শিরোনাম
সাতক্ষীরায় পানির নিচে আড়াই হাজার বিঘা আমন ধানের ক্ষেত
প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২১, ১৯:৪৮
সাতক্ষীরায় পানির নিচে আড়াই হাজার বিঘা আমন ধানের ক্ষেত
সেলিম হোসেন, সাতক্ষীরা
প্রিন্ট অ-অ+

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মাছের ঘেরে পানি তুলতে কালভাটের মুখ থেকে বালির বস্তা সরিয়ে নেয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে আড়াই হাজার বিঘার আমন ধানের ক্ষেত। সপ্তাহব্যাপি পানিবন্ধি থাকা ওইসব জমির আমন ধান পঁচে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দু’ হাজার ক্ষুদ্র চাষি।


সরেজমিনে বুধবার কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি গ্রামে গেলে স্থানীয় কৃষকরা জানান, ২০০০ সালে খৈতলা বাঁধ দিয়ে বন্যার ভারতীয় পানি সাতক্ষীরা জেলায় ঢুকে পড়ার পর থেকে তাদের বিলে আর ফসল হতো না। কিন্তু এবার স্থানীয়ভাবে চাষি কমিটি গঠনের মাধ্যমে নয় লক্ষাধিক টাকা খরচ করে আমন চাষের যোগ্য করে তোলা হয়েছিল। সেখানে দু’ হাজারের মত ক্ষুদ্র চাষি আড়াই হাজার বিঘার বেশি জমিতে ধান চাষও করেছিলেন।


ওই বিলের দক্ষিণ পাশে কলারোয়া উপজেলার চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টুর দুটি মাছের রয়েছে। ঘের দুটিতে পানি না থাকায় শ্যালো মেশিন লাগিয়ে পানি তুলে মাছ চাষ করছিলেন তিনি। অথচ এ বছরই উপজেলা চেয়ারম্যান ঘেরে পানি নেয়ার জন্য নিজ ফেইস বুক আইডিতে ঘোষণা দিয়েই গত ২৯ জুলাই শুক্রবার হঠাৎ করে ৭ নং ওয়ার্ডের বালির বস্তা দিয়ে বন্ধ করে রাখা কালভাটটির মুখ খুলে দেন। এতে তলিয়ে যায় মুরারীকাটি বিলের আড়াই হাজার বিঘার মত আমন ধানের ক্ষেত। ৭ দিন ধরে পানিবন্ধি হয়ে থাকার ফলে ফুল হতে যাওয়া ধানগাছ পঁচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় দু’ হাজারের মত কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। বর্তমানে নিজের মাছের ঘেরের খাবার নৌকায় করে নিয়ে যাচ্ছেন আমিনুল ইসলাম লাল্টু। ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় জমির মালিকদের হারির টাকা কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তিত তারা।


মুরারীকাটি গ্রামের উজির আলী দফাদারের ছেলে এবাদুল ইসলাম জানান, মুরারীকাটি বিলে তার তিন বিঘা জমি রয়েছে। বড় আশা করে ঋণ নিয়ে ২১ বছর পর এবার আমন চাষ করেছিলেন। কিন্তু উপজেলা চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আজ সেখানে মাথা সমান পানি। পচে গেছে ধান গাছ।


একই এলাকার সেবজানের ছেলে নুর ইসলাম জানান, মুরারীকাটি বিলে তিন বিঘা জমিতে তিনি আমন ধানের বর্গা চাষ করেছিলেন। ফলন ধরার মুখে পানিতে ডুবে ধান গাছ সব নষ্ট হয়ে গেছে তিনি ভাগে তিন বিঘা জমিতে মুরারীকাটি বিলে ধান চাষ করেছিলেন। করোনা সময়ে সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে ধান চাষ করে সুখের মুখ দেখতে যেয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
একই এলাকার রত্না খাতুন জানান, তার স্বামী বাইরে লকডাউনে আটকা পড়ে আছেন। ওই বিলের ১২ কাঠা জমিতে তিনি নিজেই অতি কষ্টে ধান চাষ করেছিলেন। কিন্তু বিলে চেয়ারম্যান কালভার্টের মুখ থেকে বালির বস্তা সরিয়ে দেয়ায় সব নষ্ট গেছে।


একই কথা বলেন এলাকার জমির আলীর স্ত্রী সোনাভান, আব্দুল জাব্বার, নজরুল ইসলামসহ অনেকেই। তারা সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক চাষিদের এভাবে ক্ষতি করার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


কলারোয়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, উপজেলা চেয়রাম্যান লাল্টু নিজের ঘেরের স্বার্থে ২ হাজার পরিবারের পেটে লাথি মেরেছেন। করোনা মহামারিতে মানুষ এমনতিইে দিশেহারা। তারপরও ঋণ করে ফসল চাষ করেও সেগুলো ঘরে নিতে না পেরে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরেজমিনে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।


এ ব্যাপারে কলারোয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু বলেন, কলারোয়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের একটি কালভার্টের মুখ আটকে রাখা হয়েছিল। ৮নং ওয়ার্ডের মানুষের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার তারাই কালভার্টের মুখ খুলে দিয়েছেন। এতে তারই ১০০ বিঘা জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। যাদের ওই বিলে কোন জমি নেই তারাই এ ধরণের অপপ্রচার চালাচ্ছে তার বিরুদ্ধে।


বিবার্তা/ইমরান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com