যে মানুষটা একটা দেশের জন্ম দিয়েছে, যে মানুষটার জন্মদিন দেশের সবচেয়ে বড় জন্মদিন হিসেবে স্বীকৃত, যে মানুষটার জন্মদিন এলে উৎসবে মেতে উঠে পুরো জাতি, দেশের আনাচে-কানাচে সর্বত্রই পালিত হয় তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠান, অথচ তাঁর পঠিত বিভাগে পালিত হয় না তাঁর জন্মদিনের অনুষ্ঠান!
বলছি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে এ মহান মানুষটি জন্মগ্রহণ করেন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে।
গত একদিন আগে ১৭ মার্চ (শনিবার) ছিল এ মহান মানুষটির ৯৮তম জন্মবার্ষিকী। ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় সারাদেশে এ দিনটি পালিত হয়েছে। ব্যতিক্রম হয়নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেক কাটা, ভোরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো, আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্গণ প্রতিযোগিতা, হলে হলে দোয়া ও মুনাজাত, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান প্রভৃতির আয়োজনে মুখরিত ছিল ঢাবি ক্যাম্পাস।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসে ঢাবি ক্যাম্পাস উৎসবে মাতোয়ারা থাকলেও তাঁর পঠিত আইন বিভাগে কোনো আয়োজন ছিল না। আর এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভ দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আইন বিভাগের এক শিক্ষক বিবার্তাকে বলেন, "বঙ্গবন্ধু আইন বিভাগে পড়ছেন বলে আমরা গর্ব করি। অথচ তাঁর জন্মদিনে আইন বিভাগ আলাদা কর্মসূচি পালন করে না। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না"।
আইন বিভাগে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন আলাদাভাবে পালিত না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এ বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আতিক রিয়াদ বলেন, "যেখানে আইন বিভাগের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা উদ্যেগী হয়ে এ উৎসব পালন করার কথা, সেখানে কোনো আয়োজনই থাকে না। এটা কিভাবে সম্ভব?
এদিকে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আইন অনুষদ শাখা ছাত্রলীগের গৃহীত কর্মসূচি অনুষদের ভিতরে করার অনুমতি দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছে ছাত্রলীগ।
আইন অনুষদ ছাত্রলীগের উদ্যোগে এদিন দোয়া, মিলাদ ও এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ কর্মসূচি থাকলেও ‘অনুষদ চত্বর ব্যবহারের অনুমতি না পাওয়ায়’ সীমানা প্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে হয়েছে সেই আয়োজন।
আইন বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ও আইন অনুষদ ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল হাসান শুভ বিবার্তাকে বলেন বলেন, “আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৯-১০ সেশনের ছাত্র। আমি ভর্তি হওয়ার পর থেকে আজ অবধি বিভাগের পক্ষ থেকে জাতির পিতা সংশ্লিষ্ট কোনো দিবসে অনুষ্ঠান হতে দেখিনি।
শুভ বলেন, আমরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা যখনই উদ্যোগ নিই তখনই আমাদের অসহযোগিতা করা হয়। অথচ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনুষ্ঠানগুলো করা হয়, তার নেতৃত্বে থাকার কথা ছিলো আইন বিভাগের।”
অনুষদ চত্ত্বরে অনুষ্ঠান করার অনুমতি না পাওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শুভ বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে অনুষ্ঠান করার অনুমতির জন্য ১১ মার্চ অনুষদের ডিনের কাছে গিয়ে স্যারকে আমন্ত্রণ জানানোর পাশপাশি চত্বরে অনুষ্ঠান করার অনুমতি চেয়েছিলাম। তখন ডিন স্যার আমাদের পাঁচ হাজার টাকা ফি’র সঙ্গে লিখিত আবেদনসহ বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার কথা জানান।
শুভ বলেন, "কেবল স্থান বরাদ্দের জন্যই পাঁচ হাজার টাকা যোগাড় করাটা তাদের জন্য কষ্টকর। তাই বাইরের ফুটপাতে অনুষ্ঠান আয়োজন ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিলো না।"
শুভ আরো বলেন, গত ৬ মার্চও ‘বঙ্গবন্ধু আইন বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে সংগ্রহকৃত সকল তথ্য ও উপাত্তের অনুলিপি হস্তান্তর ও ১৩ দফা প্রস্তাবনা’ বাস্তবায়নের জন্য সংবাদ সম্মেলন করার অনুমতি পায়নি আমরা।
এ অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ বিবার্তাকে বলেন, “অনুমতির জন্য আমার কাছে কোনো লিখিত দরখাস্ত আসেনি।”
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে আইন অনুষদে কোনো আয়োজন না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, "আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে এ দিবস উদযাপন করেছি। কোন অনুষদ আলাদাভাবে করলো, কি করলো না, সেব্যা পারে বিশ্ববিদ্যালয় হস্তক্ষেপ করে না"।
আইন অনুষদ চত্ত্বরে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠানের অনুমতি না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, "বিষয়টি খতিয়ে দেখবো"।
বিবার্তা/রাসেল/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]