
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ভোলাহাট উপজেলার রোমান আলীকে হাজারো বিপদ দমিয়ে রাখতে পারিনি। জীবন যুদ্ধের সাথে লড়াই করে এবারের এসএসসি (ভো:) পরীক্ষায় সকল বিষয়ে এপ্লাস পেয়েছেন ।
রোমান কি ভাবে বেঁচে আছেন জীবনের লড়াই করে টা জানা গেলো । অসুস্থ বাবা তোফাজ্জল হকের বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বলতে শুরু করলেন। আমি তখন খুব ছোট। বয়স ৪ বছর। বাবা নিম গাছের ডাল কাটতে গিয়ে নিচে পড়ে মাজা ভেঙ্গে যায়। পরে একটি কিডনি বিকল হয়ে পড়ে। আমার জীবনে হতাশা নেমে আসে। আমার আর পড়াশোনা করা হবে না। এ শিশু বয়সেই সংসারের হাল ধরতে হয়। অটোরিকশা নিয়ে নামতে হয় রাস্তায়।
পড়ালেখার জন্য ভর্তি হয়ে যায় বজরাটেক সবজা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে অটোরিকশা নিয়ে উপজেলার এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে ছুটে চলা। সারাদিনে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে সংসার আর অসুস্থ বাবার ঔষধ কেনাতে চলে যায়।
অটোরিকশা চালাতে গিয়ে স্কুলের বন্ধুরা শিক্ষক ও পরিচিতদের দেখে লজ্জা পেলেও বেঁচে থাকার লড়াই থেমে যায়নি। আমার লক্ষ্য ছিল যে ভাবেই হোক আমাকে সংসার এবং বাবার ঔষধ আর পড়াশোনা করতে হবে।
কঠিন সময়ের মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ভাবে পড়াশোনার সুযোগ ছিল না। অটোরিকশা চালিয়ে যে সময় পেতাম মনোযোগ সহকারে পড়াশোনা করতাম। উপজেলার তাঁতীপাড়া গ্রামের গোল্ডেন এ প্লাস প্রাপ্ত রোমান এভাবেই দুঃখ কষ্টের কথা বলছিলেন। তিনি আরো বলেন ভালো রেজাল্ট হলো কিন্তু অর্থের অভাবে উচ্চ শিক্ষা নিতে পারবো কি না উপরওয়ালাই ভালো জানেন।
রোমানের চাচা জহরুল হক গণমাধ্যমকে জানান, ২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর তারিখে আমার ছোট ভাই তোফাজ্জল নিম গাছের ডাল কাটতে গিয়ে পড়ে যায়। এরপর দীর্ঘ চিকিৎসা চলছে। কোনোভাবে বেঁচে আছে সে।
এখন ভাতিজা রোমানই রিকশা চালিয়ে সংসার চালায়। সারাদিন রিকশা চালিয়ে ক্লান্ত শরীরে রাতে যতটুকু সময় পেয়েছে মন দিয়ে পড়েছে। ছোটবেলা থেকেই কষ্ট করে বড় হয়েছে। এত প্রতিকূলতার মাঝেও ভালো রেজাল্ট করেছে। কেউ যদি পাশে দাঁড়ায়, তাহলে ছেলেটা উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে এবং মানুষের মত মানুষ হবে।
রোমানের মা রুনা বেগম জানান , পড়াশোনার তেমন সুযোগ ছিল না। স্কুল থেকে বাড়ী ফিরে অভাবি সংসারের জন্য অটোরিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হতো আমার ছেলে। যেটুকু সময় পেত ক্লান্ত শরীরে পড়াশোনা করতে বসতো।
রোমানের বাবা বলেন, আমার ছেলের বয়স যখন ৪ বছর তখন আমি নিম গাছ থেকে পড়ে মাজা ভেঙ্গে যায়। দেশের অনেক জায়গায় চিকিৎসা করতে গিয়ে সর্বস্ব হারিয়ে ফেলেছি। পরে একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। আমি কাজ কর্ম করতে পারিনা। ছেলে ভালো রেজাল্ট করার পরেও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারবো না। আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। সহৃদয় ব্যক্তিদের সহযোগিতা পেলে হয়তো আমার ছেলে পড়াশোনা করার পাবে। একমাত্র ছেলেকে উচ্চ শিক্ষা অর্জনে সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
বিবার্তা/লিটন/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]