সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত : ড. মশিউর রহমান
প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৩, ২১:৫৯
সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত : ড. মশিউর রহমান
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত বলে মনে করেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। 


তিনি বলেন, ‘অনার্স প্রথম বর্ষে সকল বিশ্ববিদ্যালয় মিলে একটি ভর্তি পরীক্ষা হলে শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমবে এবং আর্থিক সাশ্রয় হবে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই উচ্চশিক্ষার ৭০ শতাংশকে নিয়ে সবার শেষে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে সেশনজটে পড়তে চায় না। 


একটি মাত্র ভর্তি পরীক্ষা হয়ে আমরা যদি মেধার সবচেয়ে খারাপ অংশটুকু পাই তবুও তাদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য আমার বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজগুলো প্রস্তুত রয়েছে। সুতরাং আপনারা যারা মানবিকতা এবং নৈতিকতার কথা বলেন, অর্থ অপচয়ের কথা বলেন- ঘাটে ঘাটে বহু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া হচ্ছে অর্থ অপচয়। একটি মাত্র মেধা তালিকা হোক। সেই মেধা তালিকায় আমি সর্বনিম্ন স্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় আমাদের রয়েছে।’


আজ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) নেত্রকোনায় আবু আব্বাছ কলেজে নবীন বরণ, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান। 


দেশের প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘তরুণদের নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করা যাবে না। সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা শেষে আটমাস, দশমাস পরে আমরা ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে আবার দেড় থেকে দুই বছরের সেশনজটে পড়বো। আমি তথ্য দিয়ে বলছি, মাত্র দুই শতাংশ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অন্যত্র যায়। আর ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আমার বিশ^বিদ্যালয়ে থেকে যায়। তবুও আমি বলেছি, যে ২ শতাংশ শিক্ষার্থী অন্যত্র যায় তাদের থেকে কোনো কলেজ অর্থ নিতে পারবে না। যদি শিক্ষার্থীরা কলেজ পরিবর্তন করতে হয় তাহলেও আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কোনো ফি নেবো না। অর্থ আদায়ের জন্য আমরা শিক্ষার্থীর কাছে যেতে চাই না। আমি অনুরোধ করবো আপনাদের মাধ্যমেই জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় পরিচালিত হয়। যেই কলেজের অনার্সে শিক্ষার্থী নেই, আপনি সেই কলেজে অনার্স পাঠদান বন্ধের জন্য আবেদন করুন। এই সৎ সাহস আপনাকে দেখাতে হবে। কেননা আমরা ইতোমধ্যে ১২টি নতুন পিজিডি কোর্স চালু করেছি। ১৯টি শর্ট কোর্স চালু করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আইসিটি, সফট স্কিল, ডিজিটাল মার্কেটিং, অন্ট্রাপেনারশিপ ইত্যাদি। এ বছরে যারা অনার্স এবং ডিগ্রিতে ভর্তি হবে- সকলকে প্রথম বর্ষে আইসিটি অবশ্যপাঠ্য হিসেবে পড়তে হবে। আর তৃতীয় বর্ষে সফ্ট স্কিল অবশ্যপাঠ্য হিসেবে পড়বে।’ 


শিক্ষকদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘আমি জানি আপনাদের কোথায় কোথায় না পাওয়ার বঞ্চনা আছে। অনার্স কলেজের অনেক শিক্ষকেরা বেতন পান না। মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। আমরা সেটি নিয়ে নানা পর্যায়ে কথা বলছি। কিন্তু চাইলেই রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে সবকিছু অকস্মাৎ করা যায় না। এটি হচ্ছে বাস্তবতা। কিন্তু যেই শিক্ষকবৃন্দ এই কলেজের শিক্ষার্থীদের পড়ান। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি, প্রতিবন্ধকতা এবং চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এই সমাজ এখনো মন-প্রাণ ভরে যাদের শ্রদ্ধা করে তারা হলেন আপনারা প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ। আপনাদের যে ভালোবাসা শিক্ষার্থীরা, অভিভাবকরা দেয়- তা অতুলনীয়। এটিই হচ্ছে একজন শিক্ষকের জীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। আপনারা সন্তানের চেয়ে শিক্ষার্থীদের বেশি ভালোবাসেন। এর চেয়ে গৌরবের আর কি হতে পারে! সন্তানের চেয়ে বেশি সময় শিক্ষার্থীকে দেন। এর চেয়ে উদারতার আর কি হতে পারে! আমি শিক্ষকদের অনুরোধ করবো- আপনারা ক্লাশে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম, মানবিকতা, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, বিজ্ঞান চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের বুনিয়াদগুলো শিখিয়ে দেবেন। শিক্ষার্থীদের মূলত বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান জানা যেমন প্রয়োজন, কী করে শিখতে হয় সেই প্যাডাগোজিটি শেখা আরও বেশি প্রয়োজন। আপনারা শিক্ষার্থীদের বাস্তবতার কষাঘাত যেমন শিখাবেন, তেমনি এই অদম্য তরুণদের সামনে আশাবাদের কথা বলবেন। যার মধ্যদিয়ে তাদের মধ্যে  প্রাণচাঞ্চল্য ও ইতিবাচক ধারণ তৈরি হয়। তাদের মধ্যে যেন যেকোনো কাজের প্রতি তীব্র আগ্রহ এবং দেশমাতৃকার প্রতি তীব্র ভালোবাসা তৈরি হয়।’ 


শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘তোমরা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করো আমি এর বিরুদ্ধে নই। তবে এই দেশমাতৃকারও তৃষ্ণা আছে। তুমি তোমার মাকে যেমন ভালোবাসবে, এই দেশমাতৃকাকেও ভালোবাসবে। তুমি যখন মায়ের ভাষায় কথা বলবে, শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলবে। বিষয়ভিত্তিক পাঠ যখন গ্রহণ করবে তখন মূল বই পড়বে।  তোমরা যারা সুন্দর স্বপ্ন নিয়ে এই ক্যাম্পাসে এসেছ। তোমাদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাবা-মায়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেও পড়াশোনা করে যাচ্ছ। আমি তোমাদের স্যালুট জানাই। জাতীয় বিশ^বিদ্যালয় নিয়ে হতাশ হওয়া যাবে না। তোমরাই আগামী দিনের দেশ গড়ার কারিগর। তোমরাই গড়বে সুন্দর বাংলাদেশ।’  আবু আব্বাছ কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট মো. আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু, সংসদ সদস্য হাবিবা রহমান খান শেফালী, শেখ হাসিনা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম কবীর প্রমুখ।  


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com