শিরোনাম
জয়পুরহাটে ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ১৯ জন
প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:০২
জয়পুরহাটে ১০৩ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ১৯ জন
জয়পুরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আমি অনেক ছোট থাকতে বাবার মৃত্যু হয়। পরে মায়ের আবার বিয়ে হয়। তারপর সৎ বাবার কাছে থেকে বড় হই। নিজের পড়াশোনা চালাতে স্কুলের এক শিক্ষকের কাছ থেকে মাসে এক হাজার টাকা করে পেতাম। জীবিকা নির্বাহ করতে হাঁস-মুরগি পালন করেছি। এভাবে পড়াশোনা চালিয়েছি।


কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর বুধবার (২৪ নভেম্বর) রাতে জয়পুরহাট পুলিশ লাইন্স ড্রিলশেডে কথাগুলো বলেন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার সোনাপুর এক নম্বর আদর্শ গ্রামের মৃত রহিম খালকোর ছেলে সজল খালকো।


সজল খালকোর মামা বলেন, ২০০৯ সালে আমার দুলাভাই মারা যান। এরপর অনেক কষ্ট করে আমার ভাগ্নে পড়ালেখা করেছে। এখন সে পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়েছে। এই চাকরি পেতে তার খরচ হয়েছে শুধু আবেদনের ১০৩ টাকা ফি। এছাড়া কোনো প্রকার ঘুষ দিতে হয়নি। ঘুষ ছাড়াই চাকরি হবে এটা আমাদের কল্পনাতেও ছিলো না। এজন্য পুলিশের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞতা।


শুধু সজল খালকো নয়, কনস্টেবল পদে জয়পুরহাট জেলায় চূড়ান্তভাবে ১৯ জন মনোনীত হয়েছেন এবং অপেক্ষমান আছেন ৫ জন। এদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান। বিনা পয়সায় চাকরি পেয়ে দারুন খুশি তারা।


বুধবার বিকেল ৫টার দিকে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের নাম ও রোল নম্বর ঘোষণা করেন।


এ সময় উপস্থিত ছিলেন- পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) রোকন উদ্দিন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর হিসাব) ফজল-ই-খুদা, জয়পুরহাটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) তরিকুল ইসলাম, জয়পুরহাটের চার থানার ওসি ও পুলিশ সদস্যরা।


চূড়ান্তভাবে মনোনীতদের মধ্যে এতিম, রং মিস্ত্রীর মেয়ে, নাপিতের ছেলে, চাতালের নাইট গার্ডের ছেলেও রয়েছেন। কেউ কেউ নিজেই টিউশনি করে লেখাপড়া করেছেন। আবার কেউ ঢাকায় রিকশা চালিয়ে, ট্রাক চালিয়ে বা ডিমের হ্যাচারিতে কাজ করে নিজের পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন। আজ তারা পুলিশ কনস্টেবল পদে চূড়ান্তভাবে মনোনীত হয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।


চূড়ান্তভাবে মনোনীত জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার জালালপুর গ্রামের আখতারুজ্জামানের ছেলে মো. সিহাব নামে একজন বলেন, আমার বাবা খুবই গরিব। সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। তাই নিজের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে আমি ট্রাক চালিয়েছি। আবার ডিমের হ্যাচারিতে কাজও করেছি।


কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য চূড়ান্তভাবে মনোনীত বাবা হারানো জয়পুরহাট সদরের বানিয়াপাড়ার রাবেয়া সুলতানা বলেন, আমরা চার ভাইবোন। আমার বাবা প্রতিবন্ধী ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর পরিবারে খুবই কষ্ট শুরু হয়। তাই আমি নিজেই টিউশনি করি। সেই টাকায় সংসার এবং পড়ালেখা চালিয়ে যাই। আজ টাকা ছাড়াই পুলিশে চাকরি হওয়ায় আমি অনেক গর্বিত। আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। আমি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপি ও জয়পুরহাটের এসপি স্যারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।


অনলাইনে আবেদনের পর ১৪ নভেম্বর থেকে ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল পদে ১৯ জন নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করে জয়পুরহাট জেলা পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় মনোনীত ৭৬০ জনের মধ্যে সেই দিন ৫৭০ জন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে পুলিশ লাইন্সে আসে। এতে তাদের কাগজ যাচাই শেষে পরদিন ১৫ নভেম্বর ২৬৫ জন শারীরিক সক্ষমতা (দৌড়, পুশআপ, লং জাম্প ও হাই জাম্প) যাচাই করাতে আসেন। এতে উত্তীর্ণ ২১৮ জন ১৬ নভেম্বর আবারও শারীরিক সক্ষমতা (দৌড়, ড্রাগিং ও রোপ ক্লাইমিং) যাচাই পরীক্ষায় আসেন। এই পরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণ ১৬৭ জন ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা দেন।


লিখিত পরীক্ষা শেষে উত্তীর্ণ ৪৫ জন বুধবার (২৪ নভেম্বর) মনস্তাত্ত্বিক ও মৌখিক পরীক্ষার জন্য পুলিশ লাইন্সে পুলিশ সুপারের অফিস কক্ষে আসেন। সব প্রক্রিয়া শেষে কনস্টেবল পদে উত্তীর্ণ ২০ জন ছেলে এবং ৪ জন মেয়ের নাম ঘোষণা করেন পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা। এর মধ্যে ৫জনকে অপেক্ষমান রাখা হয়।


ফলাফল ঘোষণা শেষে পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, সম্পূর্ণ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আমরা ১৯ জনকে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দিয়েছি। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, আনসার, এতিম, সাধারণ কোটার ছেলেমেয়ে এবং এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৯ জন রয়েছেন। প্রায় সবাই অসচ্ছল পরিবারের সন্তান।


তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থেকে আমরা খুবই সতর্কতার সঙ্গে দালাল ও প্রতারক চক্রকে দমন করার চেষ্টা করেছি এবং সক্ষম হয়েছি।


বিবার্তা/বাবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com