ডলারের দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের সেঞ্চুরি
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৯:২২
ডলারের দামে বাংলাদেশ ব্যাংকের সেঞ্চুরি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ডলারে বিপরীতে টাকার মান কমাল বাংলাদেশ ব্যাংক। এক টাকা বাড়িয়ে ডলারের দাম ১০০ টাকা করা হয়েছে। এখন বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি পণ্য আমদানিতে যে ডলার বিক্রি করবে, তার প্রতি ডলারের মূল্য হবে ১০০ টাকা। এক বছর আগেও এই ডলারের দাম ছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা।


জরুরি পণ্য আমদানির জন্য নতুন দামে দেশের ব্যাংকগুলোর কাছে ৭৮ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বাজারের দামের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ করতে নতুন করে ডলারের দাম বাড়ানো হয়েছে। ডলারের দাম সমন্বয় এটা নিয়মিত কার্যক্রম।


এর আগে ১ জানুয়ারী, রোববার ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) শীর্ষ নেতারা রফতানি আয়ের ক্ষেত্রে ডলারের দাম আরও ১ টাকা বাড়িয়ে নতুন দর নির্ধারণ করেন।


বৈঠক প্রসঙ্গে এবিসির চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমনি) সেলিম আর এফ হোসেন বলেন, রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে, তা কাছাকাছি নিয়ে আসা হবে। ফলে নতুন করে আরও এক টাকা বাড়ানো হয়েছে। এখন থেকে রফতানি আয় ব্যাংকগুলো সংগ্রহ করবে ১০২ টাকা করে। রফতানি আয় বাড়ানো হলেও প্রবাসী আয়ে ডলারের দাম আগের মতো ১০৭ টাকা রয়েছে।


ডলার-সংকট প্রকট হলে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম নির্ধারণের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ায়। এই দায়িত্ব দেওয়া হয় ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন এবিবি ও বাফেদার ওপর। এরপর দুই সংগঠনের নেতারা বিভিন্ন লেনদেনে ডলারের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ ক‌রে আস‌ছেন।


শুরুতে রফতানি আয়ে ডলারের সর্বোচ্চ দাম ছিল ৯৯ টাকা ও প্রবাসী আয়ে ১০৮ টাকা। আর ডলারের পাঁচ দিনের গড় খরচের চেয়ে ১ টাকা বেশি দামে আমদানি দায় শোধ করতে বলা হয়। পরে বিভিন্ন সময় দফায় দফায় বৈঠক করে নতুন দর নির্ধারণ করা হচ্ছে।


সংকট কাটাতে রিজার্ভ থেকে প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রির ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন ৩৩ বিলিয়নের ঘরে। আগামী সপ্তাহের শুরুতে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন বা আকুর পাওনা এক বিলিয়ন ডলারের বেশি পরিশোধ করতে হবে। তখন রিজার্ভ আরও কমে যাবে।


এদিকে রিজার্ভ ৩৩.৮৩ বিলিয়ন ডলার হলেও প্রকৃত ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ আরও ৮ বিলিয়ন কম। কারণ রিজার্ভের অর্থ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলসহ বিভিন্ন খাতে এ পরিমাণ ডলার বিনিয়োগ করা আছে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে যদি রিজার্ভ হিসাব করা হয় তাহলে এটি আরও আট বিলিয়নের মতো কমে যাবে। সেই হিসাবে এখন প্রকৃত রিজার্ভ আছে ২৫ বিলিয়ন ডলার। যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার।


বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক মাসে রিজার্ভ কমে এ পর্যায়ে নেমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ২০১৮ সালে তা বেড়ে হয়েছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে আরো বেড়ে ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ৪০ বিলিয়ন ডলারের নতুন মাইলফলক অতিক্রম করে দেশের রিজার্ভ।


এরপর তা বেড়ে ২০২১ সালের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়; রিজার্ভের এ অংক ছিল ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এরপর আর রিজার্ভ ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। মহামরি পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব, জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, এর সঙ্গে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর দেশে তীব্র ডলার সংকট দেখা দেয়। সংকট মোকাবিলায় রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে।


কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ডলারের বিক্রির পরিমাণ ছিল ৬০৫ কোটি। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড ৭৬২ কোটি ১৭ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগের অর্থবছরে (২০২০-২১) কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৭৯৩ কোটি ডলার কেনে।


বিবার্তা/মাজহারুল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com