ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি
প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৪
ছাত্রসংসদ নির্বাচন ও ভবিষ্যৎ ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি
ড. মাহরুফ চৌধুরী
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতি বরাবরই এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ প্রতিটি ঐতিহাসিক বাঁকে শিক্ষার্থীরাই জাতিকে পথ দেখিয়েছে, সমাজকে এগিয়ে নিয়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনে ছাত্রসমাজ ছিল পরিবর্তনের অগ্রদূত, আর তাঁদের সংগ্রাম আমাদের জাতীয় ইতিহাসকে করেছে সমৃদ্ধ ও গৌরবমণ্ডিত। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ছাত্রসংগঠনগুলোর রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তির কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই গৌরবোজ্জ্বল ধারা আজ অনেকটাই ম্লান হয়ে গেছে। একসময় যেখানে ছাত্ররাজনীতি ছিল মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা, অন্যায়ের প্রতিবাদ ও গণতান্ত্রিক চর্চার ক্ষেত্র, সেখানে এখন তা পরিণত হয়েছে দলীয় লেজুড়বৃত্তি, গোষ্ঠীস্বার্থ আর সহিংস ক্ষমতা দখলের দ্বন্দ্বে। শিক্ষাঙ্গণ, যা হওয়ার কথা ছিল জ্ঞানচর্চা, গবেষণা ও মানবিকতার বিকাশের মুক্তমঞ্চ, তা এখন প্রায়শই রূপ নিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর পেশিশক্তির দখলদারিত্বের অঙ্গনে।


দেশব্যাপী আসন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের জন্য এনে দিয়েছে ছাত্ররাজনীতির গতিপ্রকৃতি পরিবর্তনের এক অনন্য সুযোগ। বিশেষ করে, দীর্ঘসময় ধরে অকার্যকর থাকা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদগুলোতে আসন্ন নির্বাচন ছাত্ররাজনীতির মোড় ঘুরাতে তাঁদের জন্য এনে দিয়েছে একটি সম্ভাবনাময় ভবিষ্যৎ নির্ধারণের সুযোগ। দীর্ঘদিনের স্থবিরতা ও দলীয় প্রভাবে অচলাবস্থা ভাঙার কার্যকর সূচনা হতে পারে এই নির্বাচন। শিক্ষার্থীরা যদি সাহসের সঙ্গে দলীয় বা জোটের প্যানেলের প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঝ থেকে নিজেদের পছন্দমতো সৎ, যোগ্য, বলিষ্ঠকন্ঠ, নীতিবান ও দায়িত্বশীল প্রার্থী বেছে নিতে পারেন, তবে ছাত্ররাজনীতির সামনে উন্মোচিত হবে এক নতুন দিগন্ত। কারণ এই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কেবল কয়েকজন প্রতিনিধি বেছে নেবেন না, বরং তাঁরা নির্ধারণ করবেন ভবিষ্যতে তাঁদের ক্যাম্পাসে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ ও সংস্কৃতি কেমন হবে। তাঁরা যদি চান সেখানে গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়নের চর্চার পাশাপাশি মুক্তবুদ্ধি, সৃজনশীলতা ও মানবিকতা প্রসার লাভ করুক, তবে তাঁদেরকে এ নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্তটাই নিতে হবে; তাঁরা কি লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির পক্ষে নাকি বিপক্ষে, সেটা ভোট দানের মাধ্যমেই প্রমাণ করতে হবে।


আজকের বাস্তবতায় শিক্ষাঙ্গনকে দলীয় রাজনীতির ছায়া থেকে মুক্ত করা এক অনিবার্য কাজ। প্রথাগত দলীয় প্যানেলগুলো মূলত জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি বহন করে, যেখানে প্রকৃত ছাত্র স্বার্থ বেশির ভাগ সময়েই গৌণ হয়ে পড়ে। তাই সচেতন ও পরিবর্তন প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা দায়িত্ব হলো গোষ্ঠীগত প্রভাবের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র ও যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নেওয়া যারা দলীয় নির্দেশ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সমস্যা, প্রত্যাশা ও স্বপ্নকে প্রাধান্য দেবেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, সমাজে প্রকৃত পরিবর্তন শুরু হয় তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে; এবারও সেই দায়িত্ব নিতে হবে শিক্ষার্থীদেরই। আর এরই মধ্য দিয়ে ঘটবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-উত্তর গণ আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। মূলত দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশের সাধারণ নাগরিকেরাও শিক্ষাঙ্গনে দলীয় রাজনীতির অবসান দেখতে চেয়ে আসছেন। কারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কোনো রাজনৈতিক দলের ক্রীড়াঙ্গন নয়; এটি হওয়া উচিত মুক্তবুদ্ধি ও জ্ঞানচর্চার আশ্রয়স্থল। তাই বর্তমান বাস্তবতায় গণ আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে শিক্ষাঙ্গনকে দলীয় রাজনীতির ছায়া থেকে মুক্ত করা এখন অপরিহার্য।


প্রথাগত দলীয় বা জোটের প্যানেলগুলো আসলে জাতীয় রাজনীতির প্রতিচ্ছবি বহন করে, যেখানে প্রকৃত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ক্ষমতার উপনিবেশ বানাতে গিয়ে সেখানে ছাত্রস্বার্থকে প্রায়ই গৌণ করে রাখা হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা হয়ে ওঠে জাতীয় দলের রাজনৈতিক ক্রীড়নক ও ক্ষমতা প্রদর্শনীর অংশ, অথচ শিক্ষার্থীদের প্রকৃত সমস্যা তথা শিক্ষার মানোন্নয়ন, আবাসন সংকট, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা, আধুনিক গবেষণা সুবিধা ইত্যাদি থেকে মনোযোগ সরে যায়। অতএব শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব হলো গোষ্ঠীগত প্রভাবের বাইরে গিয়ে যোগ্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বেছে নেওয়া, যারা কোনো দলীয় নির্দেশ নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সমস্যা, প্রত্যাশা ও স্বপ্নকে প্রাধান্য দেবেন। দার্শনিক জন লকের মতে, সমাজে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয় তখনই, যখন মানুষ স্বশাসিত হতে শেখে। লকের এই চিন্তা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ আসন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তারা যদি নিজেদের বিবেক ব্যবহার করে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তবে সেটিই হবে লকের ভাবনার বাস্তব প্রয়োগ।


এ প্রসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের মনে করিয়ে দেন, ‘শিক্ষার ফল মানুষকে স্বাধীন করে, তার নিজের বিচারশক্তির উপর আস্থা জাগায়’। শিক্ষার লক্ষ্য কেবল তথ্য আহরণ নয়; বরং মানুষের চিন্তা, বোধ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তিকে বিকশিত করা। তাই শিক্ষার্থীদের উচিত দলীয় শৃঙ্খল ও অন্ধ অনুসরণের বাইরে গিয়ে নিজেদের বিবেক ও বিচারশক্তি প্রয়োগ করা। তাদের প্রতিটি ভোট শুধু প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ করবে না, বরং বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার নতুন ধারার পথও প্রশস্ত করবে। এই প্রেক্ষাপটে কাজী নজরুল ইসলামের বিদ্রোহী কবিতার আহ্বান বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক: ‘আমি চির দুর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, মহা-প্রলয়ের আমি নটরাজ’। এটি কেবল কবিতার অলংকার নয়, বরং শোষণ, বঞ্চনা ও অবিচারের শৃঙ্খল ভাঙার এক চিরকালীন ডাক। আজকের শিক্ষার্থীদেরও সেই শৃঙ্খল ভাঙতে হবে, যে শৃঙ্খল দলীয় রাজনীতির গণ্ডি টেনে শিক্ষাঙ্গনের স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতাকে গ্রাস করেছে।


যদি শিক্ষার্থীরা ছাত্ররাজনীতির গতিপথ পরিবর্তন করে এক কল্যাণমুখী সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়া গড়ে তোলার প্রত্যাশা করে, তবে তাঁদের প্রথম কর্তব্য হলো মুক্তচিন্তার যোগ্য ও স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেওয়া। এ পথেই শিক্ষাঙ্গনে গণতন্ত্র, ন্যায় ও মানবিকতার এক নতুন ধারার সূচনা ঘটতে পারে। এখানে নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের উক্তি বিশেষভাবে স্মরণযোগ্য: ‘শিক্ষা কেবল তথ্য সঞ্চয় নয়, শিক্ষা হলো মানুষ গড়ার কলা’। কিন্তু যখন শিক্ষাঙ্গণ দলীয় সহিংসতা ও প্রতিযোগিতার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়, তখন সেই মহৎ লক্ষ্য ব্যর্থ হয়ে যায়। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য তথা মানবিকতা, সহনশীলতা, ন্যায়বোধ ও সৃজনশীলতা বিকাশের পরিবেশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তাই ছাত্রসংসদ নির্বাচন কেবল প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার আয়োজন নয়; এটি শিক্ষার্থীদের জন্য এক ঐতিহাসিক সুযোগ, যাতে তাঁরা প্রমাণ করতে পারেন যে তাঁরা সত্যিই শিক্ষাঙ্গনকে আবারও মানুষ গড়ার প্রকৃত কর্মশালায় রূপান্তরিত করতে চান।


সমাজতাত্ত্বিকদের মতে, প্রতিটি প্রজন্মের নৈতিক দায়িত্ব হলো পূর্ববর্তী প্রজন্মের ব্যর্থতাকে অতিক্রম করে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চলার পথকে সুগম করা। আমাদের পূর্বসূরিরা দলীয় প্রভাবমুক্ত একটি স্বাস্থ্যকর ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখলেও, বাস্তবে তাঁরা তা বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই আজকের প্রজন্মের কর্তব্য হলো সেই ব্যর্থতার গণ্ডি ভেঙে যোগ্য, স্বতন্ত্র ও মুক্তচিন্তার প্রার্থীকে বেছে নেওয়া, যাতে শিক্ষাঙ্গনে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। এর মাধ্যমে সহিংসতার অবসান ঘটবে এবং ক্যাম্পাসে নতুন ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি জন্ম নেবে, যা বৃহত্তর জাতীয় রাজনীতিতেও ইতিবাচক মানদণ্ড তৈরি করতে পারে। কারণ শিক্ষাঙ্গনে যদি জবাবদিহিমূলক, সহিংসতাহীন ও মুক্তচিন্তার ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা যায়, তবে তার প্রভাব রাষ্ট্রীয় রাজনীতির ওপরও গভীরভাবে পড়বে। শিক্ষার্থীরা যদি গোষ্ঠীগত চেতনার বাইরে গিয়ে যোগ্য, বলিষ্ঠ কণ্ঠ ও সৃজনশীল মননের প্রতিনিধিদের বেছে নিতে পারেন, তবে শিক্ষাঙ্গনে ভিন্নধারার গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সংস্কৃতির বিকশিত হবে যা কেবল ক্যাম্পাস নয়, সমগ্র জাতির জন্য এক নবজাগরণের বার্তা বহন করবে।


ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, শিক্ষার্থীরা যখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন সমাজ ও রাষ্ট্রে ইতিবাচক পরিবর্তন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্রসমাজের আত্মত্যাগই মাতৃভাষার অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করেছে; ১৯৯০ সালের গণ-আন্দোলনে তাঁদের সোচ্চার ভূমিকা স্বৈরশাসনের অবসান ঘটিয়েছে। এই ঐতিহাসিক সত্য প্রমাণ করে যে শিক্ষার্থীদের সিদ্ধান্ত কোনো ক্ষণস্থায়ী বিষয় নয়; বরং তা ভবিষ্যৎ ইতিহাস নির্মাণের অনুঘটক। সেই ধারাবাহিকতায় আসন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচনও ইতিহাস গড়ার এক বিরল সম্ভাবনা বহন করছে। উচ্চশিক্ষার সংস্কারের প্রত্যাশায় এটা হতে পারে যুগান্তকারী পদক্ষেপ যা ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। তাই আসন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের হাতে এক বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে। তাঁরা যদি গোষ্ঠীগত চেতনার বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র ও মুক্তচিন্তার প্রতিনিধিদের বেছে নিতে পারেন, তবে শিক্ষাঙ্গনে জন্ম নেবে ভিন্নধারার এক গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও সংস্কৃতি। এতে সহিংসতাহীন ও জবাবদিহিমূলক ছাত্ররাজনীতির পথ প্রশস্ত হবে, যা কেবল ক্যাম্পাসেই নয়, সামগ্রিকভাবে জাতীয় রাজনীতিতেও ইতিবাচক বার্তা বহন করবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে যে, এই নির্বাচন নিছক নেতৃত্ব বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নয়; বরং ছাত্ররাজনীতিকে নতুন ভিত্তির উপর দাঁড় করানোর এক ঐতিহাসিক সুযোগ। তাই শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব হলো সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় রাজনীতির সংকীর্ণ ছায়া অতিক্রম করা এবং যোগ্য, স্বতন্ত্র ও মুক্তচিন্তার প্রার্থীদের বিজয়ী করা। ইতিহাস বারবার প্রমাণ করেছে, কোন দেশের তরুণ প্রজন্ম যখন সঠিক পথে দাঁড়ায়, তখন সেখানে সমাজ ও রাষ্ট্রের গতিপথ পরিবর্তিত হয়। পরিবর্তনের নিয়ামক হিসেবে শিক্ষার্থীরা যদি সেই সাহস দেখাতে পারেন, তবে আমাদের উচ্চ শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে উঠবে সৃজনশীলতা, গণতন্ত্র ও মুক্তচেতনার প্রকৃত পাঠশালা। এর প্রভাব সীমাবদ্ধ থাকবে না বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দেয়ালের ভেতর; বরং তা ভবিষ্যতের জাতীয় রাজনীতির জন্যও হতে পারে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত যেখানে মুক্তবুদ্ধি, মানবিকতা, সৃজনশীল, জনকল্যাণ ও জবাবদিহি হবে রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি।


বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে ছাত্ররাজনীতির গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্য আছে, কিন্তু সেই ঐতিহ্য আজ দলীয় প্রভাব ও সহিংসতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত। লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব থেকে মুক্তি পেতে আসন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের সামনে নতুন ইতিহাস গড়ার সুযোগ এনে দিয়েছে। তাঁরা যদি গোষ্ঠীস্বার্থের বাইরে গিয়ে যোগ্য, স্বতন্ত্র ও মুক্তচিন্তার প্রার্থীকে বেছে নিতে পারেন, তবে শিক্ষাঙ্গন আবারও হয়ে উঠতে পারে সৃজনশীলতা, মানবিকতা ও গণতন্ত্রের প্রকৃত পাঠশালা। এই নির্বাচন কেবল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসের রাজনীতির নয়; বরং জাতীয় রাজনীতির ভবিষ্যৎ সংস্কৃতিরও ভিত্তি স্থাপন করতে পারে। শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটি প্রজন্মের দায়িত্ব থাকে আগের প্রজন্মের ব্যর্থতাকে অতিক্রম করা এবং পরের প্রজন্মের জন্য রুদ্ধদ্বার খুলে দেওয়া। আজকের শিক্ষার্থীরা যদি সেই দায়িত্ব পালন করেন, তবে তাঁরা শুধু নিজেদের জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন। একুশ শতকের বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নয়, প্রয়োজন মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা, জবাবদিহিতা ও গণতান্ত্রিক চর্চার উর্বর ক্ষেত্র। ভবিষ্যতের জন্য সেই ক্ষেত্র গড়ে তোলার সুযোগ এখন শিক্ষার্থীদের হাতেই। আসন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে ইতিহাস তাঁদের ডাক দিচ্ছে সেই সুযোগ গ্রহণ করতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কি সে ডাক শোনার জন্য প্রস্তুত?


লেখক: ড. মাহরুফ চৌধুরী, ভিজিটিং ফ্যাকাল্টি, ইউনিভার্সিটি অব রোহ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য।


বিবার্তা/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com