আমাদের কমনসেন্স, আমাদের ভাঁড়ামো
প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩, ১৫:৫৩
আমাদের কমনসেন্স, আমাদের ভাঁড়ামো
হাবিবুর রহমান রোমেল
প্রিন্ট অ-অ+

যমুনা টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে ঢাকাইয়া সিনেমার নায়ক জায়েদ খান বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণযুগের চিরসবুজ গান 'ওরে নীল দরিয়া' বিকৃত সুরে ভুলভাল গাইলেন। তাতে না আছে জায়েদ খানের অনুশোচনা, না টেলিভিশন কর্তৃপক্ষের ক্ষমাপ্রার্থনা। অথচ এই গানের সুর কানে আসলে চোখের সামনে যে মুখটা দৃশ্যমান হয়- তিনি সদ্যপ্রয়াত চিত্রনায়ক ফারুক।



ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে জায়েদ খান কি সদ্যপ্রয়াত শিল্পী ফারুককে শ্রদ্ধা জানাতে 'ওরে নীল দরিয়া' গাইলেন? যমুনা টেলিভিশন কি তাঁকে শ্রদ্ধায় স্মরণ করতে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে? কিন্তু জায়েদের সাধারণ জ্ঞানহীন ভাঁড়ামো দেখে কী মনে হয়? আর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ কেন এই ভাঁড়ামোপূর্ণ অংশটুকু প্রচার করল?



সারেং বৌ চলচ্চিত্রের ইতিহাস একটু না বললেই নয়।


শহিদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ্ কায়সারের উপন্যাস সারেং বৌ অবলম্বনে ১৯৭৪-৭৫ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনা করেন আব্দুল্লাহ আল মামুন। সারেং বাড়ি ফিরছেন- এমন একটা দৃশ্যে সংগীতায়োজনের জন্য সুরকার আলম খানকে তার পরিকল্পনার কথা জানান। আলম খান ১৯৬৯ সালে তৈরি করা একটি অস্থায়ী সুরে গীতিকার মুকুল চৌধুরী প্রথমে গানের মুখরা, পরবর্তীতে চলচ্চিত্রের গল্প ও গানের দৃশ্যায়নের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো গীতি রচনা করেন। আব্দুল্লাহ আল মামুন এই গানে কন্ঠ দেয়ার জন্য কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী আব্দুল জব্বারের নাম প্রস্তাব করেন। সুরকার আলম খান আব্দুল জব্বারের কথা মাথায় রেখে গানের সুর করেছিলেন। পরবর্তীতে ফারুক-কবরী অভিনীত ১৯৭৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সারেং বৌ চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকার উপর এই গান চিত্রায়িত হয়। বাংলাদেশের বাহিরেও গানটি বেশ জনপ্রিয়। সুইডিশ গায়িকা জয়ি প্র্যাঙ্কস এই গান গেয়েছেন।


উল্লেখ্য, এই গান যে উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়েছে তার লেখক শহিদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লা কায়সার ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১, পরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন ৩০ আগস্ট ২০১৭, গীতিকার মুকুল চৌধুরী ৪ এপ্রিল ২০০২, সঙ্গীত পরিচালক আলম খান ৮ জুলাই ২০২২, গায়ক আব্দুল জব্বার ৩০ আগস্ট ২০১৭, অভিনেত্রী কবরী ১৭ এপ্রিল ২০১৭ ও চিত্রনায়ক ফারুক ১৫ মে ২০২৩ সালে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে অন্যলোকে চলে গেছেন। এই গানের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকটা মানুষ বাংলাদেশের শিল্প-সাহিত্যের জন্য মহান ব্রত পালন করেছেন। এবং সৃষ্টি ও ত্যাগের মহিমায় নিজ নিজ জায়গায় দ্যুতি ছড়িয়েছেন।


অন্তত বাংলা চলচ্চিত্রের সাথে যুক্ত এইসকল মহান শিল্পীদের কথা চিন্তা করে, তাঁদের সম্মানার্থে জায়েদ খানের উচিত 'ওরে নীল দরিয়া' গানটি বিকৃত ও ভুলভাবে গাওয়ার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া এবং যমুনা টেলিভিশনের দায়িত্ব হলো অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে প্রত্যাহার করা। টিআরপি বাড়ানোর জন্য ভবিষ্যতে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন, ভাঁড় দিয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান করানো না হয়, সেই বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সজাগ দৃষ্টি রাখা। কারণ বাংলাদেশের সংস্কৃতির রুচির দুর্ভিক্ষ নিয়ে যে আলাপ-আলোচনা-সমালোচনা চলছে, জায়েদ খানের মতো অতিথি এবং যমুনা টেলিভিশনের মতো জাতীয় সম্প্রচার মাধ্যম এই দুর্ভিক্ষকে মহামারীতে পরিণত করবে।


লেখক: সাহিত্যক ও সাংবাদিক


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com