করতেও এক সেকেন্ড দেরী করত না! না, রেইপ হইনি। কারণ, বাসা ফাঁকা থাকত না। যদি ফাঁকা থাকত তাহলে নিশ্চিতভাবেই রেইপ হয়ে যেতাম!আমি কেন, আমার অন্যান্য সমবয়সী মেয়ে কাজিনদের সাথেও একই কাজ করত- দুই একজন বাদে (যারা বয়সে বড় ছিল ও প্রতিবাদ করার মত সাহসী ছিল), তাও আমার চোখের সামনেই!! এত কুৎসিত সেই দৃশ্য! ছিঃ


আমি সেই ছোট বয়সেই দুয়া করতাম যেন শয়তানটার যেন উচিত শিক্ষা হয়। ওর উপরে যেন গজব পড়ে। কিন্তু কিছুই হয়নি। ভুক্তভোগীরা সবাই পরিবারের কারণে চুপ ছিল। এরপর শূয়োরটার বিয়ে হল। আমরা একটু খুশি হলাম যে এখন তো বিয়ে হয়েছে, হয়তো এখন সুধরে গেছে। কিন্তু না! বিয়ের পর বউ নিয়ে বাসায় বেড়াতে এসেও বউ এর চোখের আড়াল হতে না হতেই শুয়োরটার নোংরামি আবার শুরু! জানি না ক্যাম্পাসেও না জানি কত শত নারী শিক্ষার্থীর যৌন নিপীড়নের কারণ এই শয়তানটা! এদের মত কুলাঙ্গার যখন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর হয়, তখন বুঝতে হবে দেশের শিক্ষাঙ্গন কতটা অনিরাপদ নারীর জন্য!


তবে আমি অবশেষে এই বদমাইশ টার বিরুদ্ধে অন্তত আওয়াজ উঠাতে পেরেছি। আমার বহু কথিত " সাহসী" কাজিনরা কিন্তু আজ অবধি চুপই আছে এই ব্যাপারে। তারা ফেসবুকে ধর্ষণের বিচার চায়। কিন্তু নিজের সাথে হয়ে যাওয়া অবিচারের কথা, আতংকে কাটানো শৈশবের কথা আজও সবার সামনে বলতে পারে না!


আলহামদুলিল্লাহ, যে আমি একজন ভাল মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। বিয়ের আগে আমি এর সবটাই উনাকে বলি। উনি এসব শুনে এতই ক্ষেপে গেল যে আব্বু আম্মুকে সাফ জানাল, যেদিনই শুয়োরটাকে সামনে পাবে, সেদিনই বেধরক পেটাবে, পুলিশে সোপর্দ করবে, আশেপাশে কে আছে দেখবে না। এবং অতি অবশ্যই এর বিহিত করতে হবে। এর পরিবারকে এখনই জানাতে হবে, সালিশ করতে হবে। শুধু তাই না! যদি এই অসভ্যটাকে আত্মীয়তার খাতিরে বিয়েতে দাওয়াত দেয়া হয়, তাহলে ও বিয়েই করবে না!


এরপর অসভ্যটার মা, বাবাকে ডেকে এনে তাদের সোনার টুকরা ছেলের কুকীর্তি বলা হল। সৌহার্দ্য নামক কীটটাকে আব্বু ফোন দিয়ে পুলিশে দেয়ার কথা বলল। সেদিন কুকুরটা একদম চুপসে গিয়েছিল। মুখে কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিল না। এতদিন পর এসে তার নোংরা কুকীর্তি যে এভাবে সবার সামনে বেড়িয়ে পড়বে, তা হয়তো ভাবতে পারেনি।


আমি আমার জায়গা থেকে যতটুক পেরেছি প্রতিবাদ করেছি। সামাজিকভাবে এদের বয়কট করেছি। আজ ফেসবুকেও প্রকাশ করলাম। কারণ, আমি লজ্জিত নই। বরং এদের যারা ভাল মানুষ বলে মনে করে, তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। নিজের ঘরে মেয়ে আছে সবার, সে চিন্তা করে একে বয়কট করা উচিত। লজ্জা কেবলই শয়তানদের, আমাদের নয়।


বাইরে প্রতিবাদ করার আগে নিজের পরিবারের কন্যা সন্তানকে জিজ্ঞেস করুন তার জীবনে এমন কিছু ঘটে থাকলে সে যেন নির্ভয়ে বলে। সবাই সবার জায়গা থেকে, ঘরের ভেতর থেকেই আগে প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। আর একটি মেয়েও যেন আতংকে বড় না হয়।


(জারিন তাসনিমের ফেসবুক থেকে)


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com