আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৮৭ কোটি টাকা
প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৫:৩৯
আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ৮৭ কোটি টাকা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মাঝেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া স্থলবন্দরে রপ্তানি আয় বেড়েছে প্রায় ৮৭ কোটি টাকা। তবে ভারত থেকে পণ্য আমদানি অনিয়মিত হওয়ায় কমেছে রাজস্ব আদায়। এছাড়া গেল মে মাসে বাংলাদেশ থেকে ৬ ধরনের পণ্য আমদানিতে ভারত সরকারের দেয়া নিষেধাজ্ঞার কারণে নতুন অর্থবছরে রপ্তানি বাণিজ্য প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে রপ্তানি আয়ে। তবে, রপ্তানি বাণিজ্য বাড়াতে ভারতে নতুন পণ্যের বাজার খোঁজার পরামর্শ বন্দর ও শুল্ক কর্তৃপক্ষের।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৪ সাল থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য চলছে। প্রতিদিনই হিমায়িত মাছ, রড, সিমেন্ট, প্লাস্টিক আসবাবপত্র, ভোজ্য তেল, আটা ও ময়দা, প্রক্রিয়াজাত খাবার, পিভিসি সামগ্রীসহ বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয় ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয় হিমায়িত মাছ- যা মোটর রপ্তানির প্রায় অর্ধেক।


মূলত, আমদানির চেয়ে রপ্তানি বেশি হওয়ায় আখাউড়া স্থলবন্দরটিকে রপ্তানিমুখী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সবমিলিয়ে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি হয় আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। তবে গেল বছর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর প্রথম দিকে রপ্তানি বাণিজ্য কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতীয় উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো সেখানকার ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশি পণ্য আমদানি না করতে চাপ প্রয়োগ করে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে গতি আসে রপ্তানি বাণিজ্যে।


আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের দেয়া তথ্যমতে, বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানি হয়েছে ৫১৪ কোটি ৩৪ লক্ষ টাকার পণ্য। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়েছে হিমায়িত মাছ, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্লাস্টিক আসবাবপত্র, সিমেন্ট ও পিভিসি সামগ্রী। একই সময়ে ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৭ কোটি ৩১ লক্ষ ৮২ হাজার টাকার জিরা, ডাল ও কাজুবাদাম। এ থেকে সরকার রাজস্ব আয় করেছে ৪ কোটি ১৬ লক্ষ ৮৪ হাজার টাকা।


এর আগে ২০২২৩-২৪ অর্থবছরে ভারতে রপ্তানি হয় ৪২৭ কোটি ৮৮ লক্ষ ৭২ হাজার টাকার পণ্য। ওই অর্থবছরে আমদানি হয় ৭ কোটি টাকার পণ্য। যা থেকে সরকার রাজস্ব পায় ৪ কোটি ৬৮ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা।


স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গেল মে মাসে ভারত সরকার ত্রিপুরা, আসাম, মিজোরাম ও মেঘালয়ের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক, প্রক্রিয়াজাত খাবার, ফলের স্বাদযুক্ত জুস, তুলা, প্লাস্টিক, পিভিসি সামগ্রী ও কাঠের ফার্নিচার আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এসব পণ্যের মধ্যে তৈরি পোশাক ও কাঠের ফার্নিচার ছাড়া বাকি সবকটি পণ্যই নিয়মিত রপ্তানি হতো আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। এসব পণ্যগুলো রপ্তানির বন্ধের ফলে প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে রপ্তানি বাণিজ্য।


আখাউড়া স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক শাহনেওয়াজ শানু বলেন, যে-সব পণ্য বন্দর দিয়ে আমদানির অনুমতি আছে- তার অধিকাংশেরই আমাদের অঞ্চলে চাহিদা না থাকায় আমরা পণ্য আমদানি কম করি। সেজন্য আমরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছি যেন আমাদেরও সব পণ্য আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। এটি হলে আমাদের যখন যে পণ্যের চাহিদা তৈরি হবে, তখন সেই পণ্য আমদানি করতে পারব। এর মাধ্যমে বন্দরে যেমন কর্মচাঞ্চল্য ফিরবে, তেমনি সরকারেরও রাজস্ব আসবে।


আখাউড়া স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি নেসার উদ্দিন ভূইয়া বলেন, নানা কারণে দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে রপ্তানি বাণিজ্য। আমরা নতুন পণ্যের বাজার খোঁজার চেষ্টা করছি। তবে নিষেধাজ্ঞায় থাকা পণ্যগুলোর চাহিদা ছিল বেশি। সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে - ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত যেন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আখাউড়া স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার রীমা আক্তার বলেন, আমরা বরাবরই ব্যবসায়ীদের রপ্তানি বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করি। এজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতাও দেয়া হয় তাদের। যেহেতু কিছু পণ্যে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেজন্য ব্যবসায়ীদের উচিত নতুন নতুন পণ্যের বাজার খোঁজা। এতে করে রপ্তানি বাণিজ্য আরও চাঙা হবে। তবে সব পণ্য আমদানির অনুমোদনের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।


বিবার্তা/নিয়ামুল/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com