‌‘বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু’ একে অন্যের সমার্থক
প্রকাশ : ১৭ মার্চ ২০২৪, ১৪:১২
‌‘বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু’ একে অন্যের সমার্থক
অ্যাড. কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি
প্রিন্ট অ-অ+

যার হাত ধরে জন্ম হয়েছিল বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের, আজ বাঙালি জাতি অবনত মস্তকে স্মরণ করছে সেই মহান নেতাকে। আজ ১৭ মার্চ, বাঙালির মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী। যিনি বাঙালি জাতিকে দিয়েছে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি, দিয়েছে জাতিসত্তার পরিচয়। তিনি ১৯২০ সালের এই দিনে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।



শৈশব থেকেই অনৈতিক সকল কিছুর বিরুদ্ধে আপসহীন ছিলেন তিনি। ছোট্ট বয়সেই জড়িয়ে পড়েন রাজনীতিতে। মাত্র অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে গ্রেফতার হন। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে তিনি তুখোড় ছাত্রনেতা হিসাবে নিজেকে পরিচিত করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে এসে বাঙালির হাজার বছরের আশা,আকাঙ্ক্ষা ও ঐতিহ্যকে নিজের চেতনায় আত্মস্থ করে তিনি রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পর তিনি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। বাঙালি জাতির উপর হাজার বছরের শোষণ-নিপীড়নের যন্ত্রণা উপলব্ধি করে ভাষাভিত্তিক অসাম্প্রদায়িক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। এরপর তিনি ১৯৫৩ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৫৬ সালে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় 'মুসলিম' শব্দ বাদ দিয়ে দলের নামকরণ করা হয় 'আওয়ামী লীগ'।


বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেন। এসব আন্দোলনের কারণে বারবার কারাবরণ করেন তিনি। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মনোনয়নে ইস্ট বেঙ্গল লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। একই বছর যুক্তফ্রন্ট সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দেন তিনি। এরপর ১৯৬৩ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন তথা বাঙালির মুক্তির সনদ ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু।


বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এদেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত করেন।


পাকিস্তানের স্বৈরশাসক জেনারেল আইয়ুব খান ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধুসহ নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের নামে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেন এবং তিনি গ্রেফতার হন। ১৯৬৯-এর রক্তঝরা গণ-অভ্যুত্থানের পথ পেরিয়ে ‘৭০-এর ঐতিহাসিক নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। যার নেতৃত্বে ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।


তিনি ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তার এই ঘোষণায় উজ্জীবিত হয়ে বাঙালি জাতি যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করার আগেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি বাহিনী নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় বাঙালি জাতি শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ। ছিনিয়ে আনে হাজার বছরের বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।


১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান সরকার। ১০ জানুয়ারি লন্ডন ও ভারত হয়ে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তিনি শোষিত- নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তি এবং একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের অভ্যুদয়ের স্বপ্নপূরণের পথে আশার প্রদীপ। বাংলাদেশের মানুষের কাছে তিনি ছিলেন রাষ্ট্রের সমার্থক।



যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা/ গৌরী, যমুনা বহমান/ততকাল রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবুর রহমান।' অন্নদাশঙ্কর রায় তার কবিতায় যথার্থ বলেছেন। বাঙালি জাতি যতদিন টিকে থাকবে, রয়ে যাবে বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব। তিনি বাংলার মানুষকে অসম্ভব ভালোবাসতেন। তিনি বলেছিলেন 'সাত কোটি বাঙালির ভালোবাসার কাঙাল আমি। আমি সব হারাতে পারি , কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা হারাতে পারবো না। বাঙালির ভালোবাসার ঋণ বুকের রক্ত দিয়ে শোধ করবো ইনশাআল্লাহ্।' তিনি বাঙালির এই ঋণ শোধ করতে প্রায় ১৪ টি বছর জেলে কাটিয়েছেন।



৩ বছর তিনি দেশকে গঠন করার সময় পান। দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই দেশবিরোধী ও '৭১-এর পরাজিত শক্তি এক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হাজার বছরের এই শ্রেষ্ঠ বাঙালি যিনি তার পুরোটা জীবন এই দেশের জন্য ত্যাগ করেছিলেন তাকে সপরিবার হত্যা করে। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান আমাদের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। ৩৫ বছর পর বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সাজা কার্যকর হয়। কিন্তু এখনো অনেকে বিভিন্ন দেশে পলাতক। তাদের শাস্তি নিশ্চিত করে আমাদের এই কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিতে হবে।


স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সাম্য ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অবিস্মরণীয় ভূমিকার জন্য বঙ্গবন্ধু সারাবিশ্বে সমাদৃত সকল সময়। এ সকল ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে 'জুলিও কুরি' পদকে ভূষিত করা হয়। জন্মদিনে বাঙালি জাতির এই মহান নেতাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। তিনি চিরকাল বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে। বাঙালির অস্তিত্বের সাথে তিনি টিকে থাকবেন চিরকাল। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।


লেখক: অ্যাড. কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সংসদ ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগ।


বিবার্তা/এসবি/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com