নিরাপত্তাকর্মী থেকে বিসিএস ক্যাডার, জবি শিক্ষার্থী মোত্তালিবের স্বপ্নযাত্রা
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:২৮
নিরাপত্তাকর্মী থেকে বিসিএস ক্যাডার, জবি শিক্ষার্থী মোত্তালিবের স্বপ্নযাত্রা
জবি প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দারিদ্রতার কষাঘাতে টিউশনি, প্রুফ রিডার এমনকি সিকিউরিটি গার্ডের চাকরিও করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মোত্তালিব। এমনকি আর্থিক সংকটে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল পড়ালেখাও। কিন্তু কোনো কিছুই তার অগ্রগতিতে বাধা হতে পারেনি। মন থেকে চেষ্টা করলে যেকোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব। তারই জলন্ত উদাহরণ হিসেবে সকল সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে হয়েছেন শিক্ষা ক্যাডার। সর্বশেষ ৪৩তম বিসিএসে বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) থেকে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।


আর্থিক দুরবস্থার কারণে চাচার বাড়িতে থাকতেন মোত্তালিব। পরিবার থেকে পড়াশোনার খরচ চালিয়ে নেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ায় কিছুদিন পড়াশোনাও বন্ধ ছিল। অথচ থেমে যাননি মোত্তালিব। বগুড়ার শিবগঞ্জের বর্গাচাষি মহাবুল ইসলাম ও জামিলা বিবির সন্তান এম এ মোত্তালিব মিহির। গ্রামে বর্গাচাষি বাবা আর গৃহিণী মায়ের একমাত্র স্বপ্ন ছিল তাদের সন্তান একদিন সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছাবে।


মোত্তালিবের সাথে কথা বলে জানা যায়, জীবনে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে আল্লাহর অশেষ রহমতে আজকে আমি ৪৩তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। আশা করি নিজের উপর অর্পিত সব দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে দেশের মানুষের সেবা দিতে পারব।


তবে এ পর্যন্ত আসার পথটা কখনোই মসৃণ ছিল না। গ্রামের স্কুল থেকে পড়াশোনা শেষ করে যখন কলেজে ভর্তি হই তখনই আর্থিক টানাপোড়নের মধ্যে পড়তে হয় পুরো পরিবারকে। ফলে কলেজের পড়াশোনাও কিছুদিন বন্ধ ছিল। তাই স্থানীয় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে নিরাপত্তাকর্মীর চাকরিও নিতে হয়েছিলো। একদিকে চাকরি অপর দিকে পড়াশোনা।


মোত্তালিব বলেন, এইচএসসি পড়াশোনা শেষে ২০১২ সালে ঢাকায় এসে আর্থিক অভাব অনটনের জন্য আবারও পড়াশোনা ছেড়ে দিই। একটি সিকিউরিটি কোম্পানিতে চাকরি নেই। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করতাম। সারাদিন গেইটে বসে থাকতে হতো। সময় কাটতো না তাই মাঝে মাঝে বই পড়তাম। একদিন ছুটি নিয়ে আমার এক বন্ধুর সাথে দেখা করি। সে ঢাকায় এসেছে কোচিং করে অ্যাডমিশন দিবে। তার সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি সম্পর্কে জেনে পড়াশোনার সেই উদ্দীপনা আবারো জাগে। সিকিউরিটি চাকরির বেতন হতে কিছু টাকা জমিয়ে ভর্তি হয়ে যাই একটি কোচিংয়ে।


এভাবে চাকরির পাশাপাশি কোচিং করে ২০১৩ সালে ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাই। সিকিউরিটি চাকরিটি ছেড়ে দিলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে এই ভয়ে ঢাকাতেই থেকে যাই এবং ভর্তি হই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপরই শুরু হলো নতুন এক সংগ্রাম। প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা ডিউটি করে কলাবাগান থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় গিয়ে ক্লাস করতে হতো। ভাড়া বাঁচানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসেই যাতায়াত করতাম। আমার মনে আছে একদিন ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময় স্টুডেন্ট ভাড়া ছয় টাকা না থাকার কারণে সদরঘাট থেকে কলাবাগান পর্যন্ত হেঁটে আসতে হয়। এভাবে কখনো সিকিউরিটি চাকরি কখনো বা টিউশনি করে পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হয়েছে।


তিনি আরও জানান, শত বাঁধা পেরিয়ে আমাকে এই পর্যন্ত আসতে হয়েছে। তবে কখনো হাল ছাড়িনি। আমি এমন একটা গ্রাম থেকে উঠে এসেছি যেখানে ছেলেমেয়েদের নাম দস্তখত শেখার পরে স্বপ্নই থাকতো বিদেশ চলে যাবে। এরকম একটা পরিবেশে আমি স্বপ্ন দেখতাম আমি একদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করে সরকারি চাকরি করব। তবে কখনো ভাবি নি যে বিসিএস এর মতো এতো তুমুল প্রতিযোগিতাপূর্ণ একটা পরীক্ষা দিয়ে দেশের প্রথম শ্রেণীর একটা চাকরি করব। "


ভবিষ্যতে যারা বিসিএস পরীক্ষা দিবে তাদের উদ্দেশ্যে মোত্তালিব বলেন, বিসিএস ক্যাডার হওয়া যতটা না কষ্টের তার থেকে বেশি কষ্টসাধ্য কাজ হচ্ছে লেগে থাকা। তাই ধৈর্য ধরে শেষ পর্যন্ত লেগে থাকলে একদিন সফলতা আসবেই।


বিবার্তা/রুদ্র/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com