শিরোনাম
ম্যাজিস্ট্রেট মামুন জবি ‘ছাত্রদলের ক্যাডার’ ছিলেন
প্রকাশ : ২০ এপ্রিল ২০২১, ২০:৩৯
ম্যাজিস্ট্রেট মামুন জবি ‘ছাত্রদলের ক্যাডার’ ছিলেন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর রাজপথে সম্প্রতি চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের মধ্যে যে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে তা কম বেশি সবারই জানা। এই ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া ম্যাজিস্ট্রেটের ছাত্র জীবনের চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য জানা গেছে। বিবার্তার পাঠকদের জন্য সেই তথ্য তুলে ধরা হলো।


ঘটনার দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকারী ঢাকা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের (১ম ব্যাচ) দর্শন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী। আল মামুন ছাত্রদল ও শিবিরের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং সেসময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ক্যাডার হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে ,২০০৭ সালের ১৮ আগস্ট তৎকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম মনার হত্যাকাণ্ডের সাথেও সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন মামুন। এছাড়ার তার পরিবারের সবাই বিএনপি-জামাত রাজনীতির সাথে জড়িত বলে জানা যায়।


বিভিন্ন সূত্রের খবর, ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তো নয়ই বরং রাজাকারের সন্তান। মামুনের বাড়ি খুলনা মহানগরীর পূর্ব বানিয়াখামার, বি.কে মেইন রোডস্থ পূর্ব বানিয়াখামার বড় মসজিদের সামনে। তার পিতার নাম আসাদুজ্জামান ওরফে রাজ্জাক। এলাকার সবাই তার পিতাকে রাজ্জাক রাজাকার নামেই চেনে। রাজ্জাক রাজাকার ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তিনি কাস্টমসে চাকরি বাগিয়ে নেন। কাস্টমসে চাকরি করে অবৈধ ভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। তার ঢাকায় ৪/৫ টি ফ্লাট এবং খুলনা ৫/৭টি বাড়ি রয়েছে এবং তার নিজের তিন মেয়ের নামে ৩টি ও ছেলেদের নামেও বাড়ি আছে।


রাজ্জাক রাজাকার চাকরি থেকে অবসরে গিয়ে তার অন্যপুত্র হারুন কে কাস্টমসে চাকরি দেন এবং সে এখনো চাকরিরত। হারুন ছিলেন খুলনা মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজের এক সময়ের শিবির ক্যাডার। সেও এলাকায় শিবির হারুন নামে পরিচিত। মামুনের ভগ্নিপতি শাজাহান জামাত ও ওলামা দলের নেতা ছিলেন। সে খুলনা আহসান উল্লাহ কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক ছিলেন কিন্তু কোনো একটি ঘটনায় তার চাকরি চলে যায়।


মামুন ঢাকায় অধ্যয়নকালে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলেন। এক সময়ের ছাত্রদল সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের কথিত শ্যালক বলে পরিচয় দিতেন মামুন।


বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সহ-সম্পাদক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী, আল মামুনের সহপাঠী হিমেলুর রহমান হিমেল তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, "ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলালের কথিত শ্যালক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মামুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের প্রথম ব্যাচের ছাত্রদলের দামি গুন্ডা ছিল। ছাত্রজীবনে অত্যন্ত লভিংবাজ ধূরন্ধর ছিল সে, তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিক্ষা জীবন শেষ করার কথাও ছিল না কিন্তু তার বাবার অনেক টাকা ছিল এটা স্বীকার করতেই হয়।


আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর লোভে পড়ে যায় আমাদের কিছু ছাত্রলীগের নেতা তাহার উপর। তারাই গার্ড অব অর্নার দিয়ে মামুনের নিজস্ব গাড়িতে পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ করার সুযোগ প্রদান করে। তাহা দেখে মনে হত আমরা যেমন উক্ত ছাত্রলীগ ভাইদের কর্মী ছিলাম তেমনি আমাদের ভাইরা যেন সেদিন মামুনের কর্মী ছিল।"


জবি ছাত্রলীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম মনার হত্যাকাণ্ডের সাথে মানুনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আরো নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক উপ-সম্পাদক জহির উদ্দিন বাবর।


তিনি জানান, "মামুন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের ক্যাডার ছিল। ছাত্রলীগ নেতা মনা হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত।"


জবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এম এইচ লেলীন তার ফেসবুকে লিখেছেন , "ম্যাজিস্ট্রেট আল মামুন ছাত্রদলের ক্যাডার ছিলো, আমাকে অপহরণ করে সমাজকর্ম বিভাগে আটকে রেখেছিলো, ছাত্রদল করি না বা করবো না এই অপরাধে।



দর্শন বিভাগের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ভাংচুর ছিলো ছাত্রদলের আল মামুন, সবুজ, অয়ন আর রানা গ্যাংদের। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে উদ্ধার করতে গিয়ে তৎকালীন ছাত্রলীগ নেতা জবি'র বর্তমান কর্মকর্তা বন্ধু ময়নালের সামনের দাঁত এখনো ভাংগা আছে। একই জেলায় বাড়ি হওয়ার সুবাদে ছাত্রদল করতে হবে বাধ্যতামূলক, আজিজুল বারী হেলালের কথিত শালা। জীবন বাজি রাখা বন্ধুরা Pulak Gharame Mithun Biswas, Kazi Sahadatul Islam, ময়নাল, সুমন, আলমাস, প্রশান্ত, ইমদাদ, শহীদ।"


জানতে চাইলে হিমেলুর রহমান হিমেল মুঠোফোনে বিবার্তা কে বলেন, সম্প্রতি আল মামুন নামের এক ম্যাজিস্ট্রেট একজন ডাক্তার ও বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কে হেনস্তা করেছে, তার একদিন পরে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম এই মামুন কি সেই মামুন কিনা। জানার পরে আমি আমার ফেসবুকে আমি যা জানি যা চোখের সামনে দেখেছি সেটা নিয়ে পরিস্কার ভাষায় লিখেছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু আমাদের দিয়েই, আমরা ছিলাম তখন ১ম ব্যাচ, ২০০৫-০৬ সেশনের। যখন আমরা ভর্তি হই তখন তো বিএনপি ক্ষমতায়। আমরা ছাত্রলীগ করতাম, মামুন ওরা করত ছাত্রদল। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসলে ক্যাম্পাসে কিছুটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার এক পর্যায়ে ১৮ আগস্ট আমাদের ছাত্রলীগের বন্ধু আশরাফুল আলম মনাকে ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করা হয়। হত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল এই মামুন। একই বিভাগের রানা, আমরা সবাই একই বর্ষে পড়তাম। এটা নিয়ে বিচার করার, মামলা করার চেষ্টা করি, কিন্তু তারা কিভাবে যেন আমাদের কিছু সাবেক নেতাকে ম্যানেজ করে ফেলে। আমরা এখনো প্রতি বছর মনার মৃত্যুবার্ষিকীতে মিলাদ মাহফিল ও দোয়ার আয়োজন করি।


তিনি বলন, এছাড়া বিএনপি শাসনামলে আমাদের ক্যাম্পাসে নির্যাতন করা হত, আমাদের বাসায় পর্যন্ত গিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। আমি নিজে তার ভুক্তভোগী। আমি তখন টিপু সুলতান রোডের একটি বাসায় থাকতাম। বাসায় এসে আমাকে নির্যাতন করে গেছে ওরা। ছাত্রলীগের উপর এই মামুনের নির্যাতন এতটাই ছিল যে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে পারত না। একটি পরীক্ষা সেসময় তাকে কোতোয়ালি থানায় বসেও দিতে হয়। বাকি পরীক্ষাও ছাত্রলীগের তৎকালীন সিনিয়র কিছু নেত্রীবৃন্দের সাথে আপোষ করে দেয়। এসব কিছুই আমার চোখের সামনের ঘটনা।


এ সকল অভিযোগের বিষয়ে জানতে আল মামুনের সাথে বিবার্তা থেকে ২০ এপ্রিল দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে যোগাযোগের জন্য মুঠোফোনে কল করা হলে তিনি প্রতিবেদকের পরিচয় পেয়ে বলেন, "আমি একটু পরে আপনাকে কল ব্যাক করছি"। একই দিন দুপুর ৩টা ৫৬ মিনিটে তাকে আবার কল করা হলে তিনি কল কেটে দেন। সন্ধ্যা ৭টা ৪২ মিনিটে তিনি কল ধরেননি।


একই দিন বিকাল ৪টা ২ মিনিটে মামুনকে খুদে বার্তায় যোগাযোগ করার হেতু জানানো হলেও, তিনি এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত আর কল ব্যাক করেননি বা খুদে বার্তায়ও কোনোরকম বক্তব্য দেননি।


বিবার্তা/আদনান/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com