শিরোনাম
নৌকার বিদ্রোহী উপজেলা আ.লীগ সভাপতি, নীরব জেলা আ.লীগ !
প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ১২:৩৭
নৌকার বিদ্রোহী উপজেলা আ.লীগ সভাপতি, নীরব জেলা আ.লীগ !
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলা গজনাইপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন খোদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল। ইউপি নির্বাচনের আর মাত্র ৩ দিন বাকি থাকলেও এখন পর্যন্ত তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি জেলা আওয়ামী লীগ। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দ্বারস্থ হয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী।


মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক বরাবরে আবেদন করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবের আহমেদ চৌধুরী। আবেদনে তিনি বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মুকুল দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নৌকা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের নানাভাবে ভয়ভীতি ও হুমকি দিচ্ছেন। নির্বাচনের আর মাত্র চারদিন বাকি। এ অবস্থায় তাকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার না করলে নৌকার পরাজয় হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।


স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১০ টাকা কেজি দরের চাল আত্মসাতের অভিযোগে গত বছর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুলকে ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। দলীয় পদ থেকেও দেয়া হয় সাময়িক অব্যাহতি। যদিও পরে দলীয় পদ ফিরে পান তিনি। তবে এবার তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঘিরে আবারো আলোচনায় উঠে এসেছেন বিতর্কিত মুকুল।


নবীগঞ্জ উপজেলার ১১নং গজনাইপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন তিনি। মনোনয়ন না পেয়ে এবার বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীকে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েও বিদ্রোহী হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন তৃণমূল আওয়ামী লীগের নেতা-কমীরা। আর দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে একেবারেই নীরব জেলা আওয়ামী লীগ।


জানা যায়, ২০১৬ সালে গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ইমদাদুর রহমান মুকুল চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এরপর থেকে নানা সময়ে তার বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১০ টাকা কেজি দরের চাল ২২৯ জনের ভুয়া নাম ব্যবহার করে আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। চাল বিতরণে অনিয়মের এ চিত্র প্রকাশ পেলে তদন্ত শুরু করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গেলো বছরের ৭ জুলাই গজনাইপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদ ইমদাদুর রহমান মুকুলকে বরখাস্ত করা হয়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের একটি গ্রামের কয়েকটি পরিবারের বাড়ি-ঘরে আগুন দিয়ে পুড়ানোর প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে গ্রেফতার হন মুকুল। এজন্য প্রায় ৪ মাস কারাভোগও করেছেন তিনি।



আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় জ্বালিয়ে দেয়া হয়


এদিকে মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাতে গজনাইপুর ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামের দিনারপুর কলেজের সামনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় জ্বালিয়ে দিয়েছে মুকুলের সমর্থকরা। এসময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবের আহমদ চৌধুরী ও তার সমর্থকদের ওপর মুকুলের নির্দেশে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে অর্ধশত কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।


নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাবের আহমেদ চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তার সমর্থকরা নৌকার কমীদের নিয়মিত ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এজন্য আমি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের কাছে দলীয় পদ থেকে তাকে বহিস্কারের আবেদন জানিয়েছি। মঙ্গলবার (২৩ নভেম্বর) রাতে বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার সমর্থকরা আমরা নির্বাচনী কার্যালয় জ্বালিয়ে দিয়েছে।


এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল বিবার্তাকে বলেন, আমি বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি। নির্বাচনে প্রাথী হয়েছি, এতে লুকানোর কিছু নেই। নেত্রীকে ভূল তথ্য দেয়ায় আমাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এখন নেত্রী যদি আমাকে বাদ দিয়ে দেয় তাহলে কিছু বলার নেই।



হামলায় আহত আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকরা


প্রতিপক্ষের নির্বাচনী কার্যালয়ে আগুন দেয়ার অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। আপনারা সরেজমিন ঘুরে খোঁজ নিতে পারেন।


হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী বিবার্তাকে বলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নৌকার বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি আমরা কেন্দ্রে জানিয়েছে। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। কেন্দ্র থেকে তার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা তা বাস্তবায়ন করবো।


হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ বিবার্তাকে বলেন, দলীয় মনোনয়নের বিরোধীতা করে যারা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, নেত্রী বলেছেন তাদের সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) আহমদ হোসেন বিবার্তাকে বলেন, সিলেট বিভাগে যারা নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী আছে, তাদের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। নির্বাচনের পরে তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।


হবিগঞ্জে আ.লীগ প্রার্থী-সমর্থকদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা, আহত অর্ধশত


বিবার্তা/সোহেল/কেআর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com