
কারাগারে আগে পরিবারের সদস্য, আইনজীবী ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে দেখা এবং টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পেতেন সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তবে, মামলার হাজিরার সময় প্রিজন ভ্যানে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া এবং জাতীয় সংগীত গাওয়ায় তিনি এখন এ সুবিধা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তার আইনজীবী।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারিক প্যানেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও জুনাইদ আহমেদ পলকের মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং আসামিপক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম লিটন আহমেদ।
এদিন ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে একই মামলার অন্য আসামি সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত দিনে এ বিষয়টি আদালতের নজরে তোলেন পলকের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম লিটন আহমেদ।
পলকের আইনজীবী বলেন, তার মক্কেল কারাগারে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা এবং টেলিফোনে কথা বলার সুযোগ পেতেন। জয় বাংলা স্লোগান দেওয়া এবং জাতীয় সংগীত গাওয়ায় তিনি এখন এ সুবিধা পাচ্ছেন না। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল আইন অনুযায়ী (জেল কোর্ট) একটি আদেশ দেবেন।
আইনজীবীরা জানান, জেল কোর্ট অনুযায়ী যদি কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে, তবে কারা কর্তৃপক্ষ পি-জেন্স অ্যাক্টের অধীনে ব্যবস্থা নেবে। এ বিধির ধারাবাহিকতায়ই বর্তমান ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
প্রিজন্স অ্যাক্ট অনুযায়ী আইনজীবী, আত্মীয়স্বজন, অনুমোদিত অন্যান্য ব্যক্তি ইত্যাদির সহিত সাক্ষাৎ ও যোগাযোগ (১) বন্দিরা কারা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও তৎকর্তৃক নির্দিষ্টকৃত তারিখ ও সময়ে নিম্নবর্ণিত ব্যক্তিবর্গের সহিত সাক্ষাৎ করিতে পারিবেন।
(ক) আইনজীবী।
(খ) পরিবার, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব বা অনুমোদিত অন্যান্য ব্যক্তি।
(গ) বিদেশি বন্দির ক্ষেত্রে, সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস বা হাইকমিশন কর্তৃক মনোনীত প্রতিনিধি।
(ঘ) তিনি যে কর্মক্ষেত্র বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত বা সংশ্লিষ্ট ছিলেন, প্রয়োজনে ওই কর্মক্ষেত্র বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী বা সহকর্মী ইত্যাদি।
(২) উপধারা (১)-এ উল্লিখিত বন্দির সাক্ষাতের জন্য নির্দিষ্ট করা তারিখ ও সময় কারা কর্তৃপক্ষ কারাগারের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার স্বার্থে বাতিল, স্থগিত বা পরিবর্তন করতে পারবে।
(৩) বন্দি কারাগারের শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তার পরিপন্থি নহে এবং সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট না হয় ইত্যাদি বিষয় বিবেচনাসাপেক্ষে কারা কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে, বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে, উপধারা (১)-এ বর্ণিত ব্যক্তিদের সহিত যোগাযোগ করতে পারবে।
জেলখানায় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কারাবিধি অনুযায়ী বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে জানা গেছে, যা অপরাধের গুরুত্বের উপর নির্ভর করে। এর মধ্যে রয়েছে সাধারণ সুযোগ-সুবিধা হ্রাস (যেমন- ডিভিশন বাতিল/হ্রাস), একাকী কারাবাস, অতিরিক্ত কাজ করানো, বা খাদ্য/পোশাকের মানে পরিবর্তন। মূল লক্ষ্য হলো বন্দিদের নিয়মানুবর্তিতা শেখানো ও কারাগারের নিরাপত্তা বজায় রাখা, যা মূলত জেল কোড ও বাংলাদেশ কারা ও সংশোধন পরিসেবা আইন, ২০২৩ (খসড়া) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
শৃঙ্খলা ভঙ্গের উদাহরণ
(ক) কর্তৃপক্ষের আদেশ অমান্য করা।
(খ) কারাগারের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা (যেমন: মোবাইল ফোন বা নিষিদ্ধ বস্তু রাখা/ব্যবহার করা)।
(গ) সহবন্দি বা কর্মচারীদের সঙ্গে বিবাদ করা।
(ঘ) কারাগারের নিয়মকানুন ভঙ্গ করা (যেমন: নির্দিষ্ট সময়ের বাইরে চলাফেরা করা, ধূমপান করা ইত্যাদি)।
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (সাধারণত)
(ক) ডিভিশন সুবিধা বাতিল বা হ্রাস: ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের কিছু অতিরিক্ত সুবিধা থাকে, যা ভঙ্গের কারণে কমে যেতে পারে।
(খ) একাকী কারাবাস: নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অন্য বন্দিদের থেকে আলাদা রাখা।
(গ) খাদ্য ও পোশাকের পরিবর্তন: সাধারণ মানের খাদ্য বা পোশাক দেওয়া।
(ঘ) বিশেষ সুযোগ-সুবিধা হ্রাস: যেমন: বই পড়া, খেলাধুলা বা বাইরের জগৎ থেকে চিঠি পাওয়ার সুযোগ সীমিত করা।
এদিকে, একই মামলায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলার পলাতক আসামি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ শুনানিতে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এ মামলায় আসামি দুজন। এর মধ্যে জয় পলাতক। জয়কে হাজির হতে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আবেদন করেন তাজুল ইসলাম। এই আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করার জন্য ১৭ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এসংক্রান্ত বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্যও ১৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেন আদালত। মামলার অন্য আসামি সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি এ মামলায় গ্রেফতার আছেন। তাকে আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। গত ৪ ডিসেম্বর এ মামলায় জয় ও পলকের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয়।
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]