
সাম্প্রতিক দুই বছরে দেশে নতুন এইচআইভি শনাক্তের সংখ্যা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগের বছরের তুলনায় নতুন রোগী শনাক্তের হার বাড়ছে স্থির গতিতে। কিন্তু এই বৃদ্ধি কি পরীক্ষার সুযোগ বাড়ার কারণে, নাকি ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ বেড়ে যাওয়ার ফল—এই প্রশ্নই এখন বিশেষজ্ঞদের সামনে সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।
ঢাকা আগের মতোই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। বড় শহর হওয়ায় এখানে মিশ্র জনগোষ্ঠী, দ্রুত জীবনযাপন আর গোপন যৌন সম্পর্ক—সব মিলে ঝুঁকি বেশি।
চট্টগ্রাম ও খুলনাও এখন নতুন সংক্রমণে উপরের সারিতে। কয়েকটি জেলা হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, তারা আগের তুলনায় অনেক বেশি ‘সাধারণ’ জনগোষ্ঠী থেকে রোগী পাচ্ছেন—যারা কোন ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নেই। এটা ইঙ্গিত দিচ্ছে, সংক্রমণ নীরবে অনেক বেশি বিস্তৃত হচ্ছে।
স্বাস্থ্যকর্মীদের মতে, দেশের অনেক মানুষই এখনো HIV টেস্ট করাতে ভয় পান। লজ্জা, সামাজিক কলঙ্ক, গোপনীয়তার অভাব—এই তিন কারণেই অনেকে পরীক্ষা না করিয়ে ঝুঁকিতেই থেকে যান। ফলে প্রকৃত সংক্রমণের সংখ্যা আরও বড় হতে পারে।
কয়েকটি এনজিও বলছে, দ্রুত টেস্ট, কাউন্সেলিং আর গোপনীয়তা নিশ্চিত করা গেলে আরও অনেক রোগী শনাক্ত হতো। কিন্তু এখনও উপজেলা পর্যায়ে টেস্টিং সুবিধা সীমিত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনলাইন যোগাযোগ আর অ্যাপভিত্তিক গোপন সম্পর্ক তরুণদের মধ্যে দ্রুত বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কনডম ব্যবহারে অনীহা।
আরেকটি বড় কারণ প্রবাসী শ্রমিক। মধ্যপ্রাচ্যসহ কয়েকটি দেশে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করা অনেক শ্রমিক দেশে ফিরে ধরা পড়ছেন। কিন্তু তাদের জন্য সচেতনতা বা কাউন্সেলিং এখনো খুব কম।
ঢাকার একজন তরুণ রোগী (নাম গোপন রাখা হলো) বললেন, “আমি লক্ষণ দেখার পরও প্রায় ছয় মাস হাসপাতালে যাইনি। মানুষ কী ভাববে, সেটা নিয়েই বেশি ভয় ছিল।” এই ভয়টাই আসল বাধা। ওষুধ এখন দেশে সহজলভ্য এবং কার্যকর, কিন্তু চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হলে জটিলতা মারাত্মক হয়।
বিশেষজ্ঞ কমিটি বলছে, বর্তমান প্রবণতা বদলানো না গেলে কয়েক বছরের মধ্যে দেশের HIV পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। টেস্টিং ব্যবস্থা জেলা–উপজেলা পর্যায়ে জোরদার করা
স্কুল–কলেজ পর্যায়ে যৌনস্বাস্থ্য শিক্ষা চালু করা ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর কাছে গোপনীয় ও নিরাপদ সেবা পৌঁছে দেওয়ার সুপারিশ করেন তারা।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]