
দেশে নতুন এইচআইভি শনাক্তের তালিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বিদেশফেরত শ্রমিকদের মধ্যেই পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগী। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে কাজ করে ফেরা অনেক শ্রমিক দেশে এসে প্রথমবারের মতো টেস্ট করতে গিয়ে সংক্রমণ বিষয়টি জানতে পারছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, নতুন শনাক্তের মধ্যে বিদেশফেরত শ্রমিকের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রয়েছে। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরের হাসপাতালগুলো জানিয়েছে—প্রতি মাসেই কয়েকজন করে বিদেশফেরত রোগী ধরা পড়ছেন।
চিকিৎসকদের মতে, তাদের প্রায় সবাই বিদেশে কোনোদিন এইচআইভি টেস্ট করাননি। লক্ষণ দেখা দেওয়ার পর দেশে এসে টেস্ট করিয়েছেন।
পরিবার থেকে দীর্ঘ সময় বিচ্ছিন্নতা, গোপন যৌনচর্চা, কনডম ব্যবহারে অনীহা
সঠিক তথ্য ও যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষার অভাব,
বিদেশে টেস্ট করালে চাকরি হারানোর ভয়
এসবই মূল কারণ। এ অবস্থায় অনেকেই আক্রান্ত থাকলেও বিদেশে টেস্ট এড়িয়ে যান, ফলে সংক্রমণ থেকে যায় অচিহ্নিত।
গাজীপুরের এক বিদেশফেরত শ্রমিক, ছদ্মনাম রাশেদ, ছয় বছর কাতারে কাজ করেছেন। দেশে ফেরার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক টেস্ট করতে বললে তিনি প্রথমে অস্বীকার করেন।
সে জানায়, “বিদেশে কয়েকবার ঝুঁকিতে পড়েছিলাম, কিন্তু ভাবিনি এমন কিছু হতে পারে। দেশে এসে টেস্ট করাতে ভীষণ ভয় লাগছিল। চাকরি হারানোর ভয় নেই, তবু সমাজ কী বলবে—এই ভেবে চুপ করে ছিলাম।”
রাশেদের স্ত্রী পরে বিষয়টি জানতে পারেন। পরিবারে মানসিক চাপ তৈরি হয়। এখন তিনি নিয়মিত ওষুধ নিচ্ছেন, স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন, কিন্তু বলছেন—“ভয়টা এখনও পুরো যায়নি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, “এই শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতির বড় চালিকা শক্তি। কিন্তু যৌনস্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতার ঘাটতি সবচেয়ে বেশি তাদের মধ্যেই। বিদেশে কাজের পরিবেশ, মানসিক চাপ, এবং সামাজিক সীমাবদ্ধতা মিলিয়ে ঝুঁকি বাড়ে।”
একজন এনজিওকর্মীর মতে,
“বিদেশে তারা অনেকসময় একা থাকেন, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন। সঠিক তথ্য না থাকায় অনেকে ঝুঁকি বোঝেন না। আবার কেউ ঝুঁকি বুঝলেও পরীক্ষা করানোর সাহস পান না।”
এছাড়া, বিদেশগামী শ্রমিকদের বাস্তবমুখী যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষা নেই, দেশে ফেরার পর বাধ্যতামূলক বা স্বেচ্ছা স্ক্রিনিং নেই, প্রবাসীদের জন্য আলাদা এইচআইভি কাউন্সেলিং ও সাপোর্ট সিস্টেম নেই।
যখন দেশের অর্থনীতি প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের ওপর দাঁড়িয়ে, তখন তাদের যৌনস্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রশ্নটি শুধু ব্যক্তিগত নয়—জাতীয় স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়।
নতুন এইচআইভি শনাক্তের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, তা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে—বিদেশফেরত শ্রমিকদের জন্য বিশেষ নীতি, সচেতনতা, এবং স্ক্রিনিং ব্যবস্থা ছাড়া পরিস্থিতি বদলানো কঠিন।
পর্ব-১https://www.bbarta24.net/reader-mail/310371
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]