
মৃত্যুর পর বিশ ঘণ্টার অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও নানা নাটকীতায় এখনো দাফন করা সম্ভব হয়নি আব্দুর রহমান নামে সত্তরোর্ধ্ব এক ব্যক্তির। আব্দুর রহমানের মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এবং আইনি জটিলতার কারণে দাফন আটকে থাকায় বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা দেখা দিয়েছে। দুই স্ত্রীর মতবিরোধ থাকায় বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। বর্তমানে লাশ দেবীগঞ্জ থানা হেফাজতে রয়েছে।
শুক্রবার সকাল ৮টায় আব্দুর রহমান মৃত্যুবরণ করেন বলে পারিবারিক সূত্র জানায়। আব্দুর রহমানের বড় স্ত্রী রহিমা খাতুন স্বামীর মৃত্যুর খবর পেয়ে মৃত্যুর কারণ নিয়ে সন্দেহ থাকায় একই দিন চারজনকে বিবাদী করে দেবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
রহিমা খাতুনের অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, আব্দুর রহমান রহিমা খাতুনকে বিয়ের ১৫ বছর পর নাসিমা বেগমকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে দাম্পত্য কলহ দেখা দেয় প্রথম স্ত্রীর সাথে। পরে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে উপজেলার চিলাহাটি ইউনিয়নের ভাউলাগঞ্জ বিজয়নগর এলাকায় বাড়ি তৈরি করেন। এরপর থেকে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথেই স্থায়ী ভাবে থাকতেন আব্দুর রহিম। সম্প্রতি আব্দুর রহমানের মালিকানাধীন জমি রেজিস্ট্রি করে নিতে দ্বিতীয় স্ত্রী ও সন্তানরা নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বেশ কয়েক দিন থেকে আব্দুর রহিমের বাড়ি থেকে ঝগড়ার আওয়াজ আসছিল। তবে পারিবারিক বিষয় হওয়ায় কেউ প্রশ্ন করেনি এইসব বিষয়ে। শুক্রবার সকাল ১১টায় আব্দুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়টি দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে আবু নাসিম মোবাইলে প্রথম স্ত্রীর ছেলে বেলাল হোসাইনকে জানায়। খবর পেয়ে রহিমা খাতুন ছেলে বেলাল ও আরো দুই মেয়েকে সাথে নিয়ে বিজয়নগরের বাড়িতে আসেন। বাড়িতে আসার পর তাদের কাছে আব্দুর রহিমের মৃত্যুর কারণ স্বাভাবিক মনে হয়নি।
তাদের দাবি, আব্দুর রহমানের বাম হাতে, কপালে এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। শুধু তাই নয় গোসল শেষে কাফনের কাপড় পরানো হলেও রক্ত ঝরছিল।
এইদিকে আব্দুর রহমানের মরদেহ এই অবস্থায় দেখার পর তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলনের প্রথম পরিবারের সদস্যরা। এরপর তারা মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্তের দাবি জানান। এরপর থেকে শুরু হয় নানা নাটকীয়তা। মেয়ে জামাই মোমিনুর ইসলাম মোমিন ময়নাতদন্ত থামাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রথমদিকে পুলিশ ময়নাতদন্তে সায় না দিলেও প্রথম স্ত্রীর দাবির মুখে পরে লাশ দেবীগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়।
প্রথম স্ত্রী ছেলে সাজেদুর রহমান বলেন, আমার বাবার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। গতকাল থেকে লাশ থানায় পড়ে আছে অথচ এখনো ময়নাতদন্ত করতেছে না। আজকে এসআই নাসিম নামে এক পুলিশ অফিসার আমাদের কে বললো ডিসি স্যার নাকি যেতে বলেছেন। আমরা চারজন পঞ্চগড় গেছি। এডিসির রুমে নিয়ে গেছে কিন্তু আমার কোন জবানবন্দি নেয়া নি। সুরতহাল রিপোর্টে স্বাক্ষর চায়, আমি স্বাক্ষর দেই নি।
তবে দ্বিতীয় স্ত্রী নাসিমা বেগম ও তার সন্তানরা দাবি করেন, আব্দুর রহমান রাতে বাথরুমে গিয়ে পড়ে গেলে হাত ও মাথায় আঘাত পান। পরে তাকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে রেফার্ড করা হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। পরে রমেক হাসপাতালে নেওয়ার পর সেখানে মারা যান আব্দুর রহমান।
দেবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ সোয়েল রানা বলেন, আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন। বিশ ঘণ্টা পার হয়েও কেন আইনগত ব্যবস্থা এখনো নেওয়া যাচ্ছে না এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, আমরা পরে এই বিষয়ে আপনাদের ডিটেইলস জানাবো।
দেবীগঞ্জ সার্কেল এর সহকারী পুলিশ সুপার সামুয়েল সাংমা বলেন, সকালেই দ্রুত আইনি প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ পোস্টমোর্টেমের জন্য প্রেরণের কথা বলেছিলাম ওসিকে। এখনো কেন প্রেরণ করা হয়নি খোঁজ নিচ্ছি। তবে লাশ পোস্টমোর্টেমে পাঠানো হবে বলে তিনি জানান।
এই বিষয়ে পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান মুন্সী বলেন, আমি ওসি'র সাথে কথা বলে দেখছি। দ্রুত আইনগত প্রক্রিয়া শেষে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিবার্তা/গোফরান/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]