সারাদেশ
উল্লাপাড়ায় ইউএনওর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:০৪
উল্লাপাড়ায় ইউএনওর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাতের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।


সোমবার (৮ই সেপ্টেম্বর) উল্লাপাড়া উপজেলার ওমর ফারুক নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বিভিন্ন স্থানে অনুলিপি প্রধান করে (ইউএনও) আবু সালেহ্ মোহাম্মদ হাসনাতের বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এনে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ দায়ের করেন।


অভিযোগে বলা হয়, এডিপি, এলটিএম, পিআইসি প্রকল্পের নামে-বেনামে প্রকল্প দেখিয়ে অর্থ আত্ম স্বাদ ও অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে । ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আওতায় গৃহীত ১১৮টি প্রকল্প অনুমোদন করে বাস্তবায়ন করা হয়। এর অনেকগুলোই উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল ব্যবহার নির্দেশিকা ও বিধিমালার পরিপন্থি বলে জানা গেছে। এর মধ্যে পিআইসি কর্তৃক বাস্তবায়িত বেশ কিছু প্রকল্প নামমাত্র দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘ উল্লারপাড়া উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উঁচু নীচু বেঞ্চ সরবরাহ’ একই নামে ছয় লাখ টাকার তিনটি প্রকল্প পিআইসি’র বাস্তবায়নে দেখানো হয়েছে। অর্থাৎ ছয় লাখ টাকার একটি প্রকল্প ভেঙে তিন ভাগ করা হয়েছে। যা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ এর লঙ্ঘন বলে জানা গেছে।


এতে পিআইসি পদ্ধতিকে অপব্যবহার করে বড় বড় প্রকল্প টুকরো টুকরো করে বাস্তবায়ন দেখিয়ে করা হয়েছে অর্থ আত্মসাতের সুযোগ। তাছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে চল্লিশ লাখ টাকার বিশেষ বরাদ্দ এনেও খরচ করেছেন নিজের ইচ্ছমত প্রকল্প তৈরি করে।


অভিযোগ পত্রটিতে দেখা গেছে, এই অর্থ বছরের মোট প্রকল্প ১১৮ টি। যার মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৯৪ লক্ষ ৫৩১ টাকা। এর মধ্যে টেন্ডার পদ্ধতিতে (এলটিএম) ৪ কোটি ৮৬ লক্ষ ৫৩১ টাকা এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) পদ্ধতিতে ১ কোটি ৮ লক্ষ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও এডিপির বিশেষ বরাদ্দের আরো ৪০ লক্ষ টাকার ১০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।


নথিতে দেখা যায়, ২০২৪-২৫ অর্থ বৎসরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (বিশেষ) এর আওতায় থোক বরাদ্দ হিসেবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যেখানে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি অফিস মেরামত বাবদ ব্যয় করেছেন ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এএসপি সার্কেল অফিস ভবন মেরামত বাবদ ব্যয় করেছেন তিন লাখ টাকা।


গেজেটেড ডরমেটরি ভবন মেরামত বাবদ ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা, নন-গেজেটেড ডরমেটরি ভবন মেরামত বাবদ ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এছড়াও এই বরাদ্দ থেকে পিআইসি’র মাধ্যমে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় মেরামত বাবদ দুই লাখ টাকা, আনসার ভিডিপি অফিস ও আইসিটি অফিস মেরামত বাবদ দুই লাখ, পাম্প হাউজ মেরামত দুই লাখ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাসভবনের অভ্যন্তরে পেভড টাইলস দ্বারা রাস্তা নির্মাণ বাবদ দুই লাখ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ির গ্যারেজ মেরামত দুই লাখসহ বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেন।


অথচ উপজেলা পরিষদ উন্নয়ন তহবিল নির্দেশিকা ২০১৪ এর সংযোজনী-১ এর ক্রমিক নং ৭ স্পষ্ট বলা রয়েছে উপজেলা উন্নয়ন তহবিলের অর্থ দ্বারা ব্যাংক বা অন্য কোন সরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের জন্য কোন ইমারত নির্মাণ/মেরামত বা সম্প্রসারণ করা যাবে না।


দেখা যায়, এডিপির রাজস্ব উদ্ধৃত্ত অর্থ দিয়ে নীতিমালা উপেক্ষা করে উপজেলা পরিষদ চত্বর কেন্দ্রিক নেওয়া হয়েছে ১৪ লাখ টাকার প্রকল্প। অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা পরিষদের সুনির্দিষ্ট গ্যারেজ না থাকা স্বত্বেও ভিন্ন ভিন্ন কর্মকর্তার নামে গ্যারেজ দেখিয়ে দশ লাখ টাকার বিল তুলে নিয়েছেন ইউএনও আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত।


গ্যারেজ নির্মাণে দুই লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের গ্যারেজ নির্মাণে দুই লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হয়েছে। তাছাড়া উপজেলা প্রকৌশলীর গ্যারেজের ইটরে গাথুঁনি ও মেঝের সিসি ঢালাই বাদে দুই লাখ, একই গ্যারেজের প্লাস্টার, রং করণ ও টিনের চালা নির্মাণ বাবদ আরও দুই লাখ টাকা প্রকল্প ব্যয় দেখানো হয়েছে।


এই প্রকল্প এলটিএম এর মাধ্যমে বাস্তবায়ন না করে কেন তা ভেঙে পিআইসির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার অনুমোদন দিলেন এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, পিআইসি কর্তৃক বাস্তবায়িত এসব প্রকল্পের অধিকাংশই নামকামাস্তে ও অর্থ জন্য করা হয়েছে।


এজন্য এইউএনও টাকা আত্মসাৎ করার জন্য বড় প্রকল্প ভেঙে টুকরো টুকরো করে পিআইসির মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করেছেন।


তাছাড়া উপজেলা প্রশাসকদের নীতিমালা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ বাবদ দুই লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে একটি উপজেলায় কতজন প্রশাসক থাকেন যে প্রশিক্ষণের বিল এত টাকা হয়।


চার লাখ টাকা বরাদ্দের মধ্যে ইউএনও’র উপহার হিসাবে যে সংগঠনগুলো ফুটবল পেয়েছে সেই সংগঠনগুলোর ক্রীড়া ব্যক্তিত্বরা জানান তারা হাতে গোনা কয়েকটি ফুটবল পেয়েছেন।
খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতির সভাপতি, ড. সামিউল ইসলাম রনি বলেন, আমি যে সংগঠনের দায়িত্বে আছি সেই সংগঠনকে চারটি ফুটবল দেয়া হয়েছে। রেজাইল নামে স্থানীয় ফুটবল কোচ বলেন, ছেলেদের ফুটবল ক্লাবের মধ্যে দুটিকে ডিআর ব্র্যান্ডের ৩টি করে ফুটবল দেয়া হয়েছে। আর বাদ বাকিগুলোকে কীভাবে দেয়া হয়েছে জানি না।


ইউএনও আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত সম্পর্কে খোঁজ নিলে জানা যায়, গত বছরের জুন মাসে পবার কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি ছাড়াই ৯১ লাখ ৫০ হাজার টাকায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাজ শুরু করেন তিনি। নওগাঁর আত্রাই থেকে নিজের চাচাতো ভাই রাজীব রনককে এনে তাঁকে দিয়েই কাজ করাচ্ছিলেন। রাজীব রনক পবায় ইউএনওর সরকারি বাসভবনেই থাকতেন। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩০টি ঘর নির্মাণে ইটভাটা থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ওই বছরের ১২ সেপ্টেম্বর বদলি করা হয়।


অভিযোগের বিষয়ে যানতে চাইলে, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ার মো. শহিদুল্লাহর জানান,এই অভিযোগের কোন ভিত্তি নাই আমরা যা করেছি সরকারি নিয়ম নিয়তির মধ্যে থেকেই করেছি।


এ বিষয়ে উল্লাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত এর সরকারি নাম্বারে ফোনদিয়ে তার অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিষয়ে অনিয়ম দুর্নীতি অভিযোগ হয়েছে, এবিষয় আমার কোন কিছু জানা নাই, কি অভিযোগ গেছে সেটা জেলা প্রশাসকেই জিজ্ঞেস করেন বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।


বিবার্তা/কাইয়ুম/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com