শিরোনাম
আমাদের জাতির একাংশ এখনো বর্বর ও অসভ্য
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২০, ১৬:৩৮
আমাদের জাতির একাংশ এখনো বর্বর ও অসভ্য
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইদানীং অবস্থাদৃষ্টে আমার মনে হয়, জাতি হিসেবে না হলেও, আমাদের জাতির একাংশ এখনো বর্বর ও অসভ্য। আগে আমরা নিজেদেরকে অনেক মানবিক এবং আমাদের সমাজকে অনেক সুসংহত সমাজ বলে দাবি করে পশ্চিমা বিশ্বকে ধুয়ে দিয়েছি। করোনা সে থলের বিড়াল বের করে দিয়েছে। জন্মদাতা বাবার জানাজার আয়োজনটাও পুলিশকে করতে হয়। সেলুকাস!


আইন মানার বিষয়, নাকি প্রয়োগ করার বিষয়- তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক করা যায় বটে, তবে সভ্য দেশে আইন মানা হয়। আর জনগণের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্রাংশ আইন মানা থেকে বিচ্যুত হয় এবং তাদের উপর আইন প্রয়োগ করা হয়। আর আমাদের দেশের বেলায় ঘটে উল্টোটা। করোনা মহামারি নিয়েই দেখি না কেনো। করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বই এখন কঠিন সময় অতিক্রম করছে। যেহেতু করোনা ভাইরাস সংক্রামক, তাই এ থেকে মুক্তির প্রধান উপায় হচ্ছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। কিন্তু আমরা কি তা মানছি, নাকি আমাদের উপর আইন প্রয়োগ করতে হচ্ছে?


সংক্রামক রোগ বিস্তার রোধে বাংলাদেশে একটি আইন আছে, যার নাম 'সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮। এ আইনের ১(ট) ধারা অনুযায়ী কেউ সংক্রামক রোগ বহন করতে পারে বলে সন্দেহ হলে স্বাস্থ্য অধিদফতর তাকে নির্দিষ্ট হাসপাতাল, অস্থায়ী হাসপাতাল, স্থাপনা বা ঘরে অন্তরীন রাখতে পারে। মূলতঃ এটাই হচ্ছে কোয়ারেন্টাইন (Quarantine)। প্রয়োজনে তাকে পৃথককরণ (Isolation) করেও রাখা যায়। অথচ ফেসবুকে দেখেছি, কোয়ারেন্টাইনে একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা কি বাজে আচরণটাই না করলো! এখন তিনি কোথায়?


এ আইনের ১১ ধারা অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সরকারের অনুমোদনক্রমে দেশের যেকোনো এলাকা, ঘর, দ্রব্যাদি বা যানবাহনকে সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা করতে পারেন। এছাড়াও মহাপরিচালক বা তার কাছ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি (অধিকাংশ ক্ষেত্রে সিভিল সার্জন) রোগ বিস্তার নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে যেকোনো যায়গায় যে কোনো ব্যক্তির গমনাগমন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।


২৪, ২৫ এবং ২৬ ধারায় অপরাধ ও শাস্তির বিধান রয়েছে। কেউ রোগ গোপন করলে ২৪ ধারা অনুযায়ী ৬ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। সংক্রামক রোগ বিষয়ে দায়িত্ব পালনকালে কেউ বাধা দিলে সে ব্যক্তি ২৫ ধারা অনুযায়ী ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। কেউ সংক্রামক রোগ সম্পর্কে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে ২ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।


আপনি যদি আইনের চোখকে ফাকি দিতে চান, তাহলে আসুন ধর্মের কথা বলি। আপনি যদি মুসলমান হয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই পবিত্র কোরান আর হাদিস মেনে চলবেন। দেখি তাহলে মহামারি সম্পর্কে পবিত্র কোরান আর হাদিস কি বলে।


রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, 'যখন কোনো এলাকায় মহামারি ছড়িয়ে পড়ে তখন যদি তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান থেকে বের হবে না। আর যদি তোমরা বাইরে থাকো, তাহলে তোমরা সেই আক্রান্ত এলাকায় যাবে না (তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫)। এটাই তো লকডাউন। আমরা আজকে বলছি, আর ইসলামে দেড় হাজার বছর আগেই বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু আমরা কি তা পালন করছি? যদি পালন করতাম, তাহলে নিশ্চয়ই করোনা মহামারি আকার ধারণ করতে পারতো না। কারণ সূরা শুরার ৩০ নম্বর আয়াতের একটি অংশে মহান আল্লাহপাক বলেছেন, "আর তোমাদের কৃতকর্মের কারণেই তোমাদের উপর বিপদ নেমে আসে।" এখানে আমাদের কৃতকর্ম কি? লকডাউন অমান্য করে ইচ্ছে মতো ঘোরাঘুরি, দল বেধে চলাফেরা, কারণে-অকারণে হাটবাজারে যাওয়া এগুলো কি তিরমিজি, হাদিস: ১০৬৫ অমান্য নয়? আর এ কারণেই বিপদ আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে। সূরা শুরার ৩০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাই বলেছেন।


যতক্ষণ না করোনা ভাইরাস নির্মূল হয়, ততক্ষণ আমাদের সতর্ক থাকতেই হবে। সূরা আরাফের ৯৯-১০০ নম্বর আয়াতে বর্ণিত আছে,"এসব জনপদের অধীবাসীরা কি এ বিষয়ে নিরাপদ হয়ে গেছে যে, দুপুর বেলায় খেলাধূলায় মত্ত থাকাবস্থায় তাদের উপর আমাদের শাস্তি নেমে আসবে না?" করোনামুক্ত হওয়ার আগেই আনন্দ ফূর্তিতে মেতে উঠলে বিপদ আসবেই। বর্ণিত এ আয়াতে আল্লাহপাক তা স্পষ্টভাবেই বলে দিয়েছেন।


মুসলিম, হাদিস: ৪২২ এ বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, "পবিত্রতা ইমানের অংশ "। আমরা কি সব সময় পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকি? তাই যদি থাকি, তাহলে তো করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে না। আমরা কি এই হাদিস মেনে নিজেদেরকে পরিচ্ছন্ন রাখছি? মেনে কি চলছি ধর্মীয় এইসব বিধানাবলী? সহিহ বুখারি: ৫৭২৯ এ বর্ণিত আছে, মহামারি দেখা দিলে হযরত ওমর (রা.) গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সফর স্থগিত করেছেন। আর আমরা চায়ের দোকান পর্যন্ত সফরও স্থগিত করতে পারি না।


যারা আইন অমান্য করে, তার অপরাধী। আর যারা ধর্মীয় বিধান অমান্য করে, তার পাপী। তাহলে আসুন আমরা মিলিয়ে দেখি, আমাদের আশেপাশে কে কে অপরাধী, কে কে পাপী আর কে কে উভয়ই।


আর একটি কথা। করোনায় যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, হচ্ছেন বা হবেন, কেউই নিজে ইচ্ছে করে আক্রান্ত নন। এর থেকে সুস্থ হওয়ার শতকরা হারও কিন্তু অনেক। ৪-৫% লোক মৃত্যুবরণ করেন। আনাস ইবনে মালিক বর্ণিত একটি হাদিস এবং আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৩৩) একটি হাদিসে বর্ণিত আছে যে, মহামারিতে মৃত ব্যক্তি শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন। তাই দূরের কারো না হোক, নিজের পরিবারের সদস্য কেউ করোনায় শহীদ হলে, যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করে দয়া করে জানাযায় শরীক হতে কার্পণ্য করবেন না।


আসুন ভীত না হয়ে আইন এবং ধর্মীয় বিধানানুযায়ী করোনা মোকাবেলা করি। নিজে ভালো থাকি, পরিবারকে ভাল রাখি, সমাজকে ভাল রাখি, দেশকে ভাল রাখি, বিশ্বকে ভাল রাখি। আল্লাহ সবার সহায় হোন।


চৌধুরী মঞ্জুরল কবিরের ফেসবুক থেকে পাওয়া


বিবার্তা/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com