শিরোনাম
খালেদা জিয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে হতাশ বিএনপি
প্রকাশ : ১০ মে ২০২১, ২৩:৩৬
খালেদা জিয়ার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে হতাশ বিএনপি
জাহিদ বিপ্লব
প্রিন্ট অ-অ+

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উম্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার বিষয়ে শুরুতে সরকার নমনীয় থাকলেও পরবর্তীতে নাকচ হওয়ায় হতাশ হয়েছেন বিএনপির শীর্ষনেতারা। সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রী প্রথমে এ বিষয়ে ইতিবাচক থাকলেও খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে চিকিৎসার বিষয়ে আইনগতভাবে তিনি যেতে পারেন না বলে সরকার থেকে জানিয়ে দেয়া হয়।


আবেদনের চার দিনের মাথায় পরিবারের আবেদনটি নাকচ করে দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। তিনি বলেন, আইন মন্ত্রণালয় থেকে যে মতামত এসেছে, তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ৪০১ (১) ধারায় সাজা স্থগিত করে যে সুবিধাটি (খালেদা জিয়াকে) দেওয়া হয়েছে, সেখানে আবার তাঁকে সাজা মওকুফ করে বিদেশে পাঠানোর কোনো অবকাশ নেই।


এদিকে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে পরিবারের আবেদন নাকচ করার বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত হতে পারছে না বিএনপি।


এবিষয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মো: আসাদুজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, খালেদা জিয়া দন্ডপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই বলে যে আইনী ব্যাখ্যা বা মতামত সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে তার সাথে আমি একমত নই !! উক্ত মতামত per incuriam বা ভ্রান্ত ! কারন, ফৌজদারী কার্যবিধি , ১৮৯৮ এর ৪০১ ধারায় সরকারকে ক্ষমতায় দেওয়া হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত আসামীর বিষয়ে শর্তহীন কিংবা শর্তযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার । ৪০১ (১) এবং ৪০১(৪ক) ধারা ভালো করে পড়লে দেখবেন , আদালত যদি বিদেশ যেতে নিষেধ করে কোন আদেশও দেয় তাহলেও সরকার বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিতে পারে।


গত বছরের মার্চে দেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতির অবনতির প্রেক্ষাপটে সরকার খালেদা জিয়ার দণ্ড স্থগিত করে কারামুক্তি দিয়েছিল। তখনকার প্রেক্ষাপটে এটি ছিল সরকারের রাজনৈতিক দায়মুক্তি বা ঝুঁকি এড়ানোর কৌশল বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা তো জোর করে তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে পারব না। বিষয়টি সরকার একেবারে না করে দিয়েছে। সুতরাং আমরা চেষ্টা করব, এখানেই (দেশে) তাকে সর্বোচ্চ উন্নত চিকিৎসা দেয়ার। একইসঙ্গে অন্য কোনো অপশন আছে কি-না বা আইনগত অথবা অন্য কোনো উপায়, সেটাও আমরা দেখব।


বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্যান্য অপশনগুলো আমরা ভেবে দেখব এবং সেগুলো আমরা আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।


তিনি বলেন, আমরা মনে করছি- সরকারের এখতিয়ারে থাকার পরও রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার অনুমতি দেয়া হয়নি।


খালেদা জিয়ার ‍বিদেশযাত্রা আটকে দেওয়ার বিষয়টিকে সরকারের রাজনৈতিক লাভ-ক্ষতির ‘হিসাব-নিকাশ’ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। তাদের ধারণা, শুরুতে সরকারি মহল হয়তো ধরে নিয়েছিল যে খালেদা জিয়ার অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। এ অবস্থায় কোনো অঘটন ঘটে গেলে এর দায় সরকারের ওপর বর্তাবে।


সরকার খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এবং তার স্বাস্থ্যগত পরীক্ষা-নিরীক্ষার তথ্য-উপাত্ত হাতে নিয়েছে। গত ৭ মে করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর হঠাৎ করেই বেগম জিয়ার বিদেশ যাওয়ার দৃশ্যপট পাল্টে যায়।


বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম বিবার্তাকে বলেন, তারা যুক্তি দেখাচ্ছে যে এ ধরনের (দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে বিদেশে পাঠানোর) নজির নেই, এটা সত্য নয়। ১৯৭৯ সালে কারাবন্দী আ স ম আবদুর রব চিকিৎসার জন্য পশ্চিম জার্মানি যান। তৎকালীন সরকার এই ব্যবস্থা করে।


২০দলীয় জোটের শরিক জাপার একাংশের চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বিবার্তাকে বলেন, ১০ বছরের কারাদণ্ড প্রাপ্ত ব্যক্তিও সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল তবিয়তে আছেন। অথচ তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে সুচিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। এতেই প্রতীয়মান হয় সরকার খালেদাকে ভয় পায়। খালেদা জিয়া দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠলে এই স্বৈরাচারী সরকার বেশি দিন ক্ষমতা আকড়ে ধরে রাখতে পারবে না।


বিবার্তা/বিপ্লব/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com