কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের দায়ের করা অজ্ঞাতনামা মামলা প্রত্যাহারসহ কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে কোটা সংস্কার দাবিতে সোচ্চার সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রবিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাকারের সামনে বিক্ষোভ মিছিলের লক্ষ্যে জড়ো হতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। এরপর সাড়ে ১০টায় বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো শিক্ষার্থীকে যোগ দিতে দেখা যায়। এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল।
বিক্ষোভ মিছিলটি ঢাবির গ্রন্থাকার থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, টিএসসি, ভিসি চত্বরসহ পুরো ঢাবি ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে টিএসসির রাজু ভাস্কার্যে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এ সময় "বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই", "আমাদের দাবি মানতে হবে কোটা সংস্কার করতে হবে", এক দফা এক দাবি, কোটা সংস্কার আমাদের দাবি, প্রভৃতি শ্লোগানে মুখরিত হয়েছিল ঢাবি ক্যাম্পাস।
বিক্ষোভ সমাবেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহবায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ১৪ মার্চ (বুধবার) বেলা ১২টার দিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আমরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে স্মারকলিপি দিতে গেলে পুলিশ আমাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। আর এ বাধায় পড়ে আমরা সেখানে অবস্থা করি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আমরা সেখানে অবস্থান করবো বলে ঘোষণা দিই।
তিনি বলেন, এ ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ আমাদের উপর টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে। চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যায় আমাদের অবস্থান। এ সময় আমাদের থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মুক্ত করতে আমাদের থেকে প্রায় ৬০ জন রমনা থানায় গেলে তাদের ও গ্রেফতার করা হয়। এরপর বুধবার বিকেল থেকে রাত অবধি আন্দোলনের মুখে সবাইকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
মামুন বলেন, এরপর গত শুক্রবার দুপুরে শুনলাম আমাদের নামে মামলা করা হয়েছে। কিন্তু কেন? আমাদের অপরাধ কি? আমরা তো আমাদের যৌক্তিক দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছি।
মামুন আরো বলেন, মামলার খবর পেয়ে গত শুক্রবার আমরা সংবাদ সম্মেলন ডেকে ১৭ মার্চ তারিখের মধ্যে পুলিশের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছি। আর এ দাবি পূরণ না হলে আমরা ১৮ মার্চ বিক্ষোভ কর্মসূচি করবো বলে ঘোষণা দিয়েছিলাম। আমাদের আল্টিমেটাম অনুযায়ী পুলিশ মামলা প্রত্যাহার করেনি। তাই আজকে আমরা বিক্ষোভ করে মামলা প্রত্যাহার সহ কোটা সংস্কারের জোর দাবি জানাচ্ছি।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ বলেন, পুলিশের এসআই মির্জা বদরুল হাসান বাদি হয়ে শাহবাগ থানায় 'অজ্ঞাতপরিচয়ে আমাদের ৭০০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় পুলিশের ওপর আক্রমণ ছাড়াও রয়েছে রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি ও যানবাহন ভাংচুর করে সম্পদের ক্ষতি করার অভিযোগ।
রাশেদ বলেন, এস আই বদরুলের এ অভিযোগগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমরা ঐদিন শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ অন্যায়ভাবে আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। তারপর আমাদের উপর মিথ্যা মামলা করেছে। আমরা এ মামলা প্রত্যাহার সহ কোটা সংস্কারে আমাদের পাঁচদফা বাস্তবায়ন চায়।
সমাবেশে কোট সংস্কার আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আগামী ২৫ মার্চ দেশব্যাপী পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করে কোটা সংস্কারের জোর দাবি জানানো। ২৯ মার্চ দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারে পাঁচদফা দাবিতে গত ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ধারাবাহিক ভাবে আন্দোলন করে আসছে কোটা সংস্কার দাবিতে সোচ্চার আন্দোলনকারীরা। রবিবার তাদের ৫ম দফার বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর আগে চার দফায় মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সাইকেল র্যালি ও স্মারকলিপি প্রদান কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
দাবিগুলো হলো :
১. কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ % থেকে ১০% এ নিয়ে আসতে হবে।
২. কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
৩. চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না।
৪. কোটায় কোনো ধরণের বিশেষ নিয়োগ পরীক্ষা দেয়া যাবে না।
৫. চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কার্ট মার্কস ও বয়সসীমা করতে হবে।
বিবার্তা/রাসেল/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]